বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, আগামী বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য দলীয় নেতাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। তবে কীভাবে আরেকটি নতুন নির্বাচন হবে, তা স্পষ্ট করেননি বিএনপিপ্রধান।
সম্প্রতি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে আলাপকালে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। এর আগে গত ১০ মে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম— জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও একই কথা বলেন তিনি।
কংগ্রেস সরকারের ‘পতনের’ পর দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি আরও বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই গুঞ্জন রয়েছে, বিদেশিদের মধ্যস্থতায় ‘দ্রুততম’ সময়ে আরেকটি নির্বাচন হবে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলো এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বর্তমানকে বলেন, ‘জনগণ এ সরকারের ওপর খুবই রুষ্ট ও ক্ষুব্ধ। তারা নতুন নির্বাচন চায়। জনগণের বিশ্বাস, দ্রুত নির্বাচন হবে। আমরা জনগণের সেই বিশ্বাসকে লালন করি।’
মার্কিন ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী বিএনপি তাদের কর্মপন্থা তৈরি করছে। আগামী কয়েক মাস সরকারকে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের তাগিদ দেবে। এভাবে রোজা পর্যন্ত পার করবে দলটি। যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে দলটি আপাতত কঠোর কর্মসূচি থেকে বিরত আছে বলেও জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, রোজার পর ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করে সরকারকে চূড়ান্ত আল্টিমেটাম দেবেন খালেদা জিয়া।
আল্টিমেটামের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ না করলে হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি শুরু হবে। তখনই বিদেশিরা দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারকে চাপ দেবে। গত সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একান্তে কথা বলেন।
বৈঠকের এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন, আগামী ‘মাস ছয়েকের’ মধ্যে আরেকটি নির্বাচন হবে। সরকার বেশিদিন টিকতে পারবে না। প্রভাবশালী ওই নেতার সঙ্গে তার বাসায় আলাপকালে তিনি এ কথা স্বীকার করেন। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, কীসের ভিত্তিতে খালেদা জিয়া এ কথা বললেন?
জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তার কাছে অনেক খবর আসে। হয়তো সেই সব সূত্র থেকে তিনি খবর পেয়েছেন।’ তবে খালেদা জিয়া তাকে বিস্তারিত কিছু বলেননি বলে জানান তিনি। এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমি যেখানেই থাকি নির্বাচন হবে এটা নিশ্চিত। আপনারা প্রস্তুত থাকবেন।’ আমি যেখানেই থাকি— খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের অর্থ কী বোঝায় জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘ম্যাডাম মনে হয় ভাবছেন, সরকার তাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠাতে পারেন।
এ জন্য তিনি হয়তো এ কথা বলেছেন। এ ছাড়া আর কী হবে।’ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার সঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতা একান্তে বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকের বরাত দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিজেপি সরকারকে নিয়ে বাংলাদেশে আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করবেন তারা।
জানা গেছে, বিজেপি সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে দলের একটি প্রতিনিধি দল ভারত যেতে পারেন। শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানাতেই দলের কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতার সে দেশে যাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর দ্রুত খালেদা জিয়াও ভারত যেতে চান। এ সফরের লক্ষ্য— বাংলাদেশে আরেকটি নির্বাচনের জন্য বিজেপি সরকারের সহযোগিতা চাওয়া।