তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় এতদিন ঝুলে ছিল ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট ইস্যুটি। কিন্তু এখন ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দ্রুত ট্রানজিট চুক্তি করে বিজেপি সরকারকে বাগে আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে।
এ পর্যায়ে সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিনিময়ে ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি আলোর মুখ দেখতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছেন। তবে বিতর্ক এড়াতে এককভাবে ভারতকে এ সুবিধা না দিয়ে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও ট্রানজিট চুক্তি করার দিকে এগোচ্ছে সরকার।
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী তিস্তা-ট্রানজিট সমস্যা নিরসন করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে মূল ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশের কাছে ভারতের প্রধান দাবি একটাই- যত দ্রুত সম্ভব ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট বাস্তবায়ন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, এ পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের দরকষাকষির সুযোগ আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর সূত্র জানা গেছে, ভারতে নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর নেতৃত্বে দুটি পৃথক প্রতিনিধি দল ভারত সফর করবে। তারা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনায় বসবেন। তখনই উঠে আসবে ট্রানজিট চুক্তি আর তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি।
এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা এখন ব্যস্ত ভারতের সঙ্গে ইস্যুভিত্তিক দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নিয়ে পরিস্থিতিপত্র তৈরিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি মাসের ১৪ মে দিল্লিতে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের ট্রানজিটের বিষয় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচনের কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে।
এই বৈঠকটি দ্রুত করার জন্য চেষ্টা চলছে। তবে চলতি বছরের মধ্যেই ট্রানজিট সম্পর্কে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ট্রানজিটের অংশ হিসেবে ভারতকে চট্টগ্রাম, মংলা ও পানগাঁ বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হবে। আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে সড়ক, রেল ও নৌপথ ব্যবহারের মাধ্যমে ৪ দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান পণ্য আমদানি-রফতানির সুযোগ পাবে।
সূত্র মতে, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান- এই ৪ দেশে ট্রানজিটের বিষয়টি চূড়ান্তভাবে পর্যালোচনা করছে সরকার। ট্রানজিট বিষয়ক কোর কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী কাঠামোগত চুক্তির খসড়ায় এ ৪টি দেশই স্বাক্ষর করবে। ওই কাঠামোগত চুক্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ট্রানজিট চালুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, সমতা ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ ইশতেহার এবং উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য কাঠামোগত চুক্তির আওতায় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা চুক্তি সংক্রান্ত এক সভা মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে। এতে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে সড়ক ও বন্দর উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
জানা গেছে, ভারত প্রচলিত নৌ-প্রটোকলের আওতায় আশুগঞ্জ বন্দর হয়ে আখাউড়া দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা দাবি করে। কিন্তু সমস্যা হয় আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কপথ নিয়ে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রচলিত নৌ-প্রটোকল ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রেড ও ট্রানজিটের আওতায় ভারত নৌপথে আশুগঞ্জ পর্যন্ত পণ্য পরিবহন সুবিধা পেলেও আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার হচ্ছে সড়কপথ।
সড়কপথ হওয়ায় ওইটুকু রাস্তা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় রয়েছে। ফলে প্রচলিত নৌ-প্রটোকলে আশুগঞ্জের পর ট্রানজিট সুবিধা অসম্ভব। ট্রানজিট সংক্রান্ত কোর কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রক্রিয়া শুরু করার পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট দেয়া সম্ভব নয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ট্রানশিপমেন্ট দেয়া যেতে পারে।
পর্যায়ক্রমে ট্রানশিপমেন্টের পরিধি বাড়ানো ও অবকাঠামো উন্নয়ন করে পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিটে যাওয়া সম্ভব। কমিটির সুপারিশে ট্রানজিটের জন্য মাশুল আদায় করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।