কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঠ থেকে চরম লজ্জা আর ধিক্কার কিনছে বাংলাদেশ! সারাদেশে তো কত গুদামঘর আছে।
খুব শিগগিরই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ক্রিকেট মাঠের এত ‘দামি’ লজ্জার মিছিল কোথায় স্টোর করা হবে। আপাতত বিসিবি ও পাঁচতারা হোটেলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেই মুশফিকুর রহীম-সাকিব আল হাসানদের দ্বারা কিনে আনা লজ্জা আরাম-আয়শে দিনাতিপাত করছে।
তবে কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর অন্তর নিশ্চয়ই সেগুলো আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করার জন্য মুখিয়ে আছে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ তো তাই প্রতিনিয়তই চোখ রাঙায়। মুশফিকুর রহীমরা আবারও দেখালেন নিজেদের যোগ্যতা, নিজেদের মাপকাঠি। ছি ছি ছি। কী জঘন্য, কী কুিসত, কী কদর্যপূর্ণ ব্যাটিং!
ভারতের দ্বিতীয় সারির একটি দলের কাছে ৫৮ রানে অলআউট বাংলাদেশ। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগেও ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ ২০১১ বিশ্বকাপে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। সেবার ১৮.৫ ওভার খেললেও এবার খেলতে পেরেছেন তারা ১৭.৪ ওভার।
বিশ্বকাপের মৌসুমে উপদ্রব হয়ে আসা সিরিজে জাত-মান-কুল বিসর্জনের হুলিখেলায় মেতে উঠেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সুরেশ রায়নার নেতৃত্বাধীন এই ভারতের কাছে এক ম্যাচ আগেই ২-০তে সিরিজ হেরে গেল বাংলাদেশ।
গতকাল মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতের কাছে ৪৭ রানের শোচনীয় পরাজয়ের মালা গলায় তুলল মুশফিকের দল। ৪১ ওভারের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ভারত ২৫.৩ ওভারে ১০৫ রানে অলআউট হয়। জবাবে ১৭.৪ ওভারে ৫৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের বিরক্তিকর ব্যাটিং। ভারতের স্টুয়ার্ট বিনি ম্যাচসেরা হন। ১০৬ রানের মামুলি টার্গেট।
তার মাঝেই মোহিত শর্মার করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলে যে শট খেললেন তামিম ইকবাল, সেটিকে অনাচার ছাড়া কিছুই বলা যায় না। বছরের শুরু থেকে ব্যর্থতার গান গেয়ে যাচ্ছেন তিনি। তারপরও টনক নড়ছে না টিম ম্যানেজমেন্টের। দিব্যি খেলে যাচ্ছেন তামিম! কত রাজা-উজির মরে, তামিম বারবার ব্যর্থ হয়েও দলে থেকে যান। অপয়া ১৩ রানে এনামুল বিজয় রাহানের হাতে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে সাজঘরে ফিরেন। মিঠুন-মুশফিকের ৩১ রানের জুটি থামে অধিনায়ক মুশফিক আত্মাহুতি দিলে। ১১ রান করে স্টুয়ার্ট বিনির শিকার হন তিনি।
সারাক্ষণই নড়বড়ে থাকলেও ইনিংসের সর্বোচ্চ রানটা মিঠুন আলীর ব্যাট থেকে। ২৬ রান করে তিনিও ইনিংসের ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিনির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ঠিক পরের বলেই নিজেকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বানিয়ে মাহমুদউল্লাহ ক্যাচ দিলেন রাইডুর হাতে। মূলত তখনই বাংলাদেশের পরাজয়লিপি লেখা হয়ে যায়। ৫০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ৮ রানে বাকি ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বিরানভূমি হয়ে যাওয়া ইনিংসে মুশফিক-মিঠুন ছাড়া কেউই দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করেননি। জিয়াউর, নাসিরদের জঘন্য ব্যাটিংয়ের কল্যাণে বিনি ৪ রানে ৬ উইকেটের মহাকীর্তিও গড়ে ফেললেন। মোহিত শর্মা ২২ রানে পান ৪ উইকেট।
এর আগে ভারতের ইনিংসটা শুরু হয়েছিল আকাশের গমগম শব্দে। টস জিতে আর্দ্র কন্ডিশনের সুবিধাটা নিতে ভুল করেননি মুশফিকুর রহীম। একাদশেও ছিল তিন পেসার। পেসাররা অবশ্য অধিনায়কের আস্থার দান কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। পেসাররাই নিয়েছেন ভারতের ৮ উইকেট। তার মধ্যে দুরন্ত বোলিং করেছেন তরুণ তুর্কি তাসকিন। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। মাশরাফি, আল-আমিনরাও বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আগের ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার আজিঙ্কা রাহানেকে এলবির ফাঁদে ফেলেন মাশরাফি বিন মতুর্জা। আল-আমিন, মাশরাফি নতুন বলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জীবন দুর্বিসহ করে তোলেন। ইনিংস ষষ্ঠ ওভারে তাসকিন বল হাতে নিতেই আষাঢ়ের বৃষ্টি নামে। আড়াইঘণ্টা বৃষ্টিতে বন্ধ ছিল ম্যাচ। বৃষ্টির ম্যাচের আকারও ছোট হয়। ৪১ ওভারের ম্যাচ। খেলা শুরু হতেই আগের মতো বল হাতে গর্জন তোলেন বাংলাদেশের পেসাররা। ২৬ রানে উথাপ্পাকে (১৪) নিজের প্রথম ওয়ানডে শিকার বানান তাসকিন। ২ রানে রাইডুও এই তরুণের বলে সাজঘরে ফেরেন। পূজারা-রায়নার ২৭ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন। পূজারা এলবির ফাঁদে পড়েন ১১ রান করে। স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে অধিনায়ক রায়না ব্যাট হাতে সাবলীল ছিলেন।
দলীয় ৬৫ রানে মাশরাফি ঋদ্ধিমান সাহাকে ফেরালে ৫ উইকেট হারায় ভারত। ১ রান পর রায়না রানআউট হন। তিনি সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন। এরপর ভারতের ইনিংস শেষের অপেক্ষায়ই সময় কেটেছে স্টেডিয়ামবাসীর। ১৮তম ওভারে দুটি চার খেলেও আকসার প্যাটেলকে বোল্ড করতে সমর্থ হয়েছিলেন আল-আমিন। স্টুয়ার্ট বিনি, অমিত মিশ্রকে সাজঘরে পাঠিয়ে অভিষেকেই পাঁচ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড গড়ে ফেলেন তাসকিন। ২৮ রানে ৫ উইকেট পান তিনি।
দেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেকে এটিই সেরা বোলিং। উমেশ যাদবকে নাসিরের ক্যাচ বানিয়ে ভারতের ইনিংস গুটিয়ে দেন সাকিব। তিনি ১৭ রান করেন। মাশরাফি ৩৫ রানে ২ উইকেট পান।