নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া আটজনের মধ্যে তিনজনই হলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্ঠজন। তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। আইভীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এ আসনের সাবেক এমপি এসএম আকরাম, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। অন্যদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান ইতিমধ্যে আইভীর সমর্থন চেয়েছেন। একই সমর্থন চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন এসএম আকরাম। আগামীকাল রবিবার মনোনয়নপত্র বাছাই। আর মনোনয়পত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ জুন। ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৬ জুন।
মূলত প্রত্যাহারের দিনই চূড়ান্ত হবে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে কে প্রার্থী হবেন? তিনজনই থাকবেন নাকি তিনজনের মধ্যে চূড়ান্ত হবেন একজন সেটা নিয়ে এখন চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে অটুট আছেন তিনজনই।
উপনির্বাচনের জন্য মোট ১৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের মধ্যে আটজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তারা হলেন, জাতীয় পার্টি মনোনীত বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, সাবেক এমপি ও নাগরিক ঐক্যের নেতা এসএম আকরাম, জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, ইকবাল সিদ্দিকী, বিএনএফ নেতা আবু হামিদুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও অ্যাডভোকেট মামুন সিরাজুল মজিদ। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেননি বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, সম্প্রতি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়া শামীম মিয়া, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএম আরাফাত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদ আহমেদ সুমন।
আনোয়ার হোসেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও তিনি প্রার্থী হয়েছে স্বতন্ত্র হিসেবে। কারণ এ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বশূন্য রয়েছে। নেতাকর্মীদের অনুরোধেই আমি প্রার্থী হয়েছি। এ আসনে নৌকা ডুবে গেছে। ডুবন্ত নৌকার ডুবুরি হিসেবেই নেতাকর্মীরা আমাকে বেছে নিয়েছে। আমি শেষতক যাই ঘটুক প্রার্থী থাকবো।’
অন্যদিকে এসএম আকরাম আওয়ামী লীগ ছেড়ে এখন নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জেলা আহ্বায়ক থাকা সময়েই আইভীর পক্ষে কাজ করেন। নির্বাচনে আইভীর বিজয়ের পরদিন ৩১ অক্টোবর আকরাম দল ও পদ থেকে অব্যাহতি নেন। আকরামের প্রত্যাশা নির্বাচনের প্রচারণায় তিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে পাশে পাবেন।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়কও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ২০০৩ ও ২০১১ সালের নির্বাচনে আইভীর পক্ষে ছিলেন। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের উপদেষ্টাও আইভী। রাব্বির ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শামীম ওসমান ও প্রয়াত নাসিম ওসমানসহ তাদের ছেলেদের দায়ী করে আসছিলেন রাব্বি ও আইভী। রাব্বি বলেছেন, ‘সংসদে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরাটাই হবে আমার কাজ। সন্ত্রাস, মাদক, জবর দখল আর টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধেই হবে আমার লড়াই।’