বাংলাদেশের পরিস্হিতি ক্রমেই ইরাক ,সিরিয়া,ইরান কিংবা কিউবার মতো ভয়াবহ হয় উঠছে।সরকারের বিরুদ্ধচারন কারীদের গুম ও গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে সাধারন জনগনের মাঝে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এসব দেশের একনায়কগন যেভাবে বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতা আকড়ে রেখেছিলো,বাংলাদেশের বর্তমানের সরকারও কি এই পথে এগুচ্ছে??
মাত্র গত দু’দিনে সারা দেশে ১২ জন গুম, খুন, অপহরণের শিকার হয়েছে। গত রোববার গভীর রাতে ময়মনসিংহ থেকে এবং গতকাল সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে ৫ জন গুম এবং অপহরণের শিকার হয়েছে। এছাড়া গত রোববারই নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে তুলে নিয়েছে। সাদা পোশাকধারী পুলিশ এ অপহরণে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন, মুক্তিপণ আদায়, প্রতিশোধ নেয়া, আবার কখনো কখনো শায়েস্তা করতে ঘটছে এসব ঘটনা। অপহৃত ব্যক্তিদের তালিকায় রাজনৈতিক শীর্ষ নেতা, ছাত্র নেতা, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষও রয়েছেন। এদের কেউ কেউ উদ্ধার হলেও অনেক ঘটনারই কোনো কূল-কিনারা উদ্ধার করতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দিনের পর দিন হদিস মিলছে না এসব মানুষের। একই সঙ্গে মানব পাচারের ঘটনাও বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার চার সঙ্গী। নজরুলের ব্যবহৃত গাড়িটি গাজীপুরের শালবন থেকে উদ্ধার হলেও তাদের কোনো খোঁজ নেই। প্রায় একই সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহৃত হয়েছেন এ্যাডভোকেট চন্দন এবং তার ড্রাইভার। তাদের কোনো হদিস গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
গতকাল পুলিশ প্রশাসন এবং গুম-অপহরণের শিকার পরিবারগুলো জানায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী দীন মোহন মণ্ডল (৫০) ও তার ভাই কেদানী মোহন মণ্ডলকে (৪৫) পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা গতকাল ভোররাতে অপহরণ করে। তারা ওই গ্রামের মাধব মোহন মণ্ডলের ছেলে। অপহৃত দীন মোহন মণ্ডলের স্ত্রী পুরবী রাণী বর্মণ তার স্বামী ও তার ভাইকে অপহরণের কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, রাত তিনটার দিকে দু’টি প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রোবাসযোগে কালিয়াকৈরে অন্তত ১০ জন তাদের বাড়িতে গিয়ে এই অপহরণের ঘটনা ঘটায়। তারা ছিল সাদা পোশাকে এবং নিজেদেরকে পুলিশের লোক বলে পরিচয় দেয়। কালিয়াকৈর থানার এএসআই তোফায়েল আহমেদ জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কালিয়াকৈর থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, অপহৃতদের খোঁজ মেলেনি। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা নিজেদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে এই ঘটনা ঘটাতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য তাদেরকে আটক করেনি।
গতকার ভোররাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় ঘরের দরজা ভেঙে অস্ত্রেরমুখে অপহরণ করা হয়েছে দুই শিক্ষককে। স্থানীয় গনজাগরণ টিউটোরিয়াল কোচিং সেন্টারের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন সবুজ (৩৫) ও একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক স্বপনকে (২৮) অপহরণ করা হয়। অস্ত্রধারীরা নিজেদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেয়।
তারা সবুজ ও স্বপনের হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে অস্ত্রধারীরা সকালে থানায় খোঁজ নেয়ার জন্য বলে। সকালে থানায় খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ময়মনসিংহের গুলপুকুর পাড় এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছেন ইসলামী ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখার কর্মকর্তা ইলিয়াস উদ্দিন। এখনো তার খোঁজ মেলেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়।
গত ১৯ এপ্রিল রাতে পুলিশ পরিচয়ে বন্দুকধারীরা এই এলাকার পানিবান্ডা গ্রামের কলিমউল্যাহর ছেলে ময়মনসিংহ হোমিওপ্যাথিক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইউসুফ আলী সোহাগকে তুলে নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। ওই রাতে একই গ্রামের ফয়জুল হকের ছেলে ঢাকা তিতুমীর কলেজের অর্থনীতির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বছির আহমেদ, পাঁচগাঁও গ্রামের আজহার আলীর ছেলে মোর্শেদ আলী ও তার ছোট ভাই সোহেল ঢাকা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। বছিরের বোন তিতুমীর কলেজের ছাত্রী রহিমা আক্তার রিয়া অভিযোগ করেছেন, ঢাকার কোনো থানায় তার ভাই নিখোঁজের ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়রি পর্যন্ত দায়ের করতে পারেননি।
মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, আইনের প্রতি আস্থা না থাকলে এভাবে অপহরণের ঘটনা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এ্যাডভোকেট এলিনা খান নয়া দিগন্তকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণহীন থাকে বিচার ব্যবস্থা ও আইনের প্রতি যখন মানুষের আস্থা উঠে যায় তখন এরূপ ঘটনা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ক্রিমিনাল যখন বুঝতে পারে তাদের বিচার হবে না, তাদেরকে ধরা হবে না, কোনোভাবে তারা পার পেয়ে যাবে তখনই এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যায়। সেটারই প্রতিফলন একের পর এক অপহরণের ঘটনা।