DMCA.com Protection Status
title="৭

দলের আলোচনা সভায় দর্শক সারিতে বেগম খালেদা জিয়াঃ বিএনপিকে ভুল কমানোর পরামর্শ বি. চৌধুরীর

download (3)শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদাত্বার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মূল মঞ্চে না গিয়ে দর্শক সারিতে বসে বক্তব্য শুনেছেন।

এই আলোচনা সভায় যোগ দেয়া থেকে শেষ বক্তা পর্যন্ত পৌনে এক ঘণ্টা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আলোচকদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ইতিহাসের অংশ দাবি করে বলেন, ‘মিথ্যাচার করে মানুষের হূদয় থেকে জিয়ার দর্শন ও আদর্শ মুছে ফেলা যাবে না। এটা আওয়ামী লীগের ব্যর্থ অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বৃহস্পতিবার বিকালে এই আলোচনা সভায় বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, জিয়া দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রতিটি সমস্যার সমাধান করেছেন। বিএনপির মতো দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন করা সহজ নয়। বিএনপিকে ভুল কমিয়ে দিতে হবে। জনগণকে জাগাতে হলে আগে আপনাদের জাগতে হবে। তারপর যখন তাদের কাছে যাবেন, দেখবেন জনগণ পাগল হয়ে যাবে। দলের নেতাকর্মীদের জিয়ার দর্শন অনুসরণ করার পরামর্শও দেন প্রতিষ্ঠাতা এই মহাসচিব।

দলের প্রথম মহাসচিব বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘জিয়া ছিলেন একজন সফল সংস্কারক। দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নে তার নেয়া নানা উদ্যোগ দেশকে সামনের দিকে নিয়ে গেছে।

যারা জিয়াকে কলঙ্কিত করছে, তারা স্বাধীনতা ও ইতিহাসের শত্রু।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জিয়াকে যারা কলঙ্কিত করছে, তাদের ভয় পেলে চলবে না। তাদের কৃপা করতে হবে। জিয়ার দর্শন অনুসরণ করে আপনাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’ দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা ফোরাম—সার্ক গঠন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে বি. চৌধুরী বলেন, ‘তিনি একজন সৈনিকই ছিলেন না, একজন সংগ্রামী মানুষও ছিলেন।

’ এই আলোচনা সভায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে আন্দোলনেই সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছে দলটির নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার অবৈধভাবে জগদ্দল পাথরের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় চেপে বসে আছে। আজ দম বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তারা সৃষ্টি করেছে। এই থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সরকার হটাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী ইতিমধ্যে সরকারকে বলেছেন, সঙ্কট উত্তরণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় তাদের (সরকার) বাধ্য করতে জনগণকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ শুক্রবার জিয়ার ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।

১৯৮১ সালের এই দিনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন। বিএনপি এই দিবসটিকে শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালন করে। দিবসটি পালনে তারা ১৪ দিনের কর্মসূচি করছে।

সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, প্রথম থেকেই শহীদ জিয়াকে খাটো ও ছোট করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখনও তা চলছে। ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করলে তার আদর্শ মুছে যাবে।

কিন্তু ৩৩ বছরেরও জিয়ার নাম মানুষের হূদয় থেকে কেউ মুছে ফেলতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাদের রাজনীতি থেকে বাইরে রাখতে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। কারণ তারা জিয়ার দর্শন ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পতাকা তুলে ধরছেন।

দেশনেত্রীর হাতে স্বাধীনতার পতাকা আর তোমাদের (প্রতিপক্ষের) হাতে দাসত্বের শৃঙ্খলিত পতাকা। জিয়াউর রহমান নিয়ে আওয়ামী লীগের মিথ্যাচারের জবাবে তিনি বলেন, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যার লেখা বইয়ে প্রমাণিত হয়ে গেছে, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। তিনি বইতে লেখেছেন, তার বাবা যুদ্ধ শুরুর আগে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণার খসড়া ও একটি টেপ রেকর্ডার নিয়ে গিয়েছিলেন।

শেখ মুজিবুর রহমান তাকে (তাজউদ্দীন আহমদ) বলেছেন, যাও নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও। ২৭ মার্চ হরতাল ডেকেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মিথ্যা কথা মানুষ আর বিশ্বাস করে না। তাদের অবস্থাটা হয়েছে— বাঘ আসছে, বাঘ আসছে, গল্পের মতো।

র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির দাবি পুনর্ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকে র্যাবের সংস্কারের কথা বলছেন। এই সংস্কারে লাভ হবে না। কারণ আওয়ামী লীগ এই সংস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। যে র্যাব মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। তারা মানুষের জীবন হরণ করতে জানে, তার কোনো প্রয়োজন নেই।’

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদ বলেন, জিয়া ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা নেতা। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গায়ের জোরে সরকার দেশ চালাচ্ছে। তারা যত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবে, তাদের পরিণতি নমরুদ-ফেরাউনের মতো হবে। এ থেকে তারা মুক্তি পাবে না। সরকারকে বলব, নিজের ভালো চাইলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, জিয়া দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের অপশাসনের কারণে দেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্র নেই। আমাদের সেই গণতন্ত্র আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারকে বলব, আওয়ামী লীগের কল্যাণের জন্য সব দলের অংশগ্রহণের একটি নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিএনপির আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, জমিরউদ্দিন সরকার, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!