রোববার সকাল ১১টা, নগরীর ডবলমুরিং থানার চল্লিশ কোয়াটার এলাকা। পোল্ট্রি ব্যবসায়ী দেলোয়ার নিজ বাসা থেকে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য পাহাড়তলী বাজারে যাচ্ছিলেন। এসময় তাকে ছুরিকাঘাত করে ১০ লক্ষ ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার খবর পেয়েও পুলিশ এর কোন হদিস বের করতে পারেনি।
তবে এবার থেকে এ ধরণের যে কোন অপরাধ সংঘটন করে অপরাধীরা আর পাবে না। ৫০ লক্ষাধিক নগরবাসীর কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ‘লাইভ সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স মনিটরিং’ ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সিএমপি।
প্রাথমিকভাবে নগরীর ৫০টি স্পটে ‘সার্ভিলেন্স ক্যামেরা’ বসানো হবে। পরবর্তীতে এর আওতা আরো বৃদ্ধি করা হবে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে নগরীর কোথায় কখন কী ঘটছে, সেটি সঙ্গে সঙ্গেই সরাসরি জানা যাবে যেকোন জায়গা থেকে। পাশাপাশি মনিটরিং করা হবে সিএমপির মনিটরিং সেল থেকে।
সিএমপি কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে খুন-অপহরণ ছিনতাইসহ নানা ধরণের অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসীর কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিএমপি এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
এটি নিয়ে কাজ করে ঢাকার এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠক করেছে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি সামনে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ যে কোন স্থানে মিছিল মিটিং করার বিষয়টিও তাৎক্ষণিক জানা যাবে এই পদ্ধতির মাধ্যমে।
প্রথমদিকে নগরীর ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট এই প্রযুক্তির আওতায় আসবে। এর সব খরচ সিএমপিই বহন করা হবে। পরবর্তীতে স্বেচ্ছায় কেউ এগিয়ে এসে সিএমপির এই উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে চাইলে সেটি আরো সম্প্রসারণ করা হবে। ইতমধ্যে অপটিক্যাল সহযোগিতা দেয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান সিএমপিকে আশ্বস্ত করেছে বলে সিএমপির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপ কমিশনার (সদর) মাসুদ উল হাসান দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘নগরবাসীর কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিএমপির পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই নগরীর ৫০টি স্পটকে সরাসরি মনিটরিংয়ের আওতায় আনার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’
জানা যায়, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে সারাবিশ্বেই বর্তমানে নিরাপত্তার বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি সেবা হচ্ছে সরাসরি নিরাপত্তা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে অপরাধীদের সনাক্ত করার নজির রয়েছে। তাই এই ব্যবস্থাটি দিনদিন জনপ্রিয় ও বেশ কার্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, কার্যকর নিরাপত্তার জন্য এ কার্যক্রম বেশ কার্যকর। এর সঙ্গে সিসিটিভির বড় পার্থক্য হচ্ছে সিসিটিভি থেকে প্রয়োজন হলে পরে তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সার্ভিলেন্স ক্যমেরায় তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া বিষয়টি সরাসরি দেখা যায়। আর সব দৃশ্য সংরক্ষণ হয়েও থাকে। সার্ভিলেন্স ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি নিরাপত্তা নজরদারির বিষয়টি মূলত ক্যামেরা আর ইন্টারনেটের সহায়তায় পরিচালিত হয়।
তিনি আরো জানান, মূলত নিরাপত্তা ক্যামেরার সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সরাসরি কাজ করে এ পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম। এতে সেসব স্থানে ক্যামেরা লাগানোর পর সেটি ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনা হয়। ক্যামেরায় ধারণ করা চলমান ছবি মনিটরে দেখা যায় সরাসরি। পুরো কার্যক্রমটি পরিচালিত হয় একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে।
এর সুবিধা সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ কর্মকর্তা জানান, এ ক্ষেত্রে বড় সমাধান হচ্ছে রিয়েল টাইম সার্ভিলেন্স মনিটরিং ব্যবস্থা। চাইলে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট এলাকার তাৎক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা সম্ভব, তাই লাইভ সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স মনিটরিং ব্যবস্থাটি বেশ কার্যকর। যদি কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটে, সেটিও তাৎক্ষণিক জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। নির্দিষ্ট মনিটরিং সেল বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বাইরেও চাইলে নিজের স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট থেকেও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা সম্ভব।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ডিবি) বাবুল আক্তার দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘লাইভ সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স মনিটরিং ব্যবস্থাটি নিরপত্তার জন্য বেশ কার্যকর। যদি কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটে, সেটিও তাৎক্ষণিক জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।’
প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে ৫০টি সার্ভিলেন্স ক্যামেরা বসানোর জন্য যে খরচ পড়বে তা সিএমপির নিজস্ব অর্থায়নে করা হবে। পরবর্তীতে যদি কেউ তাদের এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে চাই আমরা তখন তাদের সহযোগিতায় এর পরিধি বাড়াবো।’