DMCA.com Protection Status
title="৭

ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যাঃ শিষ্যের হাতে গুরু বিনাশ

1_75074ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামকে গুরু বলেই সম্বোধন করতেন শিষ্য জাহিদ চৌধুরী। ফেনীতে একসময় একরামের এক নম্বর লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন জাহিদ। একরামের টেন্ডার থেকে শুরু করে সব ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতেন জাহিদই।

নানা কুকর্ম করলেও একরামের কারণে জাহিদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেত না কেউ। একরামের ইউনিয়ন আনন্দপুরেই তার বাড়ি। একরামের বাড়ির ছাদে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে বাড়িটি। জাহিদের খুব ইচ্ছে ছিল আনন্দপুরের ইউপি চেয়ারম্যান হবেন। সে কথা গুরুর কাছে একাধিকবার বলেও ছিলেন জাহিদ।

কিন্তু বাদ সাধেন একরাম। এলাকায় খারাপ ইমেজ থাকায় জাহিদের পরিবর্তে একরাম আনন্দপুরে চেয়ারম্যানের মনোনয়ন দেন তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার হারুন মজুমদারকে। সৃষ্টি হয় গুরু-শিষ্যের গুরুতর বিরোধ। এরই জেরে জাহিদ হাত মেলান ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সঙ্গে।

anamul-0120140522150959গত উপজেলা নির্বাচনে নিজাম হাজারীর পথ ধরে প্রকাশ্যে একরামের বিরোধিতাও করেন জাহিদ। হাত মেলান উপজেলার বিএনপি প্রার্থী গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী মিনারের সঙ্গে। কিন্তু অন্যভাবে এ বিরোধিতার জবাব দেন একরাম। নির্বাচনী ডামাডোলে ঢাকা থেকে ফেনীর একসময়ের আলোচিত রাজনীতিক জয়নাল হাজারীকে হেলিকপ্টারে করে ফুলগাজীতে নিয়ে সবাইকে চমকে দেন একরাম। ওই নির্বাচনে তিনি জয়ী হন বিপুল ভোটে।

এতে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এমপি নিজাম হাজারী ও জাহিদরা। নির্বাচনের সময়ই একরামের গাড়িতে কয়েক দফা হামলা চালান জাহিদ গ্রুপ। একসময়ের এক নম্বর শিষ্য এ জাহিদই একরাম হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। জাহিদ ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের চৌধুরীবাড়ির মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে। শহরের একাডেমি সড়ক কেন্দ্র করেই ছিল জাহিদের সব অপরাধ কর্মকান্ড। অস্ত্র আর মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন জাহিদ। সেজন্য জাহিদকে নির্বাচনে দাঁড় করাতে চাননি একরাম।

এসব নিয়েই একরাম-জাহিদ বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ফেনীর বারাহীপুর থেকে একরাম হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী জিহাদকে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। ফেনীর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সামছুল আলম সরকার বলেন, জাহিদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর তাকে সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিভিন্ন সময় সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সাতজনসহ আট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে শনিবার দুপুরে তাদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়।

আটক আসামিরা সাংবাদিকদের সামনেই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ চৌধুরী ও আবদুল্লা হিল মাহমুদ শিবলুর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। তারা আরও বলেন, ঘটনার দিন জাহিদ তাদের পাঁচটি পিস্তল দেন। অপারেশনের পর সে অস্ত্র জাহিদ তাদের কাছ থেকে বুঝেও নেন। হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীরা গ্রেফতার হওয়ার পর হোতাদের নাম বেরিয়ে আসে। তাই শনিবার দুপুরে ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লা হিল মাহমুদ শিবলু নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একরামুল হককে হত্যার পরিকল্পনা করেন জিহাদ চৌধুরী। ঘটনার আগের দিন ১৯ মে রাতে ফেনী শহরের সালাম জিমনেশিয়ামের একটি কক্ষে বসে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পুরো ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ, শিবলু, জিয়াউল আলম মিস্টার ও জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল। অন্যদিকে মূল অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন এমপি নিজাম হাজারীর মামাতো ভাই আবিদুল ইসলাম ও রুটি সোহেল। হত্যার এক সপ্তাহ আগে থেকে ঘটনাস্থলে মহড়া চালান খুনিরা।

সব আয়োজন শেষে ২০ মে একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়া সাতজন জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

 

র‌্যাব ও পুলিশের কাছে তারা বলেছেন, কারা একরাম হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত, তা আগে থেকেই জানতেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। ফেনী পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিজাম হাজারীসহ আওয়ামী লীগের প্রায় একডজন ও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে একরাম হত্যার অভিযোগ ওঠায় তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

 

৯ আসামি আট দিনের রিমান্ডে : একরাম হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ও মূল পরিকল্পনাকারী এবং ফেনী পৌরসভা কাউন্সিলর আবদুল্লা হিল মাহমুদ শিবলুসহ ৯ জনের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন আবিদুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, কাজী শাহ আনান মাহমুদ, মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, মোহাম্মদ শাহ জালাল উদ্দিন শিপন ও হেলালউদ্দিন।

 

আলাউদ্দিন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ : একরামুল হক হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত আলাউদ্দিনের বসন্তপুর গ্রামের বাড়িতে রোববার দুপুরে অগ্নিসংযোগ করেছে একরাম সমর্থকরা। পরে একরাম সমর্থকরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে সিএনজি, অটোরিকশা ভাংচুর করে বিক্ষোভ করে।

 

ফুলগাজীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল : একরাম হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতার দাবিতে আজ দ্বিতীয়বারের মতো সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে উপজেলা ছাত্রলীগ। রোববার দুপুরে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসিফ মজুমদার হরতাল পালনের ঘোষণা দেন।

 

উপজেলা চেয়ারম্যানদের মানববন্ধন : একরাম হত্যার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে রোববার দুপুরে ফেনীর ট্রাঙ্ক রোডে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা মানববন্ধন করেন। এ সময় ফেনী সদর, সোনাগাজী, দাগনভূঞা, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ার সব উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম বলেন, খুনিরা যত বড় শক্তিশালীই হোক, দলের যত বড় পদ-পদবিধারী হোক, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!