দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ আগাম নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্যই সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের ইস্যুটিকে শিকায় তুলে রাখতে চাইছে আওয়ামী লীগ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের বিচারের ইস্যুটিকে ঝুলিয়ে রাখলে দুই ধরণের লাভ পাবে আওয়ামী লীগ। প্রথম লাভ হচ্ছে জামায়াতকে সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে নিরস্ত রাখা আর দ্বিতীয়ত আগাম নির্বাচনে বাধ্য হলে নির্বাচনে জেতার জন্য পুনরায় জামায়াতের বিচারের ইস্যুটিকে ব্যবহারের জন্য তুলে রাখা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চলতি বছরের আগামী বাজেটের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণা করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন, ইংল্যান্ড সবাই আগাম নির্বাচন চাইছে। আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতেও সরকারকে চাপের মধ্যে রাখা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, বিদেশীদের বেঁধে দেওয়া এই সময়রেখা পার করে দিতে পেরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারপরও, সরকারের উপর আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ বজায় আছে। যে কোন সময় সরকার এই আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য হতে পারে। তাই, আগাম নির্বাচনের এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে জামায়াতের বিচারের ইস্যুটিকে আরও কিছু সময় বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে আওয়ামী লীগ।
যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াতের বিচারকে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষমতায় এসেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি আওয়ামী লীগের তথাকথিত জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের বিশাল কর্মীবাহিনীও যুদ্ধাপরাধের বিচার দেখতে মুখিয়ে আছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার এখনই শেষ করতে চায় না যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
জামায়াতকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় রাখতে বিচারকে বিলম্বিত করতে চান শেখ হাসিনা। কারণ জামায়াতকে আগামীতে সরকার বিরোধী আন্দোলনের বাইরে রাখতে পারলে, নিজের কাজগুলো সহজেই সম্পন্ন করতে পারবেন শেখ হাসিনা। যা শেখ হাসিনা ও তার দলের ভাবমূর্তিকে অনেকখানি উজ্জ্বল করবে।
আর প্রধানমন্ত্রীর মনের গহীনে থাকা সেই অন্তিম ইচ্ছাই প্রকাশ পেয়েছে তার বক্তব্যে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তাড়াহুড়া না করার কথা বলে আসলেও তিনি জামায়াতকে কাঙ্খিত বার্তাটি পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। তবে কালক্ষেপণের এমন সমঝোতায় জামায়াত নয় আওয়ামী লীগই বেশি লাভবান হবে।
সমঝোতার অংশ হিসেবে নিজেদের নেতাদের বাঁচাতে জামায়াত এই সময়ে আওয়ামী লীগ ও সরকার বিরোধী কোন ধরণের আন্দোলনে যাবে না। যা শেখ হাসিনার শাসনের সামনের দিনগুলোকে করে তুলবে মসৃণ। আর সাময়িকভাবে নেতাদের বাঁচানোর এই চেষ্টা জামায়াতের রাজনৈতিক ভিত্তিকেই দুর্বল করে দেবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াতের বিচারের ইস্যুটিতে কালক্ষেপণ করলেও ছেড়ে দিতে পারবে না।
বর্তমান সরকার তার মেয়াদের শেষের দিকে বা নিজেদের সুবিধামত যেকোন সময়েই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষ করে দিতে পারে। কারণ নির্বাচনে জয়লাভ ও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা লাভের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের নাম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে একেবারেই দুর্বল করে দিতে কাজে লাগবে এই বিচার। তাই,আওয়ামী লীগ নিজেদের জনপ্রিয়তা রক্ষা করার জন্যই জামায়াত ও সংগঠনটির নেতাদের বিচার করবে।