DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনঃ অসহায় মেয়র মনজুরের স্বপ্নবিলাস!

image_97071_0বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করছে বন্দরনগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ অধিকাংশ নীচু অঞ্চল। জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী। অথচ ঘোষিত বাজেটে নেই সেই জলাবদ্ধতা নিরসনের সুস্পষ্ট বরাদ্দ ও নির্দেশনা।

এ নিয়ে উল্টো নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র এম মনজুর আলম। কিন্তু রোববার ঘোষিত বাজেটকে চসিকের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট বলে ঢোল পেটাতে কুণ্ঠিত হননি তিনি।



২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য মোট ১ হাজার ১৯৫ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার টাকার একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাস্তবায়ন দুষ্কর এ বাজেটে উন্নয়ন অনুদান ও বকেয়া কর আদায়কে আয়ের মূল খাত হিসেবে ধরা হয়েছে।



গত অর্থবছরের (২০১৩-১৪) বাজেটে উন্নয়ন খাতে ৫৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও খরচ হয়েছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার  টাকা। ওই বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ।



এ প্রসঙ্গে মেয়র মনজুর আলম বলেন, ‘গত অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দ যা পাওয়ার কথা ছিল তা পাইনি। তবুও ৪৫ শতাংশ অর্জন করেছি।’



এদিকে পানির নিচে বন্দরনগীর অধিকাংশ অঞ্চল হলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে নেই জলবদ্ধতা নিরসনের সুস্পষ্ট ঘোষণা। বাজেট বক্তৃতায় মেয়র বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে যা সৃষ্টি হচ্ছে তা জলাবদ্ধতা নয়, সাময়িক জলজট। এত পানি যাবে কোথায়? কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের নামে ৫০০ ফুটের চেয়ে বেশি নদী ভরাট করে ফেলা হয়েছে। তাই জোয়ারের পানি ওভার ফ্লো হয়ে নগরীতে ঢুকে পড়ছে। ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন কোনোভাবেই সম্ভব না।’



নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে মনজুর বলেন, ‘বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খননের জন্য ২৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প চেয়েছি সরকারের কাছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ টাকা সরকারি তহবিল থেকে, ৩০ শতাংশ করপোরেশন অর্থায়ন করবে। তিন বছর ধরে এ প্রকল্পের জন্য সরকারের কাছে ধরণা দিয়েছি, এখনো পর্যন্ত পাইনি। এটি বাস্তবায়ন হলে বহদ্দারহাট এলাকায়  জলাবদ্ধতা আর থাকবে না।’



এসময় ১৯৯৫ সালের প্রণীত ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান মেয়র।



এদিকে ৫৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে জলবদ্ধতা নিরসনের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০১০ সালের জুনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের দলছুট বিএনপি সমর্থিত মনজুর আলম। সেই সময়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর চট্টগ্রাম নগরীকে সিঙ্গাপুর সিটি বানানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে তিনি ঠেকিয়ে ছিলেন জলমগ্ন মুরাদপুরের চিত্র তুলে ধরে। ওই সময়ে তার সমর্থকরা স্লোগান তুলেছিলেন- ‘পানির নিচে মুরাদপুর কেমনে হবে সিঙ্গাপুর?’ এই জলাবদ্ধতাকেই ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহার করে তিনি কাউন্সিলর থেকে নগরপিতার আসনে বসেছিলেন এক সময়ের গুরু তিনবারের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ধরাশায়ী করে।



তবে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার পর ২০১১ সালের মার্চে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়র মনজুর আলমকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘মেরেছো কলসির কণা, তাই বলে কী প্রেম দিব না?’ তার এই বক্তব্যের পর পর বিরোধী দলে থেকেও চট্টগ্রামের উন্নয়নে মেয়র ঢাকা থেকে বরাদ্দ আনতে পারবেন বলে নগরবাসী আশা করেছিল। তবে মেয়র তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে অর্থাভাবে গত অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ।



মেয়র মনজুর আলম চট্টগ্রামের উন্নয়নে আন্তরিক নন বলে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন সরকারের মন্ত্রীরা পর্যন্ত। গত ৩১ মে একটি টিভি চ্যানেলে সরাসরি টকশো’তে চট্টগ্রামের উন্নয়নে মেয়র মনজুর আলমের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি।



উন্নয়নের ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের মেয়র সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদবির করেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামের সন্তান, সরকারের একজন মন্ত্রী। তিনি আমার কাছ থেকে পর্যন্ত কোন সময় বরাদ্দ চাননি। এ অবস্থায় উন্নয়ন কীভাবে হবে?’



মেয়র গত চার বছরে খাল খননের জন্য ২৯৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অর্থ আদায় করতে না পারলেও চিটাগাং ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (সিডিএ) চেয়ারম্যান সরকারের যুগ্ম সচিবের পদমর্যদায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েও সরকারের কাছ থেকে আদায় করেছেন প্রায় চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্পই বাস্তবায়ন করেছেন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এমনকি এর আগে তিন মেয়াদের দু’মেয়াদে বিরোধী দলের মেয়র হয়েও  সিটি করপোরেশনকে স্বনির্ভর করেছিলেন আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন চৌধুরী। সে দুবার মহিউদ্দীন চৌধুরীর সাথ বিএনপি সরকার এতোটা বিমাতা সূলভ আচরন করেনি।  



ঘোষিত বাজেটকে অসহায় মেয়রের স্বপ্নবিলাস বলে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দর খান। তিনি বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষের ধারণা, রাজনৈতিক কারণে মেয়রকে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে না সরকার। তবে মেয়রকেও সরকারি অর্থ বরাদ্দ পেতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তার স্বপ্ন রয়েছে কিন্তু সার্মথ্য নেই।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!