দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশে আসছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী পন্ডিত ড. বিলাল ফিলিপস। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ড. বিলাল ফিলিপস বাংলাদেশে আসার সমস্ত আয়োজন শেষ করা হয়েছে। তিনি ২০ জুন ঢাকায় এসে পৌঁছবেন। ড. বিলাল ফিলিপস ২৪ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থান করে তরুণদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিবেন। এ উপলক্ষ্যে অনলাইনে মাধ্যম ছাড়াও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তরুণদেরকে ড. বিলাল ফিলিপসের বক্তব্য শুনতে উৎসাহী করছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘সিয়ান’।
এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার উদার মনোভাব দেখালেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ড. বিলাল ফিলিপসকে তাদের দেশে ঢুকতে দেওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখে। এরই মধ্যেযুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, কেনিয়ায় ড. বিলাল ফিলিপসকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০০৭ সালে ড. বিল্লাল ফিলিপসকে অস্ট্রেলিয়া প্রবেশ করতে না দিতে সে দেশের সরকারকে অনুরোধ জানান দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তেরেসা মে কট্টর মনোভাব ধারণ করায় ফিলিপসের যুক্তরাজ্য প্রবেশকে নিষিদ্ধ করেন। ২০১১ সালে ফিলিপসের উপর জার্মানিতে পুনঃপ্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, তাকে অনাহূত ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সন্ত্রাসীদের সাথে সংযোগ থাকার অভিযোগে ২০১২ সালে কেনিয়া সরকার বিল্লাল ফিলিপসকে নিষিদ্ধ করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯৯৩ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বোমা হামলার হোতা হিসেবে ফিলিপসকে দায়ী করে।
২০১৪ সালে প্যারাগুয়ে নিরাপত্তা বাহিনী একটি ইসলামিক ইন্সটিটিউট ঘেরাও করে ও ২০ জন চরমপন্থীকে আটক করে। একইসময় বিল্লাল ফিলিপসের লেখা ‘দি ফান্ডামেন্টাল অব তাওহীদ’ বইটি প্রকাশের দায়ে প্রকাশককে আটক করে। প্যারাগুয়ে সরকারের অভিযোগ, বিল্লাল ফিলিপসের বইটি বিদেশ আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের জন্ম মন্ত্রণা দেন। চেক প্রজাতন্ত্রের পুলিশও বইটির প্রচার বন্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়েছে।
এছাড়া, ড. বিল্লাল ফিলিপস দীর্ঘসময় ধরেই আত্মঘাতী বোমা হামলায় তরুণদের উৎসাহ ও সমর্থন দিয়ে আসছেন। আত্মঘাতী বোমারু সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনাকে আত্মঘাতী বোমা মানসিকতাকে ভিন্ন চোখে দেখতে হবে। শত্রুরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত কিন্তু যারা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী, তাদের করার কিছুই থাকে না। একারণে তারা ভিন্নপন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন শত্রুর অস্ত্র ও সরঞ্জাম ধ্বংস করতে ও অন্য সহযোগীদের জীবন বাঁচাতে আত্মঘাতী হামলা চালায়। ফলে বাস্তবিক অর্থে, এটাকে আত্মহত্যা বিবেচনা করা ঠিক হবে না। এটা এক ধরণের সামরিক অভিযান আর সামরিক অভিযানে মানুষের জীবন নষ্ট হবেই। এটাই হলো আত্মঘাতী বোমা হামলার মূল ভিত্তি আর আমাদের সবার এই দিকটাই দেখা উচিত।
এগুলো ছাড়াও ইসলাম বিষয়ে ড. বিল্লাল ফিলিপসের নানান ব্যাখ্যাও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণ বলে কিছু নেই। তার মতে, নারীরা যেকোন সময় স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য। আর কোনভাবেই এমন শারীরিক সম্পর্কের জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করা যাবে না। এছাড়া, সমকামীদেরকে পেলেই খুন করার জন্যও মুসলমানদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরীর কাজ করছেন তিনি।
বিলাল ফিলিপস একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, ধর্মীয় শিক্ষক-বক্তা ও লেখক। পিস টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বক্তা বিলাল ফিলিপস বর্তমানে কাতারের বাস করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে জ্যামাইকাতে জন্মগ্রহণ করেন। কানাডায় পড়াশোনা করার সময় ১৯৭৬ সালে তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন ও ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। বিলাল ফিলিপস কাতারের ইসলামিক অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।