DMCA.com Protection Status
title=""

নীতি ও দূর্নীতিঃ মার্কিন স্টাইল

images14দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ বিশ্বজুড়ে সততা ও জবাবদিহীতার  ধুয়ো তোলা মার্কিন রাজনীতিবিদরাও দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই। মার্কিন রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির মহাকাব্যে নতুন অধ্যায় হিসেবে যোগ হল ক্লিনটন পরিবারের করফাঁকির চাঞ্চল্যকর নানান তথ্য।

ক্লিনটন পরিবারের দুর্নীতির খতিয়ান প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। পত্রিকাটির প্রতিবেদন অনুসারে, হিলারী ক্লিনটন তাদের নিউইয়র্কের বাড়িটিকে ২০১০ সালে একটি ট্রাস্টের আওতায় নিয়ে আসেন। আর ২০১১ সালে সেই বাড়িটির মালিকানাও নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাস্টের সম্পদ করের আওতামুক্ত থাকে। যে কারণে অনেকেই নিজেদের সম্পদকে বিভিন্ন ট্রাস্টের আওতায় দিয়ে থাকে। একইভাবে ক্লিনটন পরিবার নিজেদের বাড়ি ট্রাস্টের আওতায় এনে লক্ষ লক্ষ ডলার কর দেওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছেন।

২০০৮ সালে ডেমোক্রেটদের পক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনে বারাক ওবামার কাছে পরাজিত ক্লিনটন ২০১৬ সালের নির্বাচনে লড়তে চান। আর ২০০৮ সালের মত ২০১৬ সালেও মোট সম্পদের বিপরীতে কর দেওয়ার বিষয়টিকে সামনে আনবেন তিনি। হিলারী ধনীদের বেশি পরিমাণে কর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানে দেশটিতে ৫.৩৪ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্তি অর্থ ও সম্পদের জন্য শতকরা ৪৫ ভাগ কর দিতে হয়। আর হিলারীর অতিরিক্ত কর প্রদানের নীতিকে সমর্থনে এগিয়ে আসেন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। বাফেট ট্রাস্ট তৈরি করে নিজের সম্পদের পরিমাণ অনেক কমিয়ে এনেছে।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওবামার প্রশাসনের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেও এই সময়ে হিলারী আয় কমেনি। বরং আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ২০১২ সালে যেখানে হিলারী সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫.২ মিলিয়ন, ২০১৩ সালের শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫.৫ মিলিয়ন ডলারে। অভিযোগ করা হচ্ছে, হিলারী এই পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করেছেন নিজের সম্পদের কর না দিয়ে। কর দেওয়ার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে ওয়াশিংটনের বিশাল সম্পদ ও বাড়ি নিজের মেয়েকে উপহার দেন হিলারী।

অবশ্য ২০১০ সালে জেপি মর্গ্যান ব্যাংকের হিসাব মতে, ব্যাংকটিতে হিলারী ও বিলের দুটি একাউন্টে মোট সম্পদের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন ডলার। ব্যাংকটিতে একক একাউন্টে ২৫ মিলিয়নের বেশি অর্থ রাখা যায় না। ক্লিন্টন পরিবারের দাবি, হিলারী আর বিল এই বিশাল সম্পদ আয় করেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করার মাধ্যমে। হিলারী ও বিল ক্লিনটন নিজেরা বক্তব্য দেওয়ার জন্য লাখ ডলারের বেশি নেন। বিল ক্লিনটন কোন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার জন্য ২ লাখ ডলারের বেশি অর্থ নিয়ে থাকেন। ক্লিনটন দম্পতির বিশাল সম্পদ থাকলেও তারা কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেননি। বরং নিজেদের আরোপিত কর নীতি থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাস্টের।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে কোন ব্যক্তিক ৫.৩৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পদকে করের আওতা মুক্ত রাখা হয়েছে। আর বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে এই আইন মোতাবেক ১০.৬৮ মিলিয়ন ডলারের সম্পদকে করের আওতা মুক্ত রাখা হয়েছে। কর আইন মোতাবেক এই সীমার বাইরের সম্পদের শতকরা ৪৫ ভাগের বেশি কর হিসেবে সরকারকে দিতে হবে। তবে ট্রাস্টের ক্ষেত্রে কর আইন প্রচলিত নয়। বিভিন্ন ট্রাস্টের সম্পদকে করের আওতামুক্ত রাখার বিধান যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত। আর এই আইনের সুযোগ নিয়ে থাকে দেশটির ধনকুবেররা।

২০১১-২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবেররা করের আওতামুক্ত পারিবারিক ট্রাস্ট তৈরি করে নিজেদের সম্পদ ট্রাস্টে প্রদান করেছেন। কেবল মাত্র ২০১২ সালেই ১২২ বিলিয়ন সম্পদ এ ধরণের ট্রাস্টের আওতায় আনা হয়েছে। দেশটির আরো অনেক ধনকুবেরদের মত হিলারী ও বিল ক্লিনটনও একই নীতি অনুসরণ করেছেন। ব্যাংকে নিজেদের নগদ সম্পদের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন ডলার রেখে বাকী সব অর্থ পারিবারিক ট্রাস্টের কাজে লাগিয়েছেন। যে কারণে এই দম্পতিকে তাদের বিশাল সম্পত্তির জন্য কোন প্রকার করই দিতে হয় না।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!