DMCA.com Protection Status
title="৭

“উনিশ শ একাত্তর”,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারনমূলক প্রামান্য ধারাবাহিকঃসাইদুল ইসলাম,পর্ব-১১

10167945_10203543240170746_843595010_aউনিশশ’ একাত্তর ১১:সাইদুল ইসলাম

 ২৫ মার্চ সকাল এগারোটার দিকে ৮ বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন চৌধুরি খালেকুজ্জামানকে পাঠানো হল বায়েজিদ বোস্তামী রেল ক্রসিংএ ব্যারিকেড সরানোর জন্যে। নতুন স্টেশন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আনসারিকে আগের দিন ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছে সোয়াত যেকোন মূল্যে সোয়াত জাহাজ থেকে গোলাবারুদ আনলোড করার দায়িত্ব দিয়ে।

জেনারেলরা যখন মজুমদারের অফিসে তাকে কথা বার্তায় ব্যস্ত রেখেছিলেন, ততক্ষণে, বেশিরভাগ বাঙালি অফিসারদের অলক্ষে আনসারি পোর্টে রওনা হয়েছিলেন। আনসারির ক্যারিয়ার প্রোফাইল খুব ভালো নয়। তার জুনিয়াররা একে একে জেনারেল হওয়া শুরু করলেও তিনি উপরে উঠতে পারছিলেন না। সোয়াত জাহাজ খালি করাটা তাঁর জন্যে হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলসিরাত পার হবার পাথেয়। ২৪ তারিখ রাত থেকেই তিনি লেগে পড়েছিলেন সোয়াত জাহাজ খালি করার চেষ্টায়।

চট্টগ্রামের বাঙালিরা যেহেতু বিহারি বাঙালি দাঙ্গার পর থেকেই পাঞ্জাবিদের সহ্য করতে পারছিলো না, তাই তিনি বালুচ ইউনিটকে এই কাজে না লাগিয়ে ৮ বেঙ্গলের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন এই কাজ। ৮ বেঙ্গলের অবাঙালি অধিনায়ক, লেঃ কর্নেল জাঞ্জুয়া উঠে পড়ে লেগেছেন সোয়াতের পেছনে। মেজর মীর শওকত আলীকে দেওয়া হয়েছে জাহাজ খালি করার সময় পাহারাদারির দায়িত্ব। এদিকে ষোল শহর রেল স্টেশন থেকে ৪০০ গজ পশ্চিমে নাসিরাবাদ রেল ক্রসিঙের উপর একটি মাল গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে যাবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় বাঙালিরা

। শুধু এখানেই নয় নাসিরাবাদ, ষোল শহর, আগ্রাবাদ সহ আরও অনেক জায়গায় বসানো হয়েছে ব্যরিকেড। ২৪ তারিখ রাত থেকে সে সব সরানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইবিআরসি আর ৮ বেঙ্গলকে। বাঙালি অফিসাররা পাঞ্জাবি অধিনায়কের আদেশে সেসব জায়গায় গেলেও ব্যরিকেড সরানোর ব্যাপারে খুব একটা গা লাগাতে দেখা যায়নি কাউকে। অধিনায়কের আদেশে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান ১০ জন সৈনিক নিয়ে নাসিরাবাদ রেল ক্রসিংএ পৌছালেও, তাঁর নিরাসক্ত ভাব দেখে সৈনিকরাও নিষ্ক্রিও হয়ে রইলো। তিনি ব্যারিকেড না সরানোর একটা অজুহাতও খুঁজে পেলেন।

বগি গুলো একটির সাথে আরেকটি এমন ভাবে লাগানো যে সামনের বা পিছনেরটি না সরিয়ে রেল ক্রসিঙের উপরেরটি সরানো সম্ভব না। সৈনিকদের ট্রেনের উপর নজর রাখতে বলে ব্যাটালিয়নে ফিরে গিয়ে বললেন, যন্ত্রপাতি আর কারিগরী জ্ঞান না থাকায় তাঁর পক্ষে এই ব্যরিকেড সরানো সম্ভব না। অধিনায়কের পছন্দ হলো না তাঁর কথা। তিনি বললেন, ‘ইউ হ্যাভ জাস্ট কাম উইথ এ লেইম এক্সকিউজ। ওকে ইউ ফল ব্যাক উইথ য়োর ট্রুপস লেট মি সেন্ড সামোয়ান এলস’।

