DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

“উনিশ শ একাত্তর”,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারনমূলক প্রামান্য ধারাবাহিকঃসাইদুল ইসলাম,পর্ব-১০

10167945_10203543240170746_843595010_aউনিশশ’ একাত্তর: ১০,সাইদুল ইসলাম

২৫ মার্চ সকাল সাড়ে আটটায় ব্রিগেডিয়ার মজুমদার জয়দেবপুরে রওয়ানা হবার সময় ক্যাপ্টেন আমীন আহমেদ চৌধুরীকে বললেন, ‘হাতে আর সময় নেই। তুমি চট্টগ্রামে ফিরে যাও।

আর কর্নেল চৌধুরিকে বল, লাল ফ্ল্যাগ উড়িয়ে দিতে’। আমীন কথাটা ঠিক মত বুঝতে পারলেন না। তিনি সকালে মজুমদারের সাথে দেখা করতে লেঃ কর্নেল মোহিতের বাসায় এসেছিলেন তাঁর মামার গাড়িতে চেপে। ইএমই ( কোর অব ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারস) কোরের অফিসার লেঃ কর্নেল মোহিতের বাড়ি সিলেট। মজুমদারের সাথে তাঁর পারিবারিক পর্যায়ের জানাশোনা। মিসেস মোহিত তাদের নাস্তা না খাইয়ে ছাড়লেন না। নাস্তার সময় খুব বেশি আলোচনা হয়নি। হঠাত করে লাল ফ্ল্যাগের কথায় একটু হকচকিয়ে গেলেন তিনি।

কাল হেলিকপ্টারে ওঠার সময় মনে হলো, কিউএমজি (কোয়ার্টার মাষ্টার জেনারেল) জেনারেল জাঞ্জুয়া, মজুমদারকে একটু ধাক্কা দিয়ে সিটে বসিয়ে দিলেন। সেই থেকে মজুমদারের একটু বিচলিত লাগছিলো। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর প্রথমে মজুমদারের সাথে তাঁর কোর্সমেট জাহাঞ্জেব আরবাবের বাসায়* উঠেছিলেন আমীন। বাসার ভেতরের লনে, তাঁবু খাটিয়ে অনেক বেসামরিক লোককে থাকতে দেখে একটা খটকা লেগেছিলো তার মনে। তিনি গুলশানে তাঁর মামার বাসায় চলে যেতে চেয়েছিলেন।

আবরার বললেন, ‘বাচ্চু দ্য সিটি ইস নট সেইফ ফর ইউ’। শুনে, মজুমদার বললেন, ‘ ইজ দেয়ার এনিথিং ভেরি সিরিয়াস ইন দ্য সিটি?’ আবরার উদ্ধত ভঙ্গিতে, নাথিং লাইক দ্যাট, গিভ মি টু কোম্পানি, আই উইল স্ট্রেইটেন এভরিথিং ইনক্লুডিং য়োর বঙ্গবন্ধু’ বলতে বলতে অন্যদের সাথে হাত মেলাতে চলে গেলেন । মজুমদার আমীনকে, ‘ফিসফিসিয়ে বললেন, দে কুড নেভার থিঙ্ক বিয়োন্ড দ্য রেসপন্সিবিলিটি অব এ কোম্পানি’। ততক্ষণে আমীনের মামা গাড়ি নিয়ে চলে আসায় তিনি চলে গিয়েছিলেন গুলশান।

যাওয়ার পথে 10173635_650180945018785_1162100664_nশুনেছেন, তাজুদ্দিন তাঁর আল্টিমেটাম জানিয়ে দিয়েছেন। ‘নাথিং লেস দ্যান এ কনফেডারেশন’। চট্টগ্রামে কর্নেল চৌধুরিকেও তাই টেলিফোনে তিনি একথায় জানিয়েছেন। উপরন্তু রফিককে ‘আপাততঃ ধীরে চলো’র জন্যেও বার্তা পাঠিয়েছেন কর্নেল চৌধুরির মাধ্যমে। এর সাথে মজুমদারের সকালের আদেশটা মিলছে না।

