DMCA.com Protection Status
title="৭

সাঈদীর রায়ঃঅতিতের সহিংস জামায়াত, এখন শান্ত হয়ে সমঝোতায় ব্যস্ত

image_89697_0দৈনিক প্রথম বাংলাদেশঃ  জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে জামায়াত। একই সঙ্গে লবিস্ট নিয়োগ করে আন্তর্জাতিকভাবেও চলছে জোর লবিং। ব্যয় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।



সহিংস রাজনীতি ছেড়ে জামায়াতকে হঠাৎ ‘শান্ত’ দেখতে পেয়ে ‘সমঝোতার’ অভিযোগের ডালপালা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গ নিচ্ছে জামায়াত। কিন্তু এসব বিষয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কেউই মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

 

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জামায়াতের পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি ইসলামী দেশগুলোর শীর্ষ নেতাসহ বিদেশে জামায়াতের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে বিগত বছরে সরকারের হাতে জামায়াতের নির্যাতিত ও নিহত নেতাকর্মীদের একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এর পেছনে জামায়াতের প্রধান অর্থ সহায়তা দানকারী সংস্থাগুলো অর্থ প্রদান করছে। বিশেষ করে সাঈদীকে রাজনীতির বাইরেও সম্পদ মনে করে জামায়াত। তাই তার বিষয়টি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখছে দলটি।

 

জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান রাজনীতির কর্মপন্থা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্কে না জড়ানোর পক্ষে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সে জন্যই জামায়াত কোনো সিন্ধান্ত নিতে পারছে না। তবে যে কোনো মূলে সাঈদীর বিষয়টি মাথায় রাখবে জামায়াত।

 

তৃণমূল থেকে এও দাবি এসেছে, জামায়াতের দুঃসময়ে সহযোগী মিত্র বিএনপিকে তারা পাশে পায়নি। তাই চলমান সময়ে বিএনপির সঙ্গে না থেকে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে অবস্থান করা। আর বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিলে সরকার বিএনপির চেয়ে জামায়াতের বেশি ক্ষতি করবে। এজন্যই দলটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছতে চায়।



এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জামায়াত নেতা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা অস্বীকার না করে বলেন, ‘এখনো এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শীর্ষ নীতি নির্ধারণী ফোরামই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’ তবে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের সংগঠনের দুঃসময়ে সহযোগিতার পরিবর্তে অবজ্ঞা প্রদর্শনের অভিযোগ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।



তিনি আরো বলেন, ‘মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ যে কয়জন শীর্ষ নেতা জেলে রয়েছেন তারা সবাই জামায়াতের মূল নাভী। তাদের ছাড়া জামায়াত অনেকটা পঙ্গু। তাই যে কোনো মূল্যে তাদেরকে খালাস করে আনতে জামায়াত চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’

 

তবে শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বেকায়দায় থাকা জামায়াত নিয়ে জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপি অনেকটা অস্বস্তি বোধ করছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ চায় জোট থেকে জামায়াতকে সরাতে। এজন্যই নিজেদের পক্ষে রাখতে জামায়াতের দিকে ক্ষমতাসীনরাও হাত বাড়িয়েছে।



তবে বাম নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে থামিয়ে দিয়ে সরকার জামায়াত এবং হেফাজতের সঙ্গে আপোসের পথ করে নিয়েছে। তাই সমঝোতার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়ার পূর্বেই ছাত্রলীগসহ সরকার পুলিশকে দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চকে দমিয়ে দিয়েছে, যাতে এ নিয়ে আর কোনো জোরালো আন্দোলন বা প্রতিবাদ না হতে পারে।

 

সূত্র জানাচ্ছে, মাওলানা সাঈদীর বিষয়টি নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ যাতে মাথাচাড়া কিংবা বাড়াবাড়ি না করতে পারে সে জন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। আর এতে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পথটি সুগম হতে পারে বলে মনে করছে সরকার পক্ষ।

 

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সঙ্গে বৈঠকে দশম জাতীয় নির্বাচন শেষে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। আর সেটাই ছিল মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিত। সে লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার আবার ক্ষমতায় আসার জন্য জামায়াতকে ‘কব্জা’ করতে চায়। এ সুযোগকেও কাজে লাগাতে চায় জামায়াত। তবে কেউ কেউ বলছেন, সরকারের সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে সমঝোতা হলেও মূলত এমন সমঝোতা জামায়াত রক্ষা করবে না। সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেবে তারা।

 

জামায়াত-আওয়ামী লীগ সমঝোতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। আর জামায়াতের পক্ষে কাজ করছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না।



এদিকে জামায়াতের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বিদেশ গমন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জোর আলোচনা। তিনি বিদেশে যাওয়ার পরদিনই ১৮ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে আবার কলাবাগান থানায় দুটি মামলা হয়েছে। সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যক্তি কী করে দেশের বাইরে গেলেন এমন প্রশ্ন সবার। তবে তাকে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত সহযোগিতা করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। ওই রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে করে গওহর রিজভীসহ তিনি এয়ারপোর্টে যান। তিনি বিদেশ থেকে সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশে ফিরবেন।



কিন্তু জামায়াতের অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্ম ও তার সহযোগী ছাত্র সংগঠন শিবিরের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে মোটেই ইতিবাচন দেখছেন না। তারা বলছেন, যে আওয়ামী লীগের কারণে দলের শীর্ষ নেতারা মিথ্যা অভিযোগে কারারুদ্ধ ও ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত, গুম, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার, সে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনোভাবেই আপোস নয়।



তবে বিএনপির আশঙ্কা, যদি আওয়ামী লীগ-জামায়াত সমঝোতা হয় তাহলে বিএনপিকে ছাড়াই আরো একটি বিতর্কিত নির্বাচন করার পাঁয়তারা করবে আওয়ামী লীগ।



মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী রাজি হননি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!