DMCA.com Protection Status
title="৭

বিচার বিভাগের সাথে প্রকট হয়ে উঠছে দ্বন্ধঃ আগাম নির্বাচনের দূঃচিন্তায় আওয়ামী লীগের ঘুম হারাম

High-Court_0দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ বিচার বিভাগের সাথে বর্তমান সরকারের চলমান দ্বন্দ্বে ঘনীভূত হতে পারে দশম সংসদ নির্বাচনের বৈধতার সংকট। ফলে, শেষ পর্যন্ত আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানই হতে পারে আওয়ামী লীগের শেষ আশ্রয়। আর এই আগাম নির্বাচনের আশঙ্কা কুঁড়িতেই বিনষ্ট করতে গিয়ে  বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে চড়াও হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের মন্ত্রীরা।


নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের পর ভূক্তভোগীদের পক্ষে করা একটি রিটের বিপরীতে আদালতের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে যায় বর্তমান সরকার। আদালতের ওই ভূমিকার কারণেই সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। সাত খুনের ঘটনার পরপর অভিযুক্ত ওই তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান হয়। কিন্তু আদালত তাদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদেরও নির্দেশ দেয়। একারণেই, পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়। এছাড়া, সরকারও সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়।


alএমনই এক প্রেক্ষাপটে প্রকাশ্যে আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের আইনমন্ত্রী। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অভিযুক্তদের গ্রেফতারে আদালতের এই নির্দেশের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আইনবিদ ড. কামাল হোসেন। আইনজীবী ড. কামাল হোসেন সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে রিটের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। আদালত তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এরই ভিত্তিতে অভিযুক্ত র‌্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়।


সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কা করা হচ্ছিলো , ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সুশীল সমাজের একটি অংশ সরকারবিরোধী অবস্থানে গিয়ে বিপাকে ফেলতে পারে আওয়ামী লীগকে। নারায়নগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় আদালতে দায়ের করা রিটের শুনানীতে ড. কামাল হোসেনের অংশগ্রহণকে সেই আশঙ্কারই বাস্তব প্রতিমূর্তি হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা বোঝা যায় প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই। এছাড়া, সাত খুনের ঘটনার পর এ নিয়ে সুশীল সমাজের যে কোন ধরণের কর্মকাণ্ডও কঠোর হাতে দমন করেছে। রাজধানীতে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচীও করতে দেয়নি পুলিশ। একারণেই, ধারণা করা হচ্ছে ঘনিয়ে আসা মেঘ ভালই টের পেয়েছে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা।


সমস্যার গভীরতা টের পেলেও স্বস্তিতে নাই আওয়ামী লীগ। বিচার বিভাগের কর্মকাণ্ড বর্তমান সরকারকে কতটা বিপত্তিতে ফেলছে তা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, “কনটেমপ্ট অব কোর্ট হলেও আই ডোন্ট কেয়ার”। তিনি আদালতের সমালোচনা করে বলেন, র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে আদালত গ্রেপ্তারের নির্দেশ কেন দিলেন, এটা তাঁর বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে যখন সুষ্ঠুভাবে তদন্ত চলছিল, তখন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের এমন নির্দেশ বহু সমস্যার সৃষ্টি করেছে।


তবে, সমস্যার জ্বালামুখটি আরও গভীরে লুকানো আছে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী বিশেষতঃ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বর্তমান সরকার সবার অংশগ্রহণে একটি আগাম নির্বাচন আহবান করুক। এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সাথে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ যুক্ত হলে তা আরও মারাত্মক হয়ে উঠবে সরকারের জন্য। এর পাশাপাশি বিচার বিভাগ ঠুকে দিতে পারে সরকারের বৈধতার বিতর্কের শেষ পেরেকটি। গত ফেব্রুয়ারী মাসেই দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে ইতিমধ্যেই রিট করা হয়েছে হাইকোর্টে।

 

রিট আবেদনে বলা হয়, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া একক প্রার্থীদেরকে সাংসদ ঘোষণা করা হলে সংবিধানের ৭, ১১, ২৭, ৩১, ৬৫(২), ১২১ এবং ১২২(১) ধারা লঙ্ঘিত হবে। বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনে যাচাই-বাছাই ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ১৫৩ আসনে এককপ্রার্থী থাকায় তাদের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। পর্যবেক্ষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই রিটের রায় বর্তমান সরকারকে চরম সংকটে ফেলে দিতে পারে। এমনকি, একটি আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারে।


একারণেই সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক চাপের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারকে সামনের দিনগুলোতে টিকে থাকতে হলে সহ্য করতে হবে বিচারের দণ্ডের ভারও।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!