ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন এবং ডেসটিনি মাল্টিপারপাস সোসাইটিসহ ডেসটিনি গ্রুপের ২৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭৮৭ কোটির প্রায় পুরোটাই আত্মসাত করেছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনসহ ২৩ কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ২৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭৮৭ কোটি ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫০ টাকা থেকে ৭৫০ কোটি ৭৬ লাখ এক হাজার ২৮৭ টাকা তারা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছেন এবং অধিকাংশ টাকাই মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন। দুদকের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দুদকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলার দীর্ঘদিনের তদন্ত শেষে ডেসটিনির শীর্ষ ২৩ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের ব্যাংক হিসাব থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ৮২ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার ৪ শত ৪৫ টাকার মধ্যে তিনি ৮১ কোটি ৪৭ লাখ ৯ হাজার ৪ শ ৩৭ টাকা উত্তোলন করে সরিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে তার অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১০ কোটি ৬৭ লাখ ৬ হাজার ৯ শ ১৫ টাকা।
সাবেক সেনা প্রধান ও ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদের ব্যাংক হিসাবে ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ ৩২ হাজার ৮ শ ৫৩ টাকা থাকালেও পরে ৩৩ কোটি ১২ লাখ ৭২ হাজার ৩ শ ২৪ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে তার অ্যাকাউন্টে আছে ৩ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার ৫ শ ২৮ টাকা।
উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হকের ব্যাংক হিসাবে ১১৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮শ ২৯ টাকা ছিল। তিনি ১০৮ কোটি ৮০ হাজার ৭৮৪ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে তার ব্যাংক হিসেবে ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৩ টাকা রয়েছে।
পরিচালক ইরফান আহমেদ সানীর ব্যাংক হিসাবে ৭৮ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজার ৭৫৮ টাকা থাকলেও তিনি ৭৩ কোটি ৮৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৭ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক জমশেদ আরা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবে ২৭ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৯৯৬ টাকা থাকলেও তিনি ২৬ কোটি ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৭৩৩ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক সাঈদ-উর-রহমানের ব্যাংক হিসাবে ১৬১ কোটি ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭ টাকা থাকলেও ১৬০ কোটি ৯৬ লাখ ১৪ হাজার ২২৫ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন স্বপনের ব্যাংক হিসাবে ৬৭ কোটি ৪১ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৫ টাকা থাকলেও তিনি ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার ৮৭১ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক মোহাম্মদ হোসেনের ব্যাংক হিসাবে ২২ কোটি ৫৯ লাখ ৬৯ হাজার ৭২৩ টাকা থাকলেও তিনি ২২ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ৯২০ টাকা উত্তোলন করে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক নেপাল চন্দ্র বিশ্বাসের ব্যাংক হিসাবে ৩১ কোটি ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬২৯ টাকা থাকলেও তিনি ৩০ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার ৬০৬ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের ব্যাংক হিসাবে ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯৫১ টাকা থাকলেও তিনি ১৬ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৭ শত ৬৩ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক শেখ তৈয়বুর রহমানের ব্যাংক হিসাবে ২৯ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৪২১ টাকা থাকলেও তিনি ২৮ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৭ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক ফারাহ দীবার ব্যাংক হিসাবে ১৪ কোটি ৩১ লাখ ১৪ হাজার ৩৬ টাকা থাকলেও তিনি ৮ কোটি ৯০ লাখ ৭৬৩ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলমের ব্যাংক হিসাবে ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার ১৬৫ টাকা থাকলেও তিনি ৯ কোটি ৭২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৫৯ টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক ফরিদ আক্তারের ব্যাংক হিসাবে ৯ কোটি ৪৫ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩০ টাকা থাকলেও তিনি ৯ কোটি ৪১ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৪ টাকা উত্তোলন করে তা সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক জাকির হোসেনের ব্যাংক হিসাবে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৫ টাকা থাকলেও তিনি ১৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮ হাজার ৬৪০ টাকা সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক আকবর হোসেন সুমনের ব্যাংক হিসাবে ২৬ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার ৬১১ টাকা থাকলেও তিনি ২৫ কোটি ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৩ টাকা উত্তোলন করে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক আজাদ রহমানের ব্যাংক হিসাবে ১৬ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ২৬২ টাকার মধ্যে তিনি ১৬ কোটি ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৭২ টাকা উত্তোলন করে সরিয়ে ফেলেছেন।
পরিচালক আবুল কালাম আজাদের ব্যাংক হিসাবে ১৪ কোটি ৫ লাখ ৩৬ হাজার ২৯৫ টাকার মধ্যে তিনি ১৪ কোটি ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৪ টাকা উত্তোলন করেছেন।
এছাড়া সুমন আলী খান, মজিবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম সরকার, সাইদুল ইসলাম খান ও শিরিন আক্তার তাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের টাকা তুলে সরিয়ে ফেলেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। এ সময় চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের প্রমাণ পায় দুদক। মামলার ১৮ মাস পর গত ১৬ জানুয়ারি অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লিমিটেডের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করা হয় ৪৬ জনকে। ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আসামি ১৯ জন। দুই মামলায় অভিন্ন আসামি রয়েছেন ১৪ জন।
ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এক হাজার আটশ ৬১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের মামলায় ২১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে বিদেশ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয়েছে ১৫০ জনকে।
সূত্র জানায়, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ট্রি প্লান্টেশন ও মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু বর্তমানে তাদের দুটি অ্যাকাউন্টে ৫৬ লাখ ও ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আছে। বাকি ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা কর্মকর্তারা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাত করেন।