দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ আওয়ামী লীগ ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোদি সাহেবের (নরেন্দ্র মোদি) কাছে যে চিঠি দিয়েছে তা মিথ্যাচারে পূর্ন বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মোদি সাহেবের কাছে চিঠি দিয়ে লিখেছে, “আপনিও দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, আমিও দুই তৃতীয়াংশ ভোটে নির্বাচিত হয়েছি।” মোদি সাহেব তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ তো দূরের কথা কোনো ভোটেই নির্বাচিত হয় নাই। আওয়ামী লীগের এই মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে। আমরা আর মায়ের চোখে কান্না দেখতে চাই না। হত্যা গুম বন্ধ করে আওয়ামী লীগকে বিদায় করতে হবে।’
গুম, অপহরণ এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে মুন্সীগন্জের ধলেশ্বরী নদীর তীরে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই। এসময় বিএনপি সরকার গঠন করলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার দাবি জানায় স্থানীয় নেতারা।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এতোদিন জনগণ কেঁদেছে এবার আওয়ামী লীগকে কাঁদতে হবে। আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে হাতজোড় করতে হবে। কারণ তারা অপরাধ করেছে। অনেক অপরাধের ক্ষমা হয় কিন্তু এমন অপরাধ আছে তার কোনো ক্ষমা হবে না।’
শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সময় নষ্ট না করে, দেরি না করে, অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দেন। এমন সময় আসবে চেলাদের আর পাশে পাবেন না। আমরা আপনাকে সম্মান দেবে। আমরা আপনার পাশে থাকবো।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ বিএনপির ঘাঁটি। এখানকার জনগণ চেনে শুধু ধানের শীষ। তাই এখানকার একটি আসন কেটে নেয়া হয়েছে। এখান থেকে বিএনপির কোনো নেতা কখনো ফেল করতো না। আওয়ামী লীগের কারসাজিতে সবাই ফেল করেছে। এবারও ডেকেছিল কয়েকটি আসন দেয়ার জন্য। কিন্তু আমরা ভাগ-বাটোয়ারার রাজনীতি করি না। আমরা বলেছি জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করবো।’
‘৫ জানুয়ারি এই দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনের দিন সব কেন্দ্র ফাঁকা ছিল। মানুষের কোনো লাইন ছিল না, ভীড় ছিল না। কেন্দ্রের সামনে কোনো মানুষ ছিল না, খবরের কাগজে দেখেছেন সেখানে কুকুর বসেছিল। জনগণ তাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ বলেছিল সকল দলের নির্বাচন হলে তারা নির্বাচনে যাবে।’ বলেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘এই সংসদটা পুরোপুরি অবৈধ, সরকারও অবৈধ। এই সংসদ জনগণের টাকায় চলে, এই সংসদে মিথ্যাচার আরা গালাগালি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বাংলাদেশে শুধু সন্ত্রাস চলছে, টেন্ডারবাজি চলছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ দখলবাজি করছে, সবকিছু ফ্রি স্টাইলে চলছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি জিনিস কোনো নীতি ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে। এ জন্যই দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। দুর্নীতিবাজ সরকার ক্ষমতায়। এরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে খুন, গুম শুরু করছে। ইলিয়াস আলী জোর গলায় কথা বলতো সেজন্যে তার ড্রাইভারসহ তাকে গুম করা হলো। গুম, খুন হলো আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড। এগুলো আওয়ামী লীগের জন্য নতুন কিছু নয়। তরুণ প্রজন্ম এসব জানে না। আওয়ামী লীগের নীতি হলো জবরদস্তি করে ক্ষমতায় টিকে থাকা।’
দুর্নীতি ও গুম খুনের মহোত্সব চলছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক মানুষ গুম খুন কওে চলছে। এসব তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগের নীতি হচ্ছে জোর করে দখল করা,অন্যায়ভাবে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চোর ও খুনিদের নিয়ে চলে। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ এমপিরাই চোর। এরশাদ একজন খুনি। তিনি কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হন। তার বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ কাউকে সম্মান দিতে জানে না। নোবেল বিজয়ী ইউনূসকে অসম্মান করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তার সম্মান ফিরিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের দল নয়, তারা ধর্মনিরপেক্ষ দল দাবি করলেও তারা তা না। তাদেও সময়ে কোনো ধর্মেও মানুষই নিরাপদ নয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে এবং পৌর মেয়র ইরাদত হোসেন মানুর পরিচালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গাজীপুরের মেয়র আব্দুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এম এ মান্নান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্মমহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিক্ষা সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, যুব সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণশিক্ষা সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সরফত আলী সপু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের ভইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।