DMCA.com Protection Status
title="৭

ব্যক্তিগত গাড়ি ১০ মিনিটে হয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্স, কালো কাচের আড়ালে…

image_89085_0সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ নিয়ে সারা দেশে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে এ অপরাধ। এসব অপহরণ শুধু মুক্তিপণের জন্য নয় ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বা রাজনৈতিক কারণেও হচ্ছে। অনেকে জীবিত ফেরত এলেও কারো অনুসন্ধান মিলছে না আর কারো মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে নদীতে নর্দমায়। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া গেল কয়েকদিন আগে অপহৃত সাত জনের মৃতদেহ।





এ ঘটনার পরেই টনক নড়েছে সরকারের। অপহরণ ও এ ধরনের সন্ত্রাস রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ১০ মে থেকে মাইক্রোবাসে কালো, রঙিন বা অস্বচ্ছ কাচ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই সূত্র ধরে রাজধানীতে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স এবং সেসব অ্যাম্বুলেন্সে কালো কাচ লাগানোর প্রবণতা সন্দেহের উদ্রেক করছে।





রাজধানীজুড়ে সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি অলিতে-গলিতে দেখা যায় কালো কাচে মোড়ানো অ্যাম্বুলেন্স। অথচ জরুরি সময়ে কিন্তু এগুলো পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কী এমন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশেষ ‘কালো কাচে’ মোড়া অ্যাম্বুলেন্সগুলো। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায় চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।





অনুসন্ধানে জানা যায়, তিন শ্রেণীর মানুষ এ ধরনের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করেন: রোগী, আফিস পাড়া ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নাশকতাকারী। মূলত এই যানটি দেখলে যে কেউই প্রথম অবস্থায় জরুরি যান ভেবে দ্রুত জায়গা ছেড়ে দেন। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগানো হয়।





এছাড়াও সম্প্রতি চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এসময়ে একটি সাধারণ প্রাইভেট কারের তুলনায় অ্যাম্বুলেন্স বেশি নিরাপদ। আর কালো কাচ লাগানো থাকাতে আরো বেশি নিশ্চিন্ত।





অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা বা অনুমোদনের প্রয়োজন না থাকায় সাধারণ কোনো মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারকে রাতারাতি অ্যাম্বুলেন্স বানানো হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশজুড়ে পাল্লা দিয়ে চলছে অকেজো গাড়িগুলোকে ‘কালো কাচ’ লাগিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তরের কাজ।





সরেজমিনে রাজধানীর বেশকিছু মোটরগ্যারেজ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিযোগিতা করে চলছে অ্যাম্বুলেন্স তৈরির কাজ। রাজধানীর বিজয়নগর মোড়, বাংলামোটরসহ বংশালের সব অলিতে গলিতে চলছে এ কাজ। সকাল থেকেই একের পর এক আসতে থাকে বিভিন্ন রঙের গাড়ি। ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই তৈরি হয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্স!








উপস্থিত থেকে দেখা যায়, গ্যারেজের কর্মচারীদের গাড়ির চারপাশে দ্রুত রিফ্লেকটিভ লাল স্টিকার লাগাচ্ছে, কেউ ব্যস্ত গাড়ির কাচে কালো রঙের স্প্রে করতে, কেউ এই ফাঁকে সেরে ফেলছেন সাইরেন লাগানোর কাজ। এভাবেই মাত্র ১০ হাজার টাকায় পুরাতন গাড়িটি কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স হয়ে বের হয়ে আসছে গ্যারেজ থেকে।





রাজধানীর বিজয়নগর মোড়ের রায়হান মোটর্সের কর্মকর্তা কাজল আহমেদের সঙ্গে কথা বলে এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে। তিনি জানান, নির্বাচনের আগে মাসে ৩ থেকে ৫টি অ্যাম্বুলেন্স তৈরির কাজ হতো। কিন্তু গত এক মাসে শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স তৈরির কাজ তারা করেছেন। আর এগুলোর প্রায় সবক’টিতে লাগানো হয়েছে কালো কাচ।





গুম, অপহরণ ও খুনের কাজে এসব অ্যাম্বলেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ধারণা অনেকের।





অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিমত জানতে ধানমণ্ডির বাসিন্দা মিজানুর রহমানে সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রাজধানীর পথে বের হলেই চোখে পড়ে বাহারি রঙের অ্যাম্বুলেন্স। মনে হয়, এ যেন এক অ্যাম্বুলেন্সের নগরী। তারপরও জরুরি রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছেন না। ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। তাহলে কী এমন কাজে এতো অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার হচ্ছে?’





খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব অ্যাম্বুলেন্স রোগীদের জন্য ব্যবহার হয় না। ব্যবহার হয় সভা-সমাবেশ, অফিস পাড়া এবং নাশকতায়। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে এসব অ্যাম্বুলেন্সে বাজতে থাকে জরুরি সাইরেন। এতে একদিকে যেমন সৃষ্টি হয় আতঙ্কের অন্যদিকে জনমনে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তির।





আজ যারা ব্যক্তিগত কাজে জরুরি এই যানটি ব্যবহার করছেন, তারাই কাল রাস্তায় রোগী নিয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেখলে মনে করছেন এটা বুঝি ভুয়া। একারণে তিনি নিজেই হয়ত রাস্তায় জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন না। গাড়িচালকের অনেকেই বিষয়টি জানেন বলে রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সাধারণ মানুষও এ যানটিকে আর শুধু রোগী বহনের জরুরি যান হিসেবে সহজে বিশ্বাস করতে চায়। তাছাড়া ইদানীং অপহরণ বেড়ে যাওয়ায় এ যান নিয়ে অনেকে আতঙ্কিতও যে হন না তা নয়।





ধানমণ্ডির শংকর প্লাজার সামনে প্রতিদিন ভোরে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স আসে অফিসগামী যাত্রী নিতে। প্রথমবার এ দৃশ্য দেখলে যে কারো চোখ কপালে উঠবে। কিন্তু স্থানীয় কাছে এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। শংকরের বাসিন্দা আজমাইন মাহতাব বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এখানে দেখি অ্যাম্বুলেন্সে করে জরুরি সাইরেন বাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অফিসযাত্রী। এতে বোঝা মুশকিল যে কোনটি আসল আর কোনটি ভুয়া অ্যাম্বলেন্স।’





অ্যাম্বুলেন্সের এরকম যথেচ্ছা ব্যবহার এবং অনুমোদনের জন্য সুনির্দিষ্ট  নীতিমালা না থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান মোহাম্মাদ রেজওয়ান বলেন, ‘এ ব্যাপারটি আমরাও খেয়াল করেছি। সে কারণেই দেখবেন বিভিন্ন জায়গায় আমরা অ্যাম্বুলেন্সও থামিয়ে চেক করি। আর এখন আপনারা যেহেতু ব্যাপারটি জানালেন সেহেতু আমরা এখন থেকে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে জোরালো নজর রাখবো।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!