আপনি ভাবতেই পারবেন না, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সবচেয়ে ক্ষেপাটে সমর্থকরা কোন দেশের নাগরিক। তারা আর কোন দেশের নয়, কেবল বাংলাদেশের নাগরিক। বিশ্বকাপ উন্মাদনায় পাগলপাড়া বাংলাদেশ। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দলের সমর্থকরা আছেন এই উন্মাদনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এইভাবেই বাংলাদেশের ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বাংলাদেশী সমর্থকদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন।
কেবল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকরাই নন, যশোরের জেলা প্রশাসকের কথাও উঠে এসেছে টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনটিতে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচেই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ছে। এত বিদেশি পতাকা দেখে যশোরের জেলা প্রশাসকের জাতীয়বাদী চেতনায় আঘাত লাগে। কিন্তু কোন ফল হয়নি।
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের খবরগুলোও ছেপেছে টাইম ম্যাগাজিন। এ প্রসঙ্গে লেখা হয়, জুনের ৭ তারিখে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকরা সংঘাতে লিপ্ত হয়। সংঘাতটি রিও ডি জেনিরো কিংবা বুয়েন্স আয়ার্সে হয়নি। হয়েছে বাংলাদেশের বরিশালে। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার করা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোলটি অবৈধ ছিল বলে বরিশাল পলিটেকিনিক কলেজের এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করার পরই মারামারির সূত্রপাত হয়। এবং ওই সংঘাতে মোট ১১জন আহত হয়। একইভাবে ১৮ই জুন হাতিবান্ধায়ও ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে মারামারির হয়। এছাড়া, আর্জেন্টিনার পতাকা উড়াতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ৩ জন নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে নিহতদেরকে ‘বিশ্বকাপ শহীদ’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
প্রথম আলোর সাংবাদিক ইফতি ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইম ম্যাগাজিনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষের ব্রাজিল সমর্থনের কারণ হচ্ছে দারিদ্রতা। ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়রা আমাদের মতোই দেখতে। পেলে, রোমারিও, নেইমার আমাদের মতোই কৃষ্ণ বর্ণের। ওরাও গরিব, আমরাও তাই। এর বিপরীতে আর্জেন্টিনা সমর্থনের সাথে বৃটিশ উপনিবেশের শাসনের বিরোধিতার সম্পর্ক রয়েছে। ম্যারাডোনা বৃটিশ ফুটবল দলকে পরাজিত করেছিলেন। বাংলাদেশে বৃটেনের তারকা ফুটবলার ডেভিট বেকহ্যাম জনপ্রিয় না। কিন্তু ম্যারাডোনা বাংলাদেশিরা পাগলের মতো ভালবাসে।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, আর্জেন্টিনার সমর্থনের এই ব্যাপকতা সম্পর্কে জেনেই আর্জেন্টিনা দল বাংলাদেশ সফর করেছিল ২০১১ সালে। তখন বাংলাদেশে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলে আর্জেন্টিনা।