উনিশ শ’ একাত্তর ১৫:সাইদুল ইসলাম
জিয়াকে পোর্টে রওনা করিয়ে দিয়ে জাঞ্জুয়া বাসার পথ ধরলেন। মেজর শওকতও গাড়িতে উঠলেন, তিনি যাবেন এইটথ বেঙ্গলের অফিসার্স মেসে। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান অফিসের দোতলায় উঠে গেলেন, অলির সাথে এক কাপ চেয়ে ডিউটিতে যাবেন।
সিও তাঁকে এম্বারকেশন ইউনিটে যেতে বলেছেন। চারিদিকে যা অবস্থা! অলির সাথে একটু আলোচনা করা দরকার। ক্যাপ্টেন অলি চাকরিতে জুনিয়ার হলেও, বয়সে একটু বড়। বিভিন্ন কারণে সিনিয়ার অফিসারদের সাথে তাঁর যোগাযোগটা ভালো।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে সিনিয়ার বাঙালি অফিসার, কর্ণেল এম আর চৌধুরির তিনি ইউনিট অফিসার।মার্চের শুরুতে বাঙালি অফিসাররা যখন তাদের করণীয় নিয়ে একটু দোদুল্যমান ছিলো, সে সময় সিনিয়ার জুনিয়ারদের মধ্যে তাঁকে একটু দূতিয়ালিও করতে হয়েছে।খালেকুজ্জামানের সাথে কথা জমে আসার আগেই টেবিলের উপরের ফোনটি জীবন্ত হয়ে উঠল, রাত তখন এগারোটার কাছাকছি।ওপার থেকে, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের কাদের সাহেব জানালেন, ‘ঢাকায় আর্মী নেমে গেছে। রাজার বাগে ভীষণ গোলমাল হচ্ছে, ইপিআরেও গোলাগুলি হচ্ছে’।
কাদের সাহেব খালেকুজ্জামান আর অলি দু’জনেরই পরিচিত। ক্যাপ্টেন অলির সাথেও কথা হলো তাঁর। তিনি খালেককে বললেন, – স্যার, খবরটা টু আইসিকে দেওয়া দরকার না? – হ্যা, স্যার তো তাই বলে গিয়েছিলেন, স্যারের সাথে সেট আছে? – সেটে খবর দেওয়া, যাবে না। আদার্স আর অলসো ইন দ্য সেইম নেট – আই বেটার টেইক আ পিক আপ, ইফ আই ক্যান রিচ হিম। তুমি এদিকে সব ঠিক রাখো ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান দ্রুত সুবেদার মাহাবুবকে ডেকে বললেন, ‘সৈনিকদের তাড়াতড়ি ফলইন করান, হাতিয়ার গোলাবারুদ ইস্যু করে রেডি থাকেন, আমাদের যাওয়া লাগতে পারে।
এরপর, একজন ল্যান্স নায়েক আর দু’জন সৈনিক নিইয়ে একটি পিক আপে রওনা হয়ে গেলেন বন্দরের পথে। ল্যান্স নায়েক শফি নিচে ডিউটি করছিলেন, তাঁকে বললেন, ‘ হুশিয়ার থাইকো, কোন কিছু হলে সাথে সাথে, ডিউটি অফিসারকে জানাইবা। উনি উপরে আছেন’। ব্যাটালিয়নে তখন আর কোন অফিসার নেই। সিও বাসায়, টু আইসি বন্দরে, মেজর শওকত মেসে অন্যরা সবাই বিভিন্ন জায়গায় ডিউটিতে। অলি আহমেদ এক মুহুর্ত দেরী না করে,ইউনিটের সৈনিকদের একত্রিত করে নায়েব সুবেদার হামিদকে পাঠালেন, সবাইকে নিয়ে সিডিয়ে মার্কেটের উপর অবস্থান নিতে।
ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের টেনশন বেড়ে যাচ্ছিলো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যরিকেড, টু আইসিকে খবরটা দিতে না পারলে ম্যাসাকার হয়ে যাবে। তি্নি দামপাড়ার ব্যারিকেডটা সরানোর জন্যে নেমে পড়লেন। এখনও অনেক দূর, ‘স্যার যদি পোর্টে পৌছে যান তাহলে ব্যাপারটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে’। মাত্র তিন জন সৈনিক নিয়ে ব্যারিকেড সরানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। তিনি বললেন, জলদি করো। জিয়াউর রহমান পুরো ব্যাপারটা বিশ্লেষণের চেষ্টা করছিলেন। আগ্রাবাদ রেলওয়ে ওভারব্রীজের কাছে তাঁর গাড়ি থেমেছে। ব্যরকিকেডের জন্যে আগানো যাচ্ছে না।
ইচ্ছে করলে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট দু’জনকে নামিয়ে ব্যারিকেড সরানোর কথা বলতে পারেন। কিন্তু তাঁর এই মুহুর্তে ওদের কাছ থেকে একটু আলাদা থাকা দরকার।তিনি ধীর পায়ে রাস্তায় হাটতে হাটতে ভাবছিলেন, তাঁকে পোর্টে পাঠিয়ে সিও’র কী লাভ? এক হতে পারে অন্যান্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা, আর অন্য হতে পারে আনসারির কাছে কোন অজুহাতে আটকে রাখা।একটি বিষয় চিন্তা করে তিনি একটু স্বস্তি পেলেন। পোর্টে এখনও এইটথ বেঙ্গলের একটি কোম্পানি আছে। প্রয়োজনে তাঁদের ব্যবহার করা যেতে পারে, শওকত ইউনিট সামলাতে পারবে, যদি নেভী, ২০ বালুচ বা ২ কমান্ডো না আসে।
এর মধ্যে যদি ইপিআরের সাপোর্ট পাওয়া যায়, দ্যাট’স এনাফ। হঠাত একটা গাড়ির শব্দে ফিরে তাকালেন তিনি। একটি পিক আপ থামলো তাঁর গাড়ির কাছে, পিক আপ থেকে ক্যাপ্টেন খালেক কে নামতে দেখে খুব একটা অবাক হলেন না। শুধু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন তাঁর দিকে। রফিক বললেন, স্যার, দে হ্যাভ ক্র্যাকড ডাউন, কন্ডিশন এট ঢাকা ইজ ভেরি সিরিয়াস? দে হ্যাভ এটাকড ইপিআর ক্যাম্প এন্ড পুলিশ লাইন… এক মুহুর্ত ভাবলেন জিয়া, তারপর বললেন, ‘উই রিভোল্ট। ডোন্ট টেল এনিথিং টু আজম অর হুমায়ুন আই উইল টেল দেম সিও হ্যাজ অর্ডারড টু ফল ব্যাক। গো টু ইউনিট এন্ড টেল অলি টু প্রিপেয়ার দি ইউনিট’।
ক্যাপ্টেন খালেকের মনে হলো, তিনি করার মত একটি কাজ পেয়েছেন। ড্রাইভারকে বললেন জলদি চলো। আসার সময় বেরিকেড সরিয়ে আসায় উড়ে চললো তাঁর পিকআপ। গাড়িতে ফিরে ভালো মানুষের মত বললেন, গাড়ি ঘোরাও, আমাদের ফেরত নিয়ে যেতে সিও, ক্যাপ্টেন সাহেবকে পাঠিয়েছেন।নেভীর ট্রাকটাও মুখ ঘুরালো সিডিএ মার্কেটের দিকে।