বিভিন্ন ইস্যুতে, বিশেষ করে- নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনের অপহরণ-খুনের ঘটনা, ফেনীর ফুলগাজীতে একরামুল হত্যাকাণ্ড এবং লক্ষ্মীপুরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেশ নাজুক অবস্থানে পড়ে গেছে সরকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
৫ই জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন মেয়াদে ক্ষমতা নেওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় আওয়ামী লীগ এখন রীতিমত কাঠগড়ায়। দেশজুড়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিবিহীন দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামোতে পতিত দলের নেতা-কর্মীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারের উন্মত্ত খেলায় মত্ত। রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণের উন্মাষিক আস্ফালনে দলীয় নেতা-কর্মীরা একপক্ষ আরেক পক্ষকে গুম, অপহরণ অবশেষে পৈশাচিক কায়দায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার খেলায় মেতেছে।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর মোজাফফর হোসেন পল্টুর মতো ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা বা নূরুল ফজল বুলবুলদের মতো সম্ভাবনাময়ী নেতৃত্বকে দল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ছাড়াই বিদায় জানিয়েছিল। এভাবে বিভিন্ন সময় কেন্দ্র ও জেলার নেতৃত্বে অনেক নেতা-কর্মীকে দল শাস্তি দিলেও লাশের তরীতে ভাসা আওয়ামী লীগ আজ নেতা-কর্মীদের ওপর কর্তৃত্ব এতটাই হারিয়েছে যে, লুটপাটের চারণভূমির নিয়ন্ত্রণ মুঠোয় রাখতে গিয়ে রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নিতে পারছে না, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুরের ঘটনাগুলো চারদিক থেকেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, ডেকে এনেছে সংকটাপন্ন পরিস্থিতি।
নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুরের ঘটনাগুলোতে রীতিমতো কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের নেতা-কর্মীরাও পড়েছেন চরম অস্বস্তিতে। এত দ্রুত একের পর এক বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাবে তা কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাননি। শুধু নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুরের রক্তাক্ত ঘটনাবলিই নয়, সরকারের ভেতরে-বাইরেও চলছে নানা রকম জটিলতা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ববান কেউ কেউ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, দল ও সরকারের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে চলছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই গভীর সংকটে পড়বে আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জে নৃশংসতাসহ নানা কর্মকাণ্ডেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে সরকারি দল।
সাত অপহরণকারী চিহ্নিত হলেও অপহরণ ও খুনের মূল পরিকল্পনাকারী এখনো আড়ালে। এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে নূর হোসেন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নানা পর্যায়ের আলোচিত নেতারা। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া সাবেক র্যাব কর্মকর্তা কর্নেল তারেক সাঈদ নিজেও আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা। অন্যদিকে টেলিসংলাপ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের জড়িয়ে পড়া নিয়েও নানা বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছে।
এদিকে সাত হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে মেয়র বানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের চিঠি নিয়েও দেশজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে গত কয়েক মাসে লক্ষ্মীপুর জেলা যেন খুনের জেলায় পরিণত হয়েছে। ওই অপরাধ সাম্রাজ্যে প্রতিদিনই বাড়ছে লাশের সংখ্যা।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুনোখুনির শিকার হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই। অথচ সব ক্ষেত্রেই সুফল যাচ্ছে বিরোধীদের ঘরে। কোনো ক্ষেত্রেই বিচার নেই, সান্ত্বনাও পান না স্বজনরা। দলীয় নেতা-কর্মী হারিয়ে কোথাও কোথাও হতাশা গ্রাস করে চলছে। ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলা জনপদেই নয়, খোদ ঢাকা মহানগরীতেও দলীয় চাঙ্গাভাব মিইয়ে যেতে শুরু করেছে।
যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকজন যুবলীগ নেতা লাপাত্তা হয়ে যান। তারপর থেকে যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ সর্বত্রই ঝিমিয়ে পড়েছে। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের টেনে তোলার উদ্যোগ নেই কোথাও, বরং অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টায় পুরো সংগঠনকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হচ্ছে।