DMCA.com Protection Status
title=""

মোদি সরকারের গতিবিধি দেখে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করবে আওয়ামী লীগ

alদৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ  ভারতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার আসার পর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিদায়ী কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বিজেপির নতুন সরকারের সঙ্গেও অব্যাহত থাকবে বলে দলের নেতারা জানান।

তবে ভারতের এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন কিছুটা হলেও সম্পর্কে প্রভাব পড়বে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, কংগ্রেসের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে বিজেপির সঙ্গে  সেই সম্পর্কে বেশ ঘাটতি থাকাই স্বাভাবিক।

নির্বাচনের এই ফলাফলে দলের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করছেন। তবে দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে অগ্রসর হবে বলে সূত্রগুলো আরও জানায়। এ জন্য কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর বেশি নির্ভরশীল হতে হবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

বিজেপি সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ক কেমন হবে সরকার কি কৌশল নিয়ে অগ্রসর হবে সে বিষয়টি সম্পর্কে এই মুহূর্তে কেউ সুনির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এ ব্যাপারে কথা বলতেও চাননি আওয়ামী লীগ নেতারা।

ভারতের নতুন সরকারের পরিকল্পনা, গতিবিধি ও কৌশল কি হবে তা ওই সরকার গঠনের পরই স্পষ্ট হবে। এ কারণে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা জানান।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর একজন সদস্য ও মন্ত্রী দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, এখনও সরকার গঠন হয়নি। নতুন সরকার গঠনের পর সেই সরকারের গতিবিধি দেখে আমরা আমাদের কৌশল নির্ধারণ করব। এখনই কোনো কথা বলা ঠিক হবে না।

দলের সভাপতি মণ্ডলীর আরেক সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভারতের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে বলেন, আমাদের উল্লসিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ভ‍ারতের জনগণ ‍তাদের পছন্দের দলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি  বলেন, ভারতের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানাই। এর বেশি আর কিছু বলতে চাননি তিনি।

বিকেলে আওয়ামী লীগের এ অনুষ্ঠান শেষে দলের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। গণতন্ত্রে জনমতের বিকল্প নেই। জনগণ যাকে রায় দিয়েছে আমরা তাকেই অভিনন্দন জানাই।

সদ্যসমাপ্ত ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। ৯ পর্বে ভোট গ্রহণের পর শুক্রবার একযোগে ফল ঘোষণা করা হয়। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে যাওয়া বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে দুপুরেই অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে ভারতের এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের পরাজয় এবং বিজয়ী দল বিজেপির নেতৃত্বে নতুন সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচিত।

চলতি বছর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা টানাপড়েনের মধ্যেও ভারত এই নির্বাচনে দৃঢভাবে সমর্থন জানায়। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গত ৫ বছর ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দ্বিপক্ষীয় বেশকিছু সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়। নতুন সরকারের সঙ্গে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়েও নানামুখী আলোচনা রয়েছে।

তবে সুসস্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে যে সম্পর্ক রয়েছে এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ অবস্থান নেয়।

উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের (সেভেন সিস্টার) বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আসছে বলে ভারত সরকার অভিযোগ করে আসছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ অবস্থান ও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় সেভেন সিস্টার আগের মতো অশান্ত নয় বলে ভারত সরকার মনে করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বার বারই বলে আসছেন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাস চালাতে দেয়া হবে না।

এ সব কারণে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার আওয়ামী লীগ সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে বিজেপির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার এই বিষয়গুলো কতটুকু মূল্যায়ন করবে সেটা দেখার বিষয় বলে মনে করছেন দলের নেতারা। বাংলাদেশের অন্যতম প্রচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে উপমহাদশের সব চেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সুসম্পর্ক দীর্ঘ দিনের।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবার ও গান্ধী পরিবারের সম্পর্ক এবং কংগ্রেসের কোনো কোনো নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার ব্যক্তিগত পর্যায়েও সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে এই সম্পর্কগুলো সহায়ক হিসেবে কাজ করে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।

এর পরও আওয়ামী লীগ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তিস্তার পানি চুক্তি। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই চুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগী হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাধার কারণে সেটা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্প্রতি এ অভিযোগ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সরকারে পরিবর্তন শুধু শুধু তিস্তা চুক্তিই নয়, অন্যান্য বিষয়ে অগ্রসর হওয়া কংগ্রেস থাকায় যতটা সহজ ছিল এখন ততটা সহজ হবে কিনা সেটাও আওয়ামী লীগের ভাবনায় রয়েছে।

তবে এসব বিষয়ে কেউ সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। বিজেপির সরকারের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান আরও বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ভালো মানে বিজেপি বা ভারতের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ তা নয়। বিজেপির নেতৃত্বে যে সরকার গঠন হতে যাচ্ছে সে সরকারের সঙ্গেও আমাদের একই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে আমরা আশা করি। নির্বাচনে ভারতের জনগণ যে রায় দিয়েছে সেই রায়ের প্রতি সম্মান ও নতুন সরকারকে স্বাগত জানাই। প্রতিবেশী ভরতের জনগণের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সেটা অব্যাহত থাকবে। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!