DMCA.com Protection Status
title="৭

“উনিশ শ একাত্তর”,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারনমূলক প্রামান্য ধারাবাহিকঃসাইদুল ইসলাম,পর্ব-১৩

1522112_619694474734099_729429726_nউনিশ শ’ একাত্তর ১৩:সাইদুল ইসলাম

 

সারাদিন পর মেসে ফিরে মেজর মীর শওকত আলীর ফোন পেলেন ক্যাপ্টেন চৌধুরি খালেকুজ্জামান। শওকত বললেন ‘কাম টু অফিস ইন ইউনফর্ম, সিও ওয়ান্টস ইউ টু রিপোর্ট টু ব্রিগেডিয়ার আনসারি এট দ্য পোর্ট’। দুপুরে, রেল ক্রসিং থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে দেওয়ায় শওকতের উপর খালেকুজ্জামানের অভিমান হয়েছিলো।

এখন ফোন পেয়ে রাগ হলো। মাত্র কয়েকদিন আগে কোয়েটা থেকে স্টাফ কলেজ শেষ করে ৮ বেঙ্গলে যোগ দিয়েছেন মীর শওকত। তবে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা এখনও বুঝতে পারছেন বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বললেন, ‘স্যার, আপনি তো জানেন ইউনিটের অবস্থা, গাড়ি পাবো কোথায়? শওকত বললেন, ‘আরন্ট য়ু দ্য এমটিও? হোয়াই আর ইউ আস্কিং মি এবাউট দ্য ট্রান্সপোর্ট? খালেকুজজামান বুঝলেন, শওকতের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই।

ইউনিফর্ম পরে ইউনিটে যেতে যেতে প্রায় আটটা বেজে গেলো। দেখলেন সিও, টু আইসি, মেজর শওকত, কোয়ার্টার মাষ্টারসহ অনেকেই অফিসে। সিও বললেন, ‘রিপোর্ট টু ব্রিগেডিয়ার আনসারি উইথ আ প্লাটুন”। খালেকুজ্জামন বললেন, স্যার, উই ডোন্ট হ্যাভ থ্রি টন, শুড উই টেইক পিক আপস? লেঃ কর্ণেল জাঞ্জুয়ার মেজাজটা গরম হয়ে গেলো। খালেকুজ্জামানকে এতদিন তিনি ভালোই মনে করতেন। কিন্তু আজ সকাল থেকে অন্যরকম লাগছে। কোন দায়িত্ব দেওয়া হলেই, সে কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি ভালো করে জানেন, সকালে ইচ্ছা করেই, রেল ক্রসিং এর উপর থেকে ব্যরিকেডটা সরায়নি খালেকুজ্জামান।

টুআইসিটাও হয়েছে, সে রকম, ক্যাপটেন সাহেবকে এব্যাপারে জোরাজুরি করেনি। উলটো তাকে নিয়ে শহর ঘুরে এসেছে। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যার সময়, ২০ বেলুচের একটা এমজি (মেশিন গান) এনে কায়দা করে কোয়ার্টার গার্ডে ভরেছে। টুআইসি মেজর জিয়া এত ধূর্ত যে কোন অজুহাতেই তাঁকে ধরা যাচ্ছে না। কোন এরোগেন্সি নেই, ঝগড়া তর্ক নেই। যা বলা হচছে ট্রু সোলজারের মত পালন করে যাচ্ছে। জাঞ্জুয়া এর আগেও জিয়ার সাথে চাকরি করেছেন তিনি জানেন, উপরে উপরে যত লয়ালটিই দেখাক সুযোগ পেলেই সে নাগালের বাইরে চলে যাবে।

তাঁর মনে হলো টুআইসিকে শুনিয়ে খালেকুজ্জামানকে ওয়ার্নিং দেয়া দরকার, যাতে সে টের পায় যে, সে যত বড় ঘুঘুই হোক জাঞ্জুয়ার, ফাঁদও খুব সোজা নয়। এমন সময় শওকত বললো, স্যার ক্যান য়ুই বরো সাম ট্রান্সপোর্ট ফ্রম ইবিআরসি? জাঞ্জুয়া জানেন আসলেও ইউনিটের ৩ টনী ট্রাক নেই। যে ক’টি ছিলো দুপুরে শওকতের চার্লি কোমপানির সাথে সে গুলি গেছে। তিনি বললেন, ‘গেট য়োর ট্রুপস রেডি জামান। লেট’স গেট এ থ্রী টন ফ্রম নেভী। জিয়া বিষ্মিত হলেন, বলা নেই কওয়া নেই নেভী থেকে থ্রী টন! ‘ইজ সিও প্লেইং সাম ট্রিকস?’ কথাটি ঘুরে ফিরে মনে এলেও কারো সাথে আলোচনা করতে পারলেন না তিনি।

কাল ক্যাপটেন আমীনের সাথে টেলিফোন কথা হবার পর, কর্ণেল চৌধুরী আর তিনি ভেবেছিলেন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে আর একটু সময় পাওয়া গেলো। আমিনের কাছ থেকে ঢাকার খবর পাবার পর তাঁর পরামর্শে ক্যাপটেন রফিককেও তিনি বলেছিলেন ধীরে চলতে। সব কিছু জানিয়ে আজ আবার আমিনের ফোন করার কথা। ফোন আসেনি।

সারাদিনে কর্নেল এম আর চৌধুরির সাথেও যোগাযোগ করা যায়নি। আজ নিজ চোখে শহরের অবস্থা দেখে তাঁর মনে হয়েছে হাতে সময় নেই। সন্ধ্যার সময় ইউনিটের কাছে ২০ বেলুচের এমজি ডেটাচমেন্ট, তার সন্দেহকেই আরেকটু পোক্ত করেছে। ক্যাপ্টেন রফিকের সাথে একটু যোগাযোগ করা দরকার। ইপিআরে বাঙালি সৈনিকের সংখ্যা প্রায় হাজার। এই অঞ্চলে তারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। ইবিআরসিতে হাজার দেড়েক সৈন্য থাকলেও, তার অধিকাংশই রিক্রুট।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর তিনি কোয়ার্টার মাষ্টারের অফিসে ঢুকেছিলেন এসব বিষয়ে আলোচনা করার জন্যে। অলি আহমেদ খুশিই হলেন টুআইসিকে দেখে। দুপুরের পর থেকে যে সব খবর খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বড় কোন সিদ্ধান্ত যে কোন সময় নিতে হতে পারে।২৩ তারিখের পর টুআইসির সাথে আর এ ব্যাপারে কথা বলা হয়নি। জিয়া চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, ‘ডিড য়ু গেট দ্য ওয়েপন্স ফ্রম ইবিআরসি?’ অলির মনে পড়লো, ইউনিটে অস্ত্র কম থাকায় ইবিআরসির কাছে, কিছু অস্ত্র ধার চাওয়া হয়েছিলো। আই এস ডিউটি করার জন্যে ইবিআরসি শ’ দুয়েক ডিপি রাইফেল বরাদ্দ দিলেও তার সব এখনও আনা হয়নি। তিনি বললেন, ‘স্যার ও গুলি তো ডিপি রাইফেল, গুলি তো করা যায়না’।

জিয়া মুচকি হাসলেন, ‘চার্লি কোম্পানি তো পোর্টে অস্ত্র নিয়ে গেছে ঠিক?’ – রাইট স্যার, – ডু ইউ হ্যাভ দ্য ওয়েপন স্টেট? অলি ওয়েপন স্টেট বের করে দিলেন।ইউনিটে মাত্র শ’দুয়েক রাইফেল আছে, এমজি নেই বললেই চলে, মর্টার না থাকার মত, আরআর (রিকয়েল লেস রাইফেল) আছে একটি।নামেই ব্যাটালিয়ন, সব মিলিয়ে ফায়ারিং পাওয়ার একটি কোম্পানির ফায়ারিং পাওয়ারের চেয়ে কম। তিনি ওয়েপন স্টেটটা অলিকে ফেরত দিয়ে বললেন, অন্যদের খবর কী? তাঁর কথার উত্তর না দিয়ে অলি দরজার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। জিয়া দেখলেন সিওর সাথে মীর শওকত অফিসে ঢুকছেন।

