DMCA.com Protection Status
title="৭

বৃটেনে চ্যালেঞ্জের মুখে লক্ষাধিক উপমহাদেশীয়

Brick-Lane-Streetযুক্তরাজ্যের কয়েকটি মিউনিসিপ্যালিটিতে খোদ বৃটিশদের রাজনৈতিক শক্তির প্রতি হুমকি হয়ে উঠেছে সে দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশী, পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ানরা। বাংলাদেশী, পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ানদের সম্মিলিত রাজনৈতিক শক্তি কতটা গভীর তার প্রমাণ দিয়েছিলেন টাওয়ার হেমলেটের মেয়র ও বাঙ্গালী লুৎফর রহমান।

লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর, ওই পার্টিরই প্রার্থীকে নির্বাচনে পরাজিত করেন তিনি। এরপর থেকে লুৎফর রহমান ও টাওয়ার হেমলেটে বসবাসকারী বাঙ্গালী, পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ার নাগরিকদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে উঠে পড়ে লেগেছে বৃটিশ মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে, আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে যে, বৃটেনে বসবাসকারী বাঙ্গালী, পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ার নাগরিকরা সামাজিক বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হতে পারেন। বৃটিশ পর্যবেক্ষকদের অনেকেই এই পরিস্থিতিকে ‘এশিয়া ফোবিয়া’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

টাওয়ার হেমলেটের নির্বাচনে বাঙ্গালী লুৎফর রহমান লেবার পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করার পর বৃটেনের নির্বাচনী কমিশন বাঙ্গালী-ভারতীয় ও পাকিস্তানের অভিবাসীদের পক্ষ থেকে দাঁড়ান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির তদন্ত শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন এশিয়ানদের প্রাধান্য আছে, এমন ১৬টি মিউনিসিপ্যালিটিতে নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে, এমন প্রমাণ প্রতিষ্ঠার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বৃটেন সরকার। মিউনিসিপ্যালিটিগুলো হলো- বার্মিংহাম, ব্ল্যাকবার্ন, ব্রেডফোর্ড, বার্নলি, কার্লডারডেলে, কভেন্ট্রি, ডার্বি, হাউন্ডবার্ন, কির্কলিস, ওল্ডহাম, পেন্ডেল, পিটারবোরার্গ, স্লোগ, টাওয়ার হ্যামলেট, ওয়ালস ও উইকিং।

কিন্তু স্থানীয় অনেক রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে দেখছেন ভিন্ন চোখে। আদতে নির্বাচনে জালিয়াতির তদন্তের নামে বৃটিশরা এশিয়ার অভিবাসীদের প্রতি তাদের ভীতিকেই প্রকাশ করছে কি না, তা জানতে চায় অনেকে। অবশ্য এরইমধ্যে তদন্তকারীরা নির্বাচনী জালিয়াতির দায়ে লন্ডন বোরার্গ ও টাওয়ার হ্যামলেট থেকে দুইজনকে আটক করেছে। এই নির্বাচনী এলাকায় মেয়র নির্বাচনের সময় ভোটারদের জোর করে ভোট দিতে বাধ্য করা, ভেটা কেন্দ্রের ভিতরে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার ও ভোট গণনায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত টাওয়ার হ্যালমেটের মেয়র লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধেও জালিয়াতির তদন্ত করছে সরকার। মেয়র নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত লুৎফর রহমান। নির্বাচনের আগে লুৎফর রহমানকে লেবার পার্টির সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে লেবার পার্টির প্রার্থী জন বিগসকে পরাজিত করেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগ আনা হয়, আগের মেয়াদে মেয়র থাকা অবস্থায় নিজের আত্মীয়দের অবৈধ উপায়ে অর্থ প্রদান করেছেন লুৎফর রহমান। বাংলাদেশের সিলেটের অধিবাসী লুৎফর রহমানের আত্মীয়রা অবৈধভাবে প্রাপ্ত অর্থ নির্বাচনে ব্যয় করেছে বলেই অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসূত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারপরেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী লুৎফর রহমান, কাদেরকে অর্থায়ন করেন ও কেন করেন তা তদন্ত করতে একটি তদন্ত দল টাওয়ার হ্যামলেটে পাঠিয়েছেন। একইভাবে ইন্ডিয়ানদের অধ্যুষিত ব্রেন্ট, লিচেস্টার মিউনিসিপ্যালিটিসহ এশিয়ানদের প্রাধান্য আছে এমন কমিউনিটিগুলোর বিরুদ্ধে একই অভিযোগে তদন্ত চলছে।

তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, যে সব মিউনিসিপ্যালিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে ও তদন্ত হচ্ছে, তা সবগুলোই এশিয়ান অধ্যুষিত। এবং যেগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশতে বাংলাদেশের সিলেটি ও পাকিস্তানের মিরপুরের অধিবাসীদের প্রাধান্য রয়েছে। আর অধিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসে সবাই মুসলমান। এই সব এলাকায় কখনোই কোন হিন্দু বা শিখ প্রার্থী জয়লাভ করেনি। যে কারণে এই সব কমিউনিটির বিরুদ্ধে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ ও তদন্তকে দেখা হচ্ছে ইসলামফোবিয়া ও বর্ণবাদী আচরণ হিসেব। যদিও এই সব কমিউনিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রভাবিত করে ভোট আদায় করা। এশিয়দের মধ্যে ধর্মীয় অনূভূতিকে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করা স্বাভাবিক বিষয়। আর ভারতীয় উপমহাদেশের অধিবাসীরা ঐতিহাসিকভাবেই এই কাজটি করে আসছে।

মূলত এই ১৬টি মিউনিসিপ্যালিটিতে যে সম্প্রদায়গুলো বর্তমান তার অধিকাংশই অধিবাসী। যারা গত শতকের ৭০, ৮০ বা ৯০ এর দশক থেকে বৃটেনে অধিবাসী হিসেবে বাস করছে। মিডল্যান্ডে বাস করা বাংলাদেশী ও পাকিস্তানিরা বিভিন্ন বস্ত্র কারখানার পাশাপাশি ও অন্য বড় শহরের কারখানায় কাজ করে। টাওয়ার হ্যামলেটে বাস করা সিলেটিরা চামড়া ও বস্ত্র কারখানায় খুবই স্বস্তা শ্রমে কাজ করে। অধিবাসীরা নিন্ম ব্যয়ের এলাকায় বাস করে। অনেকে আবার বৃটেনে স্থায়ী না হওয়ার আগ পযন্ত দেশের বা গ্রামের আত্মীয় স্বজনের সাথে মিলে মিশে বৃটেনে বাস করে। আর এই স্বজনদের রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকান বা প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়। এই আঞ্চলিকতার ধারণাটা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। মসজিদ ও সম্প্রদায়ের অন্যান্য কেন্দ্রেও এই আঞ্চলিকতার চর্চা হয়।

৮০ দশকে বৃটেনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন ইন্ডিয়া, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও বস্ত্র আমদানি করা শুরু করে। যে কারণে টাওয়ার হ্যামলেটের কারখানাগুলো স্বস্তা দামের এশিয়ান পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনি ও বদ্ধ হয়ে গেছে। মুসলমান প্রধান এই সব এলাকায় সৌদি আরবের টাকায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে মসজিদ। সালাফী ধর্মগুরুদের সাথে সাথে দেশটিতে মসজিদ তৈরির টাকাও প্রবেশ করে। বর্তমানে বৃটেনের সবচেয়ে বড় মসজিদ টাওয়ার হ্যামলেটে অবস্থিত। এমনকি লন্ডনের প্রতি ১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে মসজিদ অবস্থিত, ঘনত্বের হারে যা মক্কার চেয়েও বেশি। আর এই সব মিসজিদের কোনটা আবার কমিউনিটি কমিটিগুলো পরিচালনা করে।

কমিউনিটিগুলোর আর্থিক সহায়তায় দেশটিতে ৩টি টেলিভিশন ও ২টি রেডিও চ্যানেলও পরিচালতি হয়। যা বাংলাদেশী অধিবাসীদের ভোটকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর ভোটারদের উপর কমিউনিটির নিয়ন্ত্রণ থাকায় অধিবাসীরা নিজেদের প্রার্থী ব্যতীত অন্যকোন প্রার্থীকে ভোট দেয় না। অধিবাসীদের ভোট না পাওয়ার কারণে ‍বৃটেনের স্থানীয়রা নিজেদের স্থানান্তরিত ভাবতে শুরু করেছে। যে কারণে কমিউনিটিগুলোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের সমর্থন, ভোটে কারচুপি, ভোটারদের অবৈধ সুবিধাদান ও প্রভাব খাটানর বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আর স্থানীয়রা এশিয়া ফোবিয়া থেকে এই তদন্ত কাজ শুরু করেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!