ক্রমেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। মোটেই নতুন খবর নয় এটি। নতুন খবর হলো, বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চলের শহরগুলোর মাটি দেবে যাচ্ছে। একে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে অভিহিত করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বের কোনো কোনো অঞ্চলের মাটি দেবে যাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির চেয়ে দশ গুণ বেশি হারে।
সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডই এর কারণ। দশকের পর দশক ধরে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ফলে জাপানের রাজধানী টোকিওর মাটি দেবে গেছে দুই মিটার। এরপর অবশ্য ভূগর্ভস্থ পানি তোলা বন্ধ করে দেয় জাপান সরকার। ইউরোপের জিওসায়েন্স ইউনিয়নের সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখার সময় গবেষকরা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য শহরের অবস্থাও একই রকম। এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে জাকার্তা, হো চি মিন সিটি, ব্যাংককসহ বহু উপকূলীয় শহর সমুদ্রের নিচে চলে যাবে বলে মনে করছেন নেদারল্যান্ডসের ডেল্টারস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক গিল ইরকেন্স।
তিনি বলেন, ‘মাটি দেবে যাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উভয়ই ঘটে চলছে, তবে সমানতালে নয়, মাটি দেবে যাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার চেয়ে দশ গুণ বেশি হারে। কিন্তু একই সমস্যার সৃষ্টি করছে দুটোই। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দেখা দেবে বন্যা। আর তা হবে দীর্ঘস্থায়ী।’ ইরকেন্স বলেন, এর সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো খাওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি না তোলা। তবে এ ক্ষেত্রে খাওয়ার পানির জন্য নতুন উৎসের সন্ধান করার প্রয়োজন হবে।
এরই মধ্যে টোকিওতে পানি তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহরটির মাটি দেবে যাওয়া কমবেশি বন্ধ হয়েছে এতে। আক্ষরিক অর্থেই, ইতালির উত্তর-পূর্বে ভেনিস শহরেও খাওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভেনিসের মাটি অনেকটাই দেবে গেছে। কারণ ওই একটাই- অব্যাহতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা। ২০০০ সালে শহরটিতে পানি তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে বড় ধরনের মাটি দেবে যাওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি। পিয়েত্রো টিটিনিসের গবেষকরা মনে করেন, বিভিন্ন শহরে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা বন্ধ করে দেওয়ায় সেই সব এলাকায় মাটি দেবে যাওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
কোনো ভবন তুললে মাটির ওপর একটা চাপ পড়ে। তখন সেই ভবনটি দেবে যেতে থাকে উল্লেখযোগ্য হারে, বছরে কমপক্ষে ৫ মিলিমিটার। পাদোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, ভবনটি কতটা দেবে যাবে, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট এলাকার মাটির ধরনের ওপর। অবশ্য ইতালির আপেনমাইন পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি শহর দেবে যাচ্ছে বছরে প্রায় এক মিলিমিটার হারে, মাটির গঠন প্রক্রিয়ার কারণে।
কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানি তোলায় যে ক্ষতি হচ্ছে, তার তুলনায় প্রাকৃতিকভাবে মাটি দেবে যাওয়ার হার খুবই কম। বিজ্ঞানীদের হাতে এখন আছে অত্যাধুনিক যন্ত্র ইন্টারফরমেটিক সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার। এটি ব্যবহার করে এবং স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে বর্তমানে এক হাজারের এক ভাগ মাটি দেবে যাওয়ার হার নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। নব্বইয়ের দশক থেকে স্যাটেলাইটে সংগ্রহ করা ছবি বিশ্লেষণ করে মাটির দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনও খতিয়ে দেখতে সক্ষম হচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
অতি সম্প্রতি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা সেন্টিনাল-১ এ রাডার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এটি এ ধরনের সমীক্ষা চালাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।