এসব ভাবতে ভাবতে তিনি তাঁর মামার গাড়িতেই পৌছালেন এয়ারফোরসের মেডিক্যল ইউনিটে। সেখান থেকে বলা হলো ২৭ তারিখে রিপোর্ট করতে। এর পর আমীন, তার মামা শাহ আলম চৌধুরির মতিঝিলের হক ম্যানসনের অফিস থেকে ফোন করলেন চট্টগ্রামে। প্রথমে কোন বাঙালি অফিসারকে পাওয়া গেলোনা।

তিনি মিসেস মজুমদারকে ফোন করে বললেন, ‘স্যার কর্নেল চৌধুরিকে একটা ম্যাসেস দিতে বলেছেন’। মিসেস মজুমদার বুঝতে পারলেন না তাঁর কথা। আমীন বললেন, ভাবী আমি যা বলছি হুবুহু তাই লিখে কর্নেল চৌধুরিকে পাঠান। খুবই জরুরী। তিনি লিখলেন, ‘লাল ফ্ল্যাগ উড়িয়ে দাও’। একটু পরে আমীন ক্যাপ্টেন এনামের এক আত্মীয়, শহিদ কে ফোন করলেন। শহীদের কাছে জানাগেলো চট্টগ্রামের অবস্থা খারাপ।

তিনি যদি ঢাকা থেক কোন মতে হাজীক্যাম্প পর্যন্ত আসতেও পারেন ক্যান্টনমেন্টে ঢুকতে হবে, পাহাড়ের গায়ে গায়ে ভেসপা চালিয়ে নতুন পাড়ার কাঁচা রাস্তা দিয়ে। কর্নেল চৌধুরির কাছে কমান্ডান্টের বার্তাটি পৌছালো কি না জানতে তিনি এবার তিনি ফোন করলেন ক্যাপ্টেন মোহসিনকে**। মোহসিন মারশালল’ অফিসে স্টাফ অফিসার। সেখানে পাওয়া গেল কর্নেল চৌধুরীকেও, তিনি বললেন, ‘ষোল শহরের দিকে ওয়াগান ফেলে জনতা 10170703_650181001685446_520236815_nসেনানিবাসের সাথে শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে’। – স্যার বস লাল ফ্ল্যাগ উড়িয়ে দিতে বলেছেন’। – তাতো বুঝলাম! কিন্তু এসব কথা তিনি নিজে বললে ভালো হয়।

আমীন বললেন, তাঁকে দিয়ে বিকেল নাগাদ বলানো যাবে। উনি আগে জয়দেবপুর থেকে ফিরে আসুক। সাড়ে দশটার দিকে ক্যাপ্টেন আমিন ধানমন্ডিতে এলেন কর্নেল ওসমানীর সাথে দেখা করতে। বললেন, ‘স্যার গাড়ি নিয়ে এসেছি, আজই চট্টগ্রামে শিফট করতে হবে’। ওসমানী তাঁকে বসিয়ে রেখে বিভিন্ন যায়গায় যোগাযোগ করে তারপর বললেন, ‘ President is going to announce something very important by 8’0 clock in the evening, or latest by tomorrow noon.’

*বর্তমানে ৫৬ বাশার রোড ** ১৯৮১ সালে অভ্যুত্থানের পর নিহত সূত্রঃ Time; Flames of Freedom, আমীন আহমেদ চৌধুরিঃস্মৃতিচারণঃ অগ্নিঝরা মার্চ ১৯৭১ সালের সেই উত্তাল দিনগুলো, গেডিয়ার চৌধুরি খালেকুজ্জামানঃ সামরিক জীবনের স্মৃতি, মেজর জেনারেল আমীন আহমেদের সাথে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট ও হালিশহরে আমার কথপকথন ১৯৯৩ 

 
Saidul Islam's photo.

 

 

 

· 

 

 

 

 

 · 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!