সারা দেশে জেলা, উপজেলা এবং পৌর কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। চলতি মাস থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হচ্ছে। আর এ কমিটিগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাচ্ছেন নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানরা। এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
জেলা-উপজেলায় ত্যাগী নেতাদের রেখে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলামেইলকে জানান।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের প্রতি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের শুভদৃষ্টি রয়েছে। এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছেও তাদের কদর বেড়েছে। তাই তৃণমূল নেতাদের আশঙ্কা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের নব গঠিত কমিটিতে বেশি প্রধান্য দেয়া হতে পারে।
এতে দলের ত্যাগী নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বঞ্চিতও হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, উপজেলা ও পৌর কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে নবগঠিত জেলা আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল গফ্ফার দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিগগিরই সিলেট জেলার সকল উপজেলা ও পৌর কমিটির নাম ঘোষণা করা কবে।’
তবে উপজেলা চেয়ারম্যানদের আহ্বায়ক ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সদস্য সচিব করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ দলের ব্যাপার। দলীয় নীতি নির্ধারকরা ত্যাগী ও আন্দোলন সংগ্রামে সব সময় দলের পাশে থাকেন এমন নেতাদেরকে কমিটিতে স্থান দেয়া হবে।’
দলীয় সূত্র মতে, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এর ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলন করে পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে কমিটিতে স্থান পাওয়া আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সদস্যদের নিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সিলেটের সকল উপজেলা ও পৌর কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটির নাম ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সভায় সিলেটের নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
এমতাবস্থায় দলের ত্যাগী নেতাদের ধারণা যেসব উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে আহ্বায়ক করা হবে। আর ভাইস চেয়ারম্যানদের সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করা হবে। এমনকি উপজেলায় তাদের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করার জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেটের ১২টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। তারা হলেন- কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী, গোয়াইনঘাট উপজেলায় আব্দুল হাকিম চৌধুরী, বালাগঞ্জ উপজেলায় আবদাল মিয়া, জকিগঞ্জ উপজেলায় ইকবাল আহমদ চৌধুরী ও বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ এপ্রিল সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নূরুল হককে আহ্বায়ক করে ৮ জন যুগ্ম আহ্বায়ক রাখা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে একটি সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া।
ঘোষিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন- সদ্য বিলুপ্ত জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গফ্ফার, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, জেলা যুবদলের সভাপতি এমএ মান্নান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এমরান আহমদ চৌধুরী।
কমিটিতে প্রথম সদস্য রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাকে।
এছাড়া কমিটিতে সকল অঙ্গ সংগঠনের জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা ও পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সদস্য রাখা হয়েছে।