DMCA.com Protection Status
title="৭

আদালতের রায় যেন ইতিহাস বদলে না দেয়ঃ জাতির বিবেক থাক জাগ্রত

laege_35822-300x179দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ  পর্যবেক্ষনঃ  দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়নি। বরং, সুপরিকল্পিতভাবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হতে বাধ্য করা হয়েছিল। আরপিও’র ১৯ ধারা অনুসারে প্রার্থী না পাওয়া গেলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বৈধ।

 

কিন্তু সুপরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোন প্রার্থীকে নির্বাচিত করা কিংবা হতে দেওয়া বৈধ কী? বিশেষ করে, এইভাবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে দেওয়ার পেছনে যখন কোন দলকে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ করে দেওয়া কিংবা না দেওয়ার মতো দুরভিসন্ধি কাজ করে?

 

দশম সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। আর, অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি। এর দায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এমনকি জাতীয় পার্টিরও ছিল। সবগুলো দলের পক্ষ থেকেই ছিল দুরভিসন্ধি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে ক্ষমতায় যাওয়া সহজ।

 

তাই, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল থেকেও বিএনপিকে নির্বাচনে এনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টির দায়িত্ব নেয়নি। বরং অভিযোগ আছে, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল দলটি। এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ১৫৪টি আসনে কথিত ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ নির্বাচন হয়েছে।

জাতীয় পার্টি নানান ছলাকলা করে প্রায় অর্ধশত আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করাতে বাধ্য করেছিল। ফলে আসনগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শুন্য হয়ে পড়ে। এই বিবেচনায় ওই অর্ধশত আসনে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপের কারণেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়েছিল।

বিএনপিও নিজ দলের রাজনীতিবিদদের নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছিল। ফলে, শেষ পর্যন্ত ১৫৪টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। তাই, ব্যাপারটিকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বললে ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা করা হবে।

অস্বীকার করার উপায় নাই যে, খালেদা জিয়া নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে চেয়েছিলেন। তিনি তা করতে পেরেছেনও। কিন্তু খালেদা জিয়া এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে, নিজ দলের রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টাকে কঠোর হাতে দমন করেছিলেন।

 

নির্বাচনে অংশ নিতে চাওয়ার ‘অপরাধে’ দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন তিনি। এইভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আইনগত অধিকার কোন একটি দলের সভানেত্রীর আছে কি না তা খতিয়ে দেখার বিষয় আছে। বিশেষত, খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা জানতেন, তাদের দল নির্বাচনে অংশ না নিলে অনেকগুলো আসন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী শুন্য হয়ে পড়বে।

 

আরপিও’র ১৯ ধারা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের রায়ে আদালত বলেছে, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বৈধ। আদালতের এই রায়ে সরকার গঠন বৈধতা পেলেও ক্ষমতাসীন হিসেবে আওয়ামী লীগের সংকট কাটবে না। তেমনি যারা বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে আসছেন, তাদের বিরোধও মিটবে না। কেননা, সকল পক্ষই জানেন, ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের’ নামে আদতে কি হয়েছিল বাংলাদেশে।

 

তবুও আরপিও’র ১৯ ধারা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের রায়ে আপাত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে আওয়ামী লীগ। নিঃসন্দেহে ভবিষ্যৎয়ে এই রায়কে নিজেদের বৈধতার সার্টিফিকেট হিসেবেও ব্যবহার করবে দলটি। কিন্তু এই রিটের রায় যেন ইতিহাস বদলে না দেয়। কথিত ‘বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির পেছেনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কী দায় ছিল তা যেন হারিয়ে না যায় ইতিহাসের পাতা থেকে।

 

১৫৪টি আসনের নির্বাচনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বলে চিহ্নিত করা আসলে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়মুক্তি দেওয়ারই নামান্তর। আর এতে করে আগামী বাংলাদেশে একই ধরণের নির্বাচন আরও হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!