DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

পঞ্চম স্ত্রীকে নিয়ে নূর হোসেন এখন অবকাশ যাপনে ভারতের শীমলায়!

nur_hossain_2দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার প্রধান আসামি নূর হোসেন কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন?

র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তার সন্ধানে নানা জায়গায় ছুটে চলেছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের এরশাদ শিকদার-খ্যাত এই ভয়ঙ্কর অপরাধীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাত হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতারে গঠিত পুলিশের টিম নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, যশোর, বেনাপোল, ফেনী ও কুমিল্লা সীমান্ত এলাকায়ও বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে।

কোথাও নূর হোসেন নেই। তার এই পালিয়ে থাকা নিয়ে ছড়িয়েছে নানা গুজব। কেউ বলছেন, তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। কেউ বলছেন, তাকে গুম করা হয়ে থাকতে পারে। কেউ কেউ অভিযোগ তুলে বলছেন, নূর হোসেন ঢাকাতেই একজন প্রভাবশালী নেতার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে নিরাপদে আছেন।

কারও মতে, ভারত হয়ে দুবাই, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যেতে পারেন নূর হোসেন। তবে ভারতে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানায়, নূর হোসেন কলকাতায় নেই। তিনি পঞ্চম স্ত্রী রুমাকে নিয়ে হিমাচল প্রদেশের শিমলা শহরে অবকাশ যাপন কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

সাত হত্যাকান্ডের পরও দুই দিন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জেই ঘুরে বেড়িয়েছেন নূর হোসেন। প্রশাসনের বন্ধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি যথারীতি আড্ডা দিয়েছেন। তার নাচ-গান-মাদকের আসরও বন্ধ ছিল না। কিন্তু শীতলক্ষ্যায় একের পর এক লাশ উদ্ধার হতেই গা-ঢাকা দেন। এরপরও তার অবস্থান ছিল রাজধানীর ধানমন্ডি ও গুলশান এলাকায়।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণে ধানমন্ডিতে নূর হোসেনের অবস্থান চিহ্নিত হয়। তার টেলি কথোপকথন রেকর্ড করা সম্ভব হলেও তখন তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। এরপরই ‘হাওয়া’ হয়ে যান নূর হোসেন। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, তিনি কলকাতায় অবস্থান করছেন। ঘটনার তিন দিন পর ভারতে পালিয়ে যান বলেও জানানো হয়।

কিন্তু নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান অভিযোগ তোলেন, র‌্যাবের সহায়তায়ই নূর হোসেন কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছেন। সেখানে তার ‘রাধা’ নামে এক স্ত্রী রয়েছেন। ভারতে গিয়ে নূর হোসেন নাম পরিবর্তন করে ‘গোপাল’ রেখেছেন।

এ নাম ব্যবহার করে তিনি একটি পাসপোর্ট বানিয়েছেন। কলকাতার সদর স্ট্রিটে নূর হোসেনের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে বলেও দাবি করেন শহীদ চেয়ারম্যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে জানান, ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভেসে ওঠার পর নূর হোসেন নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান। পরে যশোরের বেনাপোল পৌঁছান।

সেখানে তার বিশ্বস্ত কর্মচারী কামাল হোসেনের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের হরিদাসপুর এলাকায় পৌঁছান। সেখান থেকে অবস্থান নেন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। নূর হোসেনকে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগে কামাল হোসেনকে ইতিমধ্যে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন জানান, নূর হোসেনকে গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তিনি যেখানেই থাকুন আইনের আওতায় আনা হবে।

তার অবস্থান নিয়ে কোনো তথ্য পুলিশের কাছে আছে কিনা জানতে চাইলে এসপি বলেন, ‘পুলিশ বিভিন্ন কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা আশা করি, শীঘ্রই তাকে গ্রেফতারে সক্ষম হব।’ পুলিশের বার্ষিক প্রকাশনায় নূর হোসেন : নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের প্রধান আসামি বহুল আলোচিত নূর হোসেনের ছবিসহ বিজ্ঞাপন ছাপা হয় ‘পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’র বার্ষিক প্রকাশনায়।

 

‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৪′ উপলক্ষে প্রকাশিত ওই প্রকাশনায় নূর হোসেন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সব সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। প্রকাশনাটিতে নূর হোসেনের যে ছবিটি ছাপা হয়েছে, সেই একই ছবি এখন ঝুলছে থানা, সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে। গত ৬ মার্চ প্রকাশনাটি প্রকাশ হলেও সাত খুনের পর এ বিজ্ঞাপন নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

পুলিশের মতো একটি সুশৃক্সখল বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ওই প্রকাশনায় একজন দাগি শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছবিসহ বিজ্ঞাপন ছাপানো এবং তার কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক প্রকাশনা ‘উদ্দীপন’-এর ৮৬ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটির অর্ধেক পাতা জুড়েই রয়েছে নূর হোসেনের ছবি।

যেখানে লেখা রয়েছে, ‘পুলিশ সপ্তাহ সফল হোক’থ হাজী মো. বদর উদ্দিন শপিং টাওয়ার, নয়াআঁটি, মুক্তিসরণি, চিটাগাং রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। আরও লেখা রয়েছে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৪ উপলক্ষে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সব সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। প্রোপাইটর : হাজী মো নূর হোসেন, মোবাইল : ০১৭৪৭-৪১৯১৭৯।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ বাহিনীর একজন ঊধ্র্বতন কর্মকর্তা জানান, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার বহু আগে থেকেই নূর হোসেন আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশের আবেদনে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!