শিক্ষাবিদ, লেখক ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমি এখানে একা একা বসে থাকব, কিন্তু এখানে এসে বুকটা ভরে গেছে। আমি দেখলাম, আমার সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম আছে। তারা আমার আগে থেকেই আন্দোলন করার চেষ্টা করছে। আমি আন্দোলন করতে পারি না। আমি তাদের সাথে আছি।’
আজ শুক্রবার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শেষ করার আগে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এ কথা বলেন। এ সময় তিনি অংশগ্রহণকারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সকাল আটটা থেকে চার ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় সেখানে তাঁর স্ত্রী ইয়াসমীন হক, ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, খুদে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল আটটার দিকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। পরে তাঁদের সঙ্গে অন্যরা যোগ দেন।
সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে ভিজেই কর্মসূচি চালিয়ে যান তাঁরা। গান গেয়ে, স্লোগান দিয়ে ও বিভিন্ন গণমাধ্যমকে সাক্ষাত্কার দেন তাঁরা ।
‘প্রশ্ন ফাঁস মানি না, মানব না’, ‘ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন, ধ্বংস হতে দেব না’, ‘একেকটি প্রশ্ন ফাঁস মানে একেকটি স্বপ্নের মৃত্যু’, ‘প্রশ্ন ফাঁসের দায় সরকারকে নিতে হবে’ এসব প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁরা প্রতিবাদ জানান।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার যদি প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ব্যবস্থা না নেয়, তবে আগামী শুক্রবার আবার শহীদ মিনারে অবস্থান করা হবে।
বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে তুলে ধরেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
তাঁর লেখার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পাল্টা নিবন্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে একে সাজেশন হিসেবে চিহ্নিত করেন। এর পরই ২৩ মে একটি নিবন্ধে শহীদ মিনারে বসে প্রতিবাদ জানানোর ঘোষণা দেন জাফর ইকবাল।
জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশ আজ সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিবাদ না করলে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় হয়ে যাবে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন জড়িত। তা না হলে যারা এটা ফাঁস করছে, তারা এত সাহস কী করে পায়?’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী দীপান্বিতা কিংশুক বলেছে, ‘এটা শুধু জাফর ইকবাল স্যারের দাবি নয়, এ দাবি আমাদেরও। এটা শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক ও নৈতিক একটা চাপ সৃষ্টি করে। প্রশ্নপত্র কেন ফাঁস হবে?’
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনপ্রমুখ।