আর ক’দিন পরেই ব্রাজিলে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা। দুনিয়া কাঁপানো ওই আসরে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, জার্মানি, ইতালিসহ প্রায় সব দেশের সমর্থকদের গায়েই থাকবে তাদের প্রিয় দলের জার্সি, যা তৈরি করেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে অংশ নেয়া সকল দলের জার্সিই রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা’র অনুমোদন নিয়ে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ না পাওয়া দেশগুলোও তাদের ফুটবল ফানদের জন্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে বিভিন্ন দেশের জার্সি।
সব মিলিয়ে আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ উপলক্ষ্যে চার হাজার কোটি টাকার জার্সি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র তথ্য মতে, কেবল জার্সিই নয়, বিশ্বকাপে অংশ নেয়া বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়রা পড়েন এমন মোজা, লগো সংবলিত ক্যাপ, ট্র্যাকসুটও তৈরি করে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেওয়া ৩০টি দলের সবগুলোর সমর্থকদের জার্সিই তৈরি করে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ফিফার লাইসেন্সধারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে দিয়ে পোষাক তৈরি করে নিয়েছে। তবে এবারই প্রথম এসব জার্সি, মোজা, ক্যাপ ও ট্র্যাকসুটের গায়ে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা রয়েছে। ব্রাজিলের জাতীয় দলের জার্সিতে এবারই প্রথম ট্যাগ থাকবে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখাটি।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ও তাজরিন ফ্যাশন্সে অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মো. হাতেম বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশন্সের মতো দুটি বড় দুর্ঘটনাকে স্মরন করে ব্রাজিলীয় ফুটবল কনফেডারেশন বাংলাদেশের তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বকাপে জাতীয় দলের জার্সিতে লাগানো থাকবে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ।
বাংলাদেশ থেকে জার্সি রপ্তানি সম্পর্কে বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, শুধু বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে চার হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন দেশের জার্সি ও খেলোয়াড়দের ব্যবহূত অন্যান্য পোশাক রপ্তানি হয়েছে। খেলোয়াড়দের পরনে থাকা জার্সির আদলে তৈরি এসব পোশাক মূলত খেলোয়াড় বা দলগুলোর সমর্থক-দর্শকদের জন্য। এটিকে বলা হয়, রেপ্লিকা জার্সি।
টিভির পর্দায় দেখা যায় মেসি, রোনালদো, নেইমাররা যে জার্সি গায়ে মাঠে খেলছেন, সেই একই আদলে তৈরি জার্সি গায়ে গ্যালারিতে হাজার হাজার দর্শক খেলা দেখছেন। মানের দিক থেকে একই না হলেও দেখতে হুবহু মিল। বিশ্বকাপ ফুটবলের এই আসরে বিভিন্ন দলের সমর্থকদের গায়ে যে রেপ্লিকা জার্সি থাকবে, তার সিংহভাগ তৈরি করেছে বাংলাদেশে। তিনি আরও বলেন, শুধু জার্সিই নয়, ব্রাজিল ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবলে স্বাগতিক হওয়ার পর থেকেই এই ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য সুভ্যেনির, জার্সি, ট্র্যাকস্যুট তৈরি করার অর্ডার পেয়ে আসছে বাংলাদেশ।
এ বছর অনেক উন্নতমানের ক্রীড়া পোশাক বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ইউরোপের দেশগুলো। আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘বাংলাদেশে তৈরি জার্সি রপ্তানি হয়েছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইতালি, ইরান, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, চিলি ও জার্মানিতে।
এর মধ্যে স্পেনে প্রচুর পরিমাণ জার্সি গেছে বাংলাদেশ থেকে। যেসব দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নিতে পারছে না, তারাও বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিয়ে গেছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। কারণ তারা ফিফার কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে।’ জার্সি প্রস্তুতকারক তৈরি পোশাক কারখানা ‘সার্ক নিটওয়্যার’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জোবায়দুর রহমান রানা বলেন, ফিফার লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জার্মানির লিডিল কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে খেলার পোশাক তৈরি করে নিয়ে গেছে।
ইংল্যান্ড, ব্রাজিল, স্পেন, গ্রিস, আর্জেন্টিনা, জার্মানিসহ ১৬টি দেশের খেলোয়াড়দের সমর্থকদের জন্য জার্সি শুধু আমরাই তৈরি করেছি। এর মধ্যে ছেলে-মেয়ে এমনকি শিশুদের গায়ের মাপের জার্সি রপ্তানি হয়েছে।’ বিজিএমইএ’র তথ্য মতে, বিশ্বসেরা খেলার উপকরণ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান রিবক, অ্যাডিডাস, পুমা ও নাইকি বাংলাদেশ থেকে তাদের লোগো সংবলিত বিভিন্ন দলের সমর্থকদের জন্য জার্সি, প্যান্ট, ট্র্যাকস্যুট, মোজা তৈরি করে নিয়ে গেছে।
এগুলো ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হয়। নিট পোশাক রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি মো. হাতেম এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের নামটি এবার থাকছে ফুটবলের এই মহাযজ্ঞে। কারণ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ সংবলিত জার্সি পরেই মাঠে নামবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দল। বাংলাদেশের তৈরি জার্সি গায়ে খেলবেন নেইমার-আলভেজ-অস্কাররা।