বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সাংগঠনিকভাবে ‘স্বাবলম্বী’ এবং ‘সর্বগ্রহণযোগ্য’ করতে কৌশল গ্রহণ করেছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সুবক্তা হলেও বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর্যাপ্ত সক্ষমতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেই, এমনটাই মনে করেন দলের একাংশ। আর তাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অধিকাংশ সময়ই দলের সিনিয়র নেতাদের তার পাশে দেখা যায়নি।
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছাড়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাশে নীতি নির্ধারণী ফোরামের অধিকাংশ নেতাদের একত্রিত হওয়ার ঘটনা বিরল। দুয়েকজন স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, যুগ্ম-মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েজন এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকই বেশির ভাগ সময় মির্জা ফখরুলের কর্মসূচির সঙ্গী হয়েছেন।
এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বোরকা পরে আদালতে যাওয়া, হেলমেট পরে দ্রুত কর্মসূচি স্থল ত্যাগের বিষয়গুলো নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন সমালোচনা। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তিনি তার পূর্বসুরীদের বিকল্প হতে পারেননি।
ফখরুলের নেতৃত্ব নিয়ে দলের সিনিয়র ভাইস তারেক রহমানও কঠোর সমালোচনা করেন। যার প্রমাণ মিলে ১৮দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে তারেক এবং ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর মধ্যে ফোনালাপ থেকেই। আর এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতিতে ফখরুলকে আরো একটু বিপাকে পড়তে হয়।
সব মিলিয়ে বলা চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহও বেশকিছুদিন আগে বলেছিলেন, ভারপ্রাপ্ত দিয়ে আন্দোলন সফল করা যায় না। মির্জা ফখরুলকে ভারমুক্ত করতে হবে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অপহরণ এবং লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। এ ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শিগগিরই মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তার একদিন পর শুক্রবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জানান, প্রোগ্রাম তৈরি হচ্ছে। শিগগিরই মাঠে নামা হবে। সেই সঙ্গে তিনি অপহরণ প্রতিরোধে মানুষের কাছে ১০টি পরামর্শও তুলে ধরেন।
আর এই সংবাদ সম্মেলনে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ড. আরএ গণি, এমকে আনোয়ার, বেগম সারোয়ারি রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুল্লাহ আল নোমান, এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা পরিষদের শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই সংবাদ সম্মেলনে অনেকটা হঠাৎ করেই অধিকাংশ সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতির প্রভাব তৃণমূলেও পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সাংগঠনিকভাবে স্বাবলম্বী এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতেই দল সোচ্চার হয়েছে। তিনি যে অত্যন্ত সুবক্তা সে বিষয় নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু সাংগঠনিক অন্যান্য যে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী থাকতে হয় সে বিষয়ে ফখরুল সাহেবের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তাকে নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এ অবস্থা কাটাতেই সিনিয়র নেতারা একত্রিত হচ্ছেন।’
সচরাচর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের দেখা যায় না। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে নীতি নির্ধারণী ফোরামের অনেকেই ছিলেন। এই পরিস্থিতির কারণ কী এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ দৈনি প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি জানি না। আমাকে পার্টি অফিস থেকে বলা হয়েছে আমি এসেছি। অন্যদেরও নিশ্চয়ই বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যেভাবে গুম, খুন চলছে তাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। এসব প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।’