দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ দশম সংসদ নির্বাচনের পর এবারই প্রথম রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সুশীল সমাজের একটি অংশও আট-ঘাঁট বেঁধে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি, ‘হটাও হাসিনা- বাঁচাও দেশ’। অন্যদিকে ড. কামাল হোসেন- ড.শাহদীন মালিকরাও ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপট থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পর্যবেক্ষকদের দাবি, ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এগোচ্ছে দুই বলয়ের রাজনীতি। বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি চাইছে অপহরণ- খুন ইস্যুতেই সরকার পতনের আন্দোলনে যেতে। অন্যদিকে, বর্তমান সরকারের নানান ব্যর্থতা ও জননিরাপত্তার ইস্যুতে জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার প্রতিফলন হিসেবেই আন্দোলনে নামতে চাইছেন ড. কামাল হোসেনসহ সুশীল সমাজের আরেকটি অংশ।
এই পরিস্থিতিতে ভীষণ চাপের মুখে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রথমত দলটি নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের অর্থনীতি জোড়াতালি দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই মত দিচ্ছেন। দেশে বিনিয়োগ কমছে- তা অস্বীকার করতেও পারছে না সরকার। এরই মধ্যে আগামী অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জি এস পি সুবিধা না দেয়াই সংকটে পড়ে গেছে সরকার। বহুলালোচিত পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়েও বিড়ম্বনায় সরকার। তাই এই মুহূর্তে বেশ বেকায়দায় আছে সরকার, তার উপর চলছে টিকে থাকার লড়াই। সাংবিধানিক ধারা অক্ষুন্ন রাখতে ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সম্ভব হলেও এর মেয়াদ কত দিনের তা নিয়ে জোর আলোচনা আছে।
তবে এই মূহুর্তে সরকারের মাথাব্যাথার সবচেয়ে বড় কারন দেশের আইন শৃখলা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়া।দলীয় নেতাকর্মীদের সীমাহীন দূর্নীতি এবং রাষ্ট্রের আইনশৃখলা বাহিনীর সদস্যদের গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করেছে।সুশৃংখল এসব বাহিনী দির্ঘদিন রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহৃত হতে থাকায় প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে এগুলোর কমান্ড স্ট্রাকচার।ফলে এই বিশাল বাহিনী নিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না সরকার।
আসলে গত পাচ বছরে সরকার চাকুরীতে ব্যপক হারে দলীয় নিয়োগ দেয়া এবং ৫ জানুয়ারীর পাতানো নির্বাচন সহ বিরোধী দল দমনে অন্যায় ভাবে তাদের যথেচ্ছ ব্যবহারে এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা মনে করি।দেশে বর্তমানে কার্যকর কোনো সরকার বিরোধী আন্দোলন না থাকলেও সরকার ব্যতিব্যস্ত আছে নিজ দলের লোকজনের বিতর্কিত কর্মকান্ডে।
তার সাথে যোগ হয়েছে সম্প্রতি ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতীয় কংগ্রেস দলের শোচনীয় পরাজয়।আওয়ামী লীগের দির্ঘদিনের পরিক্ষিত বন্ধু এই কংগ্রেস সরকারের একক সমর্থনেই আওয়ামী লীগ মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্র,ইউ সহ সকলের মতামত উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত ভোটার বিহীন নির্বাচন করতে পেরেছিলো এবং এখনও জনগনের মতামতের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন রয়েছে।অথচ কেনা জানে বাংলাদেশে অধিকাংশ জনগন একট অবাধ ,নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং তা হতে হবে অবিলম্বে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, দশম সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে আরেকটি আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টায় শুরু থেকেই সবচাইতে বেশী তৎপর রয়েছে পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নির্বাচন বর্জন করা রাজনৈতিক দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলনে নামতে ব্যর্থ হয়ে আসছিল। এবার, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক অঙ্গনে চেষ্টা চলছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সাথে সমন্বয় রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার।