ভারতের ১৬তম লোকসভা নির্বাচনে তিনি কোনো আসনে লড়াই করছেন না। রাজনীতিতে তার খুব একটা আগ্রহ আছে এমনটিও কখনোই শোনা যায়নি। তিনি ব্যস্ত আছেন তার ঘর-সংসার নিয়ে। তারপরও ভারতের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদি, সোনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধীর মত তার নামটিও অত্যন্ত গরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। বলছিলাম ভারতের ডাকসাইটে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরার কথা। সম্প্রতি তিনি নিজের সম্পর্কে বলেছেন,-‘আমি রাজীব গান্ধীর কন্যা।’
বৃহস্পতিবার ৪২ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কা তড়িৎ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন,‘আমি রাজীব গান্থীর মেয়ে। তিনি এ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আমি আর কারো সঙ্গে তাকে তুলনা করতে পারি না।’ মোদির ‘প্রিয়াঙ্কা আমার মেয়ের মত’ বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেছেন। মা সোনিয়া গান্ধী এবং ভাই রাহুল গান্ধীর দুই আসন রায় বেরেলি এবং আমেথিতে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা।
তিনি এমন কোনো অনলবর্ষী বক্তা নন। তবে যে কোনো জটিল ইস্যুতে সোজা ভাষায় নিজের মতামত জানাতে পারেন দক্ষতার সঙ্গেই। এর আগে তিনি মোদিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,‘ভারতে ৫৬ ইঞ্চি ছাতি বিশিষ্ট নেতার দরকার নেই, একজন বড় মনের নেতা দরকার।’ এটিও তিনি মোদির এক বক্তব্যের জবাবেই বলেছিলেন। এছাড়া বিজেপি নেতার ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর’(এ মন আরো চায়) প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন,‘তিনি আরো অনেক কিছু চাচ্ছেন। তিনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তার অন্তত: সেই ভাষাতেই কথা বলা উচিত।’
ভারতের নির্বাচনী প্রচারণাগুলোতে ঘুরেফিরেই আসছে প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট ভাদরার দুর্নীতির প্রসঙ্গ এবং তিনি তার মত করে এসব অভিযোগের জবাব দিচ্ছেন। কংগ্রেস সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তার স্বামীর হরিয়ানা এবং রাজস্থানে জমি পেয়েছেন বলে নানা প্রশ্ন ওঠেছে। এই নির্বাচনে তার এ কৌশল কাজে আসবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবে এ নির্বাচনে তাকে যত কঠিনভাবে আঘাত করা হচ্ছে ততই যেন তিনি শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। এখানেই প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী এবং দাদি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
হয়ত এ ধরণের তুলনা করাটা ঠিক নয়। তারপরও প্রিয়াঙ্কার ব্যক্তিত্বের মধ্য থেকে পুরনো ইন্দিরাই যেন ঝলকে উঠছেন। অবশ্য তার কথাবার্তার সঙ্গে সাবেক ইসরায়েলী প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ারেরও অনেক মিল পাওয়া যায়। লৌহমানবী হিসেবে পরিচিত গোল্ডা মায়ারের একটি বিখ্যাত উক্তি হল-‘ অতটা বিনয়ী হতে যেও না। কেননা তুমি কোনো মহামানব নয়।’
প্রিয়াঙ্কা যেভাবে ‘আমি রাজিব গান্ধীর মেয়ে’ বা ‘দরিয়া দিল’ বলে মোদিকে ঘায়েল করেছেন তাতে আমাদের বারবার গোল্ডার কথাই মনে করিয়ে দেয়। গোল্ডার আর একটি বিখ্যাত উক্তি হল-‘রাজনৈতিক নেতারা যা চিন্তা করেন তারা নিজেরা যদি সত্যিই তা অনুভব করতেন, তবে পৃথিবী একটি সুখের জায়গা হত।’অবশ্য তার এ উক্তির সঙ্গে সরাসরি প্রিয়াঙ্কা-মোদিকে মেলানো যাবে না।
এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলি নেতার আরো একটি বুদ্ধিদীপ্ত উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭০ দশকে ইসরায়েল এবং মিশরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সময় বলেছিলেন,‘আমি প্রথমে একজন আমেরিকান, তারপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তারপর একজন ইহুদি।’ উত্তরে গোল্ডা মায়ার বলেন, ‘অতি উত্তম কথা। তবে হিব্রুতে লোকজন সবসময় ডান দিক থেকেই পড়া শুরু করে।’