DMCA.com Protection Status
title="৭

কে এই নীলা?

image_91698_0দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ  এখন মহিলা থানা হাজতেই কাটছে তার সময়। তিনি নীলা। নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনের অপহরণ ও খুনের ঘটনার প্রধান আসামী নূর হোসেনের তথাকথিত বান্ধবী তিনি, একসময় এসি গাড়ি ও এসি রুমে থাকা ঢাকার হাই সোসাইটি দাবড়ে বেড়ানো নীলা।

নিজের সৌন্দর্যকে পুঁজি করে অল্প দিনে অঢেল টাকার মালিক বনে যাওয়া নীলা কথিত নূর হোসেনের স্ত্রী হয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন মাদক ব্যবসায়। নূরের মাদক-রাজত্বের ছোবলে নীলা কখন যে মাদক ব্যবসায়ী বনে যান, তা ফাঁস হয় সিদ্ধিরগঞ্জের জুয়েল হত্যা মামলায় তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর।

 সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মঙ্গলবার দেখা যায় মহিলা হাজতের ফ্লোরে শুয়ে আছেন নীলা। মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল হত্যার অভিযোগে সোমবার সকালে তাকে আটক করা হয় ওই মামলায় গ্রেফতার এক আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে। গ্রেফতারের পর হাজির করা হলে নীলার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তার এখন রিমান্ড চলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নীলাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলেই তিনি কেঁদে ফেলছেন। তার মুখে শুধু একটি কথা, 'আমি কিছু জানি না।' পুলিশের রান্না করা খাবার খাচ্ছেন তিনি।

neela_0যে হলুদ জামা পরা অবস্থায় নীলাকে গ্রেফতার করা হয়, সেই পোশাকেই ছিলেন নীলা। মঙ্গলবার সকালে দুটি পরোটা ও ভাজি খেতে দেওয়া হয় তাকে। পানি খাওয়ার জন্য দু-চারটি বোতল রয়েছে হাজতে। গ্রেফতারের পর থেকে নীলার সঙ্গে এ পর্যন্ত তার স্বজন-পরিজন কেউ সাক্ষাৎ করতে আসেনি। অবশ্য রিমান্ডে থাকা কারও সঙ্গে কোনো স্বজন বা কেউ দেখা করার নিয়মও নেই। তবে নীলার সঙ্গে সাক্ষাতে ইচ্ছুক কেউই মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আসেনি বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে নীলার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দিয়েই ঢাকার হাই সোসাইটি ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন নীলা। নূর হোসেনও স্বার্থ হাসিলের জন্য নীলাকে ব্যবহার করতে ছাড়েননি। এলাকাবাসী জানান, নিজ সৌন্দর্যকে পুঁজি করেই মূলত কাউন্সিলর নীলা অল্প সময়ের মধ্যে নূর হোসেনকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেন। সাবেক স্বামীর বাসস্ট্যান্ডের ইজারা ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বাহানায় নূর হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এলাকায় চাউর আছে, সুন্দরী নীলাকে নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে নূর হোসেন ব্যবহার করতেও দ্বিধা বোধ করেননি।

কেন্দ্রীয় শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পার্টিতে নীলা নিয়মিত 'অতিথি' থাকতেন। সাজসজ্জা, বেশভূষা ও কাউন্সিলর পরিচয়ের কারণে তার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করতে পারতেন না কেউই। তবে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে যাওয়ার পর নীলার সম্পর্কে ধারণা পাল্টেছে অনেকের। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিদ্ধিরগঞ্জের মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামিদের জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

10368439_10202063312494888_6513744067315006607_nএর পরই তার সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জের গডফাদার খ্যাত অপর কাউন্সিলর নূর হোসেনের সখ্য ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। মূলত তখন থেকেই নীলা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। নোয়াখালীর উত্তর মাসুদপুর গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে জুয়েল ছিলেন নীলার প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদার। জুয়েলের মাধ্যমে নীলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফেনসিডিল এবং চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন। এভাবে ব্যবসা করতে গিয়ে নীলার কাছে জুয়েল ৪০ লাখ টাকা পাওনা হয়ে যান।

এ টাকা জুয়েল চাইতে গেলে উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এর পরই নীলা তার খুচরা মাদক বিক্রেতা মনা ডাকাত, সোহেল, কালা সোহাগ ও সোয়েবকে নিয়ে জুয়েলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার জন্য তাদের দুই লাখ টাকাও দেন নীলা। তার নির্দেশ ও পরিকল্পনায় ঘাতকরা গত বছরের ২৫ অক্টোবর রাতে জুয়েলকে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুঁড়ি এলাকায় জবাই করে হত্যা করে। হত্যার পর ঘাতকরা দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে দেয় পাশের পুকুরে। কিন্তু নীলার মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা সিদ্ধিরগঞ্জের কেউ ঘুণাক্ষরেও জানত না। এ ছাড়া নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নীলার ব্যাপারে কেউ নাকও গলাত না।

নীলার  আসল পরিচয় হচ্ছে, জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর স্বামী সাদেকের শিমরাইল বাসস্ট্যান্ডের ইজারা নিয়ে নূর হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন নীলা। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর দায়িত্ব নেওয়ার পর নূর হোসেনের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেড়ে যায়।

ওই সময় নূরের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে নীলার ওপর। নানা কৌশলে নূর পরিকল্পনা অাঁটেন তাকে 'রক্ষিতা' করার। নূরের কারণে স্বামীকে তালাকও দেন নীলা। নূর তাকে আলাদা বাড়ি-গাড়ি দিয়ে 'রাজার হালে' রাখতে চেয়েছিলেন। এলাকার প্রায় সবাই নীলাকে নূরের স্ত্রী জানলেও তাদের মধ্যে স্বীকৃত বা বৈধ কোনো সম্পর্ক ছিল না।

, নূর হোসেন বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় ২০১৩ সালের ২৮ মে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সামনে আত্দহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন নীলা। কিন্তু ওই সময় পুলিশ দেখে ফেলায় আত্মহত্যা করতে পারেননি। পরে থানার সেকেন্ড অফিসার রেজাউল তাকে বুঝিয়ে বাসায় ফেরত পাঠান।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!