এর পর মেজর মীর শওকত আলীকে পাঠানো হল, ব্যারিকেড সরাতে। খালেকুজ্জামান ফিরে এসে, কিছুক্ষণ পর উপ অধিনায়কের অফিসে গেলেন। জিয়া সেখানে একা একা কাজ করছিলেন। খালেকুজ্জামানকে দেখে একটু খুশিই হলেন মনে হয়। ইশারায় চেয়ার দেখিয়ে একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ‘সো ইউ কেইম ব্যাক উইথ এ লেইম এক্সিউজ’। সে কথার উত্তর না দিয়ে খালেক পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ স্যার, হোয়াট’স গোয়িং টু হ্যাপেন?

ফাইল থেকে চোখ না তুলেই জিয়া বললেন, ‘লেটস ওয়েট এন্ড সি’। বেলা ১টার দিকে ফাইল বন্ধ করে উঠলেন তিনি। বললেন, সিও বলেছেন গার্ড চেক করতে চলো দেখে আসি কোথায় কী করছে ওরা’। খালেকুজ্জামানকে নিয়ে একটি জীপে করে সরা সরি ক্যান্টনমেন্টের দিকে রওনা দিলেন তিনি। বায়জিদ বোস্তামি রোডে ঢোকার মুখে নাসিরাবাদ রেল ক্রসিঙের উপর থেকে মালগাড়ির বগীটা ততক্ষণে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। খালেকুজ্জামানের একটু অভিমান হলো মীর শওকত আলীর উপর, তিনি জিয়া কে বললেন, দেখেছেন স্যার, শওকত স্যার ক্লিয়ার করে দিয়েছেন! জিয়া বললেন His father used to serve in the Railway, that experience might have helped him. একটু দূরে কোকাকোলার সামনে লেফটেন্যান্ট শমসের মুবিনের সাথে দেখা হলো।

তাঁর খোঁজ খবর নিয়ে আবার এগিয়ে চললো জীপ। ক্যান্টনমেন্ট থেকে একই পথে ফিরে এসে নিউমারকেট, কোর্ট হিল, আন্দরকিল্লা, চকবাজার হয়ে তারা ফিরে এলেন নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকায়। পথে অসংখ্য ব্যারিকেড সরাতে হলো নিজেদেরই। দুই এক জায়গায় বাঙালিরা কাছে এগিয়ে উকি দিলো জীপে। তাদের দেখে বেরিকেড সরানোর কাজে হাতও লাগালো দুই এক জন। বলল, আমাদের জীপ। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলো, কী হতে যাচ্ছে। জিয়া খুব একটা কথা বললেন না।

চকবাজারে দেখা হলো দেখা হলো ছাত্রনেতা মোহাম্মাদ হোসেনের সাথে চিটাগং কলেজে খালেকুজ্জামানের সহপাঠি ছিলেন তিনি। জিয়ার সাথে পরিচিত হয়ে খুশি হলেন তিনি। বললেন, ‘যদি ওরা আক্রমণ করে আমরা কী করবো? স্যার আপনারা আমাদের সাথে আছেন তো?’ জিয়া কথা বলতেন কম। শুনতেন মনযোগ দিয়ে। মুচকি হেসে বললেন। ‘ওয়েট এন্ড সি’। খাল্কুজ্জামান বললেন, ‘বন্ধু সময়ে দেখবা তবে তোমরা রেডি থেকো’। সিরাজুদ্দৌলা রোডে দেখা হলো, ছাত্রনেতা হারূন খানের সাথে।

তাঁর সাথেও পরিচয় ছিলো খালেকুজ্জামানের। তিনি এগিয়ে এলেন গাড়ির দিকে, বললেন আমরা কিন্তু রাজপথে আছি। জিয়াকে বললেন, স্যার আপনারা আমাদের লোক। জিয়া শুধু মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন। নাসিরাবাদে নামার সময় জিয়া বললেন, কী মনে হলো? খালেকুজ্জামান বললেন স্যার, সময় খুব খারাপ।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!