DMCA.com Protection Status
title="৭

বাংলাদেশ প্রশ্নে মোদির চেয়ে মমতা শক্তিশালী!

image_91640_0লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতে একটি জোট সরকারের পতন ঘটলো। এই পতনে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে দেশটির তরুন সমাজ। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আজ থেকে ১২ বছর আগে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অভিযোগ থাকলেও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, বছরের পর বছর ধরে দুর্ণীতি আর কেলেঙ্কারির জায়গায় মোদির অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তরুন সমাজকে অনেক বেশি আগ্রহী করেছে। যার কারণেই মূলত উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি আজ ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দেশটির রাজধানী দিল্লি থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত জনপ্রিয় একটি পত্রিকা মেইল টুডে’র সম্পাদক ভারত ভূষণ। ভারতীয় রাজনীতির কঠোর সমালোচক হিসেবেই তিনি পরিচিত। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির জিতে যাওয়া এবং ভারতীয় রাজনীতি কোন পথে এগুচ্ছে এবিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে একটি সাক্ষাতকার দেন তিনি। দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি  বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো।



প্রশ্ন: বিজেপির এই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কি আপনাকে অবাক করেছে?

ভূষণ: হ্যা, আমি অনেকটাই অবাক হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম বিজপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স কংগ্রেস জোটের মতোই ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বাস্তবে বিজেপি একাই পেয়েছে ২৮২টি আসন। আর কংগ্রেস মাত্র ৪৪টি আসন পাওয়ায় বিরোধী দলের অবস্থানও হারিয়েছে তারা। বিরোধী দল হতে গেলে নিম্নকক্ষের ৫৪৩ টি আসনের ১০ শতাংশ পেতে হয়। সেখানে কংগ্রেস মাত্র ৫৪টি আসনও পায়নি। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, উত্তর প্রদেশে বিজেপি একক যতগুলো আসন পেয়েছে সারাদেশ মিলিয়েও কংগ্রেস তা পায়নি।



প্রশ্ন: এই ম্যান্ডেট কি বিজেপি ধারন করে?

ভূষণ: এই ব্যাপারটা পুরোটিই আসলে টুয়েন্টি/টুয়েন্টি। কে বলতে পারে তারা কি ভূল করেছে? বিজেপির কর্মীরা বলছে যে, তারা যা করছে বা করেছে তাই ঠিক। তবে আমার মনে হয় নরেন্দ্র মোদি যে কায়দায় ভোট চেয়েছে এবং দেশকে পুর্নগঠনের কথা বলেছেন- জনগণ তাতেই তাদের ভোট দিয়েছে। আর এক্ষেত্রে মোদি যেমন সমাজতন্ত্রীদের ব্যবহার করেছে তেমনি জাত-পাত প্রথাকেও কাজে লাগিয়েছে। আমি বলতে চাই না যে, উত্তর প্রদেশে ধর্মকে কেন্দ্র করেই দাঙ্গা হয়েছে। তবে ভোটের রাজনীতির মাঠে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ভোটকে বিভক্ত করেছে বিজেপি। মোদি হিন্দুদের পবিত্র শহর বারানসী থেকেই ধর্মকে ব্যবহার করা শুরু করেছে। আর এই ধর্মীয় মেরুকরণ উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে দাঙ্গা লাগাতে সাহায্য করেছে। যেমন বিজেপি মুসলিম অধ্যুষিত আজমগড় শহরকে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। শুধু তাই নয় বিজেপি উত্তর প্রদেশে জাত-পাত প্রথা নিয়ে বছরের পর বছর হিংসা হানাহানি চালাচ্ছে। সোজা কথায় বলতে গেলে বিজেপি তাদের নির্বাচনী প্রচারে কিছু চটকদার বিষয় তুলে আনতে পেরেছে যা অন্যরা পারেনি।



প্রশ্ন: তাহলে কংগ্রেস এবং তার মিত্ররা কোথায় ভূল করেছে?

ভূষণ: কংগ্রেস পার্টি হিসেবে তাদের প্রথম দফায় বেশ ভালোই কাজ করেছিল। কারণ তাদের তৈরি ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলে সিভিল সোসাইটি এবং এনজিও কর্মীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনেকেই ছিলেন যারা বুদ্ধিবৃত্তিসহ অন্যান্য জায়গায় কংগ্রেসকে সহায়তা করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় কংগ্রেস অনেকটাই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল। আর এই আত্মবিশ্বাসের কারণে তারা খাদ্য নিরাপত্তা বিল নিয়েও সর্বশেষ ধরা খেয়েছে। এসব কারণেই কংগ্রেস ভারতের গরীব মানুষের কাছে কোনো দিশারি হিসেবে দাড়াতে পারেনি। শুধু তাই নয়, শহর অর্থনীতির ভিত নড়বড়ে হওয়ার কারণে কংগ্রেস মধ্যবিত্তদের ভোটও পায়নি। অথচ এই মধ্যবিত্তই ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নির্ধারণ করে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পার্টি মনমোহন সিংহের কোনো বিকল্প তৈরি করতে পারেনি। নিজের অবস্থান পরিস্কার না করে এবং জনগণের কাতারে না দাড়িয়ে রাহুল গান্ধী দশটি বছর নষ্ট করেছেন। তিনি হয়তো তার মায়ের উত্তরসূরী কিন্তু পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তিনি যোগ্য নন মোটেও। তিনি একদল এমবিএ করা কর্মীদের নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে। শুধু তাই নয় তিনি একবার সরকারে থাকতে চান আবার থাকতে চান না যা দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। একটি গণতান্ত্রিক দলের জন্য ধারাবাহিকতা অনেক বড় ব্যাপার যা বরাবরই ভারতের জনগণ দেখতে চেয়েছে। দুর্বল সরকার ব্যবস্থা, টেলিকম খাতে দুর্নীতি কেলেঙ্কারি, কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি, কয়লা খনি কেলেঙ্কারি এবং আবাসন প্রকল্প নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল কংগ্রেসের প্রতি। আর এসব কিছুই কংগ্রেসের ভোট কমানোর জন্য যথেষ্ট।



