বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে থাইল্যান্ডস নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের হাতে সাগরে আটক হওয়া কয়েকশ বাংলাদেশিকে নিয়ে কূটনৈতিক টানাপড়েনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একের পর এক অভিযানে পাচার হওয়া কয়েকশ বাংলাদেশি উদ্ধারের ঘটনায় বিব্রত বোধ করছে থাইল্যান্ড সরকার। পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধও জানিয়েছে তারা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কারাগারে থাকা বাংলাদেশিদের তাড়াতাড়ি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং আপনাদের সরকারকে বলুন পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে।
এমন পরিস্থিতিতে পড়ে রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন ঢাকায় ঠিঠি জানিয়েছেন, বিষয়টির সমাধান না হলে থাই সরকারের কাছে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন হতে পারে। জানা যায়, সাগর পথে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে ট্রলারে চেপে রওনা দেয়া ২১৪ সদস্যের একটি দল গত ছয় মাস আগে থাইল্যান্ডের রয়েল নেভির হাতে আটক হয়।
তারা নিজেরা সবাই বাংলাদেশি বলে পরিচয় দিলেও থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকার কর্মকর্তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় চান। আটক হওয়াদের মধ্যে রোহিঙ্গারা আছেন বলে আশঙ্কা করছিলেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। এখন গত ছয় মাস ধরেও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া পুরো শেষ করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে দুই দফায় আরও ৩৬০ বাংলাদেশি আটক হয় থাইল্যান্ডসে। তারাও সবাই বাংলাভাষায় কথা বলেন।
দুই মাস আগে ধরা পড়া ২০৩ জনের বিষয়টি থাইল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দূতাবাসকে জানানো হয়েছে। দূতাবাস নাম ঠিকানা চায়, কিন্তু তারা এখনও সরবরাহ করতে পারেনি, বলেছে আটকরা বাংলায় কথা বলে। নাম-ঠিকানার পর আটকদের কনস্যুলার সেবা দেবে দূতাবাস। এরই মধ্যে সর্বশেষ ১৫৭ জন থাইল্যান্ডসের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আটক হয়েছে। রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে দালাল মারফত বাংলাদেশে থেকে যাওয়া ছয় শতাধিক বাংলাভাষী থাই পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় থাইল্যান্ডসের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সাগরপথে অবৈধভাবে ঢুকে পড়ার প্রবণতা বন্ধ করা দরকার। যারা এখন আটক আছেন তাদের বিষয়টিরও দ্রুত নিষ্পত্তি করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে থাইল্যান্ডসের দুশ্চিন্তা শেষ করা প্রয়োজন। মানবপাচারের প্রবণতা বন্ধ করতে সরকার সক্ষম না হলে ও দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ না নেয়া হলে থাইল্যান্ডসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গুরুতর সঙ্কটে পড়বে।
এর আগে দুদফায় চিঠি দিয়ে রাষ্ট্রদূত আটক বাংলাদেশিদের বন্দিত্বের দুর্দশা জানিয়েছেন। বেশ কিছু নাম ঠিকানাও পাঠিয়েছিলেন। সরকারকে রাষ্ট্রদূত জানান, রানোং ও ফাং এনগা এলাকার থাই ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে (আইডিসি) আটক বাংলাদেশি পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করতে এপিলে দূতাবাসের কনস্যুলার শাখার কর্মকর্তারা সেন্টার দুটি পরিদর্শন করেন। আটক ব্যক্তিরা আইডিসিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আইডিসি কর্তৃপক্ষ আটক হওয়াদের মানসম্মত খাবার সরবরাহ এবং চিকিত্সাসেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আটক হওয়া ব্যক্তিরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের এ শোচনীয় অবস্থা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে তারা প্রকৃত বাংলাদেশি কি না, জানতে নাম-ঠিকানা পাঠানো জেনে দেশে ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য মাঠপর্যায়ে পৌঁছতে দেরি হয়, তাই সরাসরি জেলাভিত্তিক তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আরও ২০০ আটকের কথা থাই সরকার জানিয়েছেন তবে নাম-ঠিকানা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ বছরের কিশোর থেকে শুরু বৃদ্ধও রয়েছেন।