সিও বললেন, কী হচ্ছে এখানে? তোমাকে পেয়ে ভালোই হল, খালেকের কী সমস্যা দ্যাখো তো! বের হতে হতে, জিয়া ভাবলেন শওকতকে এমন বগলদাবা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিও, যে এখন পর্যন্ত সিরিয়াসলি কথাই বলা হলো না শওকতের সাথে! ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান, সুবেদার এনামুল মজিদের সাথে চেচাচেচি করছিলেন। জিয়া কে দেখে একটু থামলেন। জিয়া বললেন, রেডি টু মূভ? খালেকুজ্জামান বললেন, ‘স্যার, নেভীর একটা গাড়ি পেয়েছি, কিন্তু এমো হ্যাজ নট বিন ড্রন। দ্য সিচুয়েশন আউট সাইড ইজ এক্সপ্লোসিভ, উই শুড নট গো এম্পটি’ জিয়া কিছু বলার আগেই জাঞ্জুয়া ইনামুল মজিদকে বললেন, ‘কোয়ার্টার গার্ড সে রাউন্ডস লে আও, হারি আপ’

।জিয়া দেখলেন নেভীর একটি ৩ টনী ট্রাকে, গাদাগাদি করে ৩০ জন সৈন্য ওঠানো হয়েছে, সাথে আছে নেভীর আরও দু’জন গার্ড। গোলাবারুদ আনতে আনতে রাত দশটা বেজে গেলো। সিও বললেন, ‘টুআইসি, ইটস টু লেট নাও, কমান্ডার উইলবি এনোয়েড, বেটার ইউগো ফার্স্ট, খালেক উইল সুন ফলো ইউ’ এর , আজম ঔর হুমায়ুন কো ভি লে জা না। ইউ মে নিড দেম টু ক্লিয়ার ব্যারিকেডস। জিয়া বুঝলেন পশ্চিম পাকিস্তানী দুই অফিসারের হাতে কার্যত তিনি বন্দী হয়ে গেলেন।

দীর্ঘ দিন গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করা জিয়া রিয়্যাক্ট করলেন না। ক’দিন ধরে সববাঙালি অফিসার মিলে যে পরিকল্পনা করেছেন, সেখানে ভুলের কোন সুযোগ নেই। গাড়িতে ওঠার সময় অলি আহমেদ ইশারা করে কী বলতে চাইলেন, জিয়া বুঝতে পারলেন না। গাড়িতে ওঠার সময় খালেকুজ্জামান কাছে এলে তাঁকে ফিস্ ফিসিয়ে বললেন ইউ আর দ্য ওল্ডেস্ট অফিসার অব দ্য ব্যাটালিয়ান। কীপ য়োর আইজ এন্ড ইয়ার ওপেন, এন্ড ইফ য়ু হেয়ার এনিথিং লেট মি নো।

সূত্রঃ FLAMES OF FREEDOM : Beginning of Liberation War in Chittagong একটি জাতির জন্ম, মুক্ত যুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা আর নয়, স্মৃতিচারণঃ অগ্নিঝরা মার্চ ১৯৭১ সালের সেই উত্তাল দিনগুলো নোটসঃ সিও- কমান্ডিং অফিসার/ অধিনায়ক টুআইসি- সেকেন্ড ইন কমান্ড উপ অধিনায়ক এমো- এম্যুনিশন আর আর – রিকয়েল লেস রাইফেল এমটিও- মেকানিক্যাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার ইবিআরসি- ইস্ট বেঙ্গল রেজিমান্টাল সেন্টার কোত – অস্ত্রাগার

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!