প্রশ্ন: সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে এবং তারা সংসদেও নেতৃত্ব দেবে। তাহলে কি ভারতের সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিমদের কোনো ভয়ের কারণ আছে?

ভূষণ: হিন্দু উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে মুসলিমদের শঙ্কার কারণ অবশ্যই আছে। তবে নতুন সরকারের উচিত তাদের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার পাইয়ে দেয়া। কারণ তারাও এই দেশেরই নাগরিক। তাদের কেন বিচারের প্রশ্নে ভাগ করা হবে। বিজেপি এবং অন্যান্য হিন্দু উগ্রপন্থীদের আস্ফালন স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলবে।



প্রশ্ন: নরেন্দ্র মোদি কি তার পার্টির মধ্যকার উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন? তার সেই অর্থে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

ভূষণ: ভারতের মতো একটা দেশ কখনোই একজন ব্যক্তির আদর্শের উপর ভিত্তি করে চলতে পারে না। আর বেশি দেরিও হবে না নরেন্দ্র মোদির এই সত্যি অনুধাবন করতে। তবে বিজেপির সুসমা স্বরাজ ব্যাতিক্রম। তিনি ছাড়া বিজেপির সবাই মোটামুটি উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী। সুসমা ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পর থেকেই মোদির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে

চলেছেন।



প্রশ্ন: ২০০২ সালের দাঙ্গায় মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে পুলিশের কি তদন্ত করা উচিত হবে?

ভূষণ: হ্যা, মোদি তার সমালোচনা সহ্য করতে পারে। এছাড়াও তিনি নিজেও ওই দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত অনেককে শাস্তি দিয়েছেন।



প্রশ্ন: মোদি কি ভারতের অর্থনীতির চাকা দ্রুত সচল করতে পারবেন? বিদেশি এবং দেশিয় বিনিয়োগকারীরা মোদির অর্থনীতি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাচ্ছে।

ভূষণ: অর্থনৈতিক খাতে মোদি অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে। বিশ্ব অর্থনীতির প্রতি তিনি যেমন নজর রাখেন তেমনি দেশিয় অর্থনীতির ক্ষেত্রেও। আর শেয়ার বাজারের উর্দ্বগতিও কিন্তু তাই বলে। বিনিয়োগকারীরা ডিজেল এবং গ্যাসের লাগামহীন মূল চাইবেন, অর্থনৈতিক পুর্নগঠন, রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারিকরণ, শ্রমআইন সংশোধন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আভ্যন্তরীন পরিবেশ সৃষ্টি, বীমা খাতের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি খেলাপি ঋণগুলোকে নস্যাত করতে চাইবে বিনিয়োগকারীরা। আর এই সুবিধা মোদি সরকারকে দিতে হবে। গত জুন-জুলাইয়ের দিকে মোদি যখন তার বাজেট পরিকল্পনা পেশ করেছিল তখনই তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়।



প্রশ্ন: পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশীরা মোদি সরকারের কাছে কি আশা করতে পারে?

ভূষণ: আমি ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো গঠনমূলক সম্পর্কে রাজি নই। কারণ পাকিস্তান নিয়ে ভারতের একমাত্র উদ্বেগের জায়গা হলো সন্ত্রাসবাদ। তাই পাকিস্তানের ব্যাপারে মোদি সরকার পেশিশক্তি খাটাতে পারে, এমনকি আক্রমনও করতে পারে। তিস্তা চুক্তি, অবৈধ অভিবাসী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি হবে মোদি সরকারের। যদিও মোদি অবৈধ বাংলাদেশি প্রশ্নে কিছুটা আক্রমনাত্মক। তবে তিস্তা ইস্যুতে পশ্চিমবাংলার সঙ্গে মোদিকে বৈঠকে বসতে হবে। আর এটা মোদির জন্য সহজ কাজ নয়। কারণ বাংলাদেশ প্রশ্নে মোদির চেয়ে মমতা শক্তিশালী। তাই বাংলাদেশ নিয়ে মোদি তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না।তবে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সাথে ভারতীয় কংগ্রেসের  দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্কের ইতিহাস থাকায় মোদী সরকার তাদের সাথে সাচ্ছন্দ বোধ করবে না বলেই মনে হয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!