DMCA.com Protection Status
title=""

সরকার-জামায়াতের গোপন আঁতাতেই নিজামীর রায় স্থগিত!

images (5)দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ জামায়াতের সঙ্গে সরকার আঁতাত করেছে বলেই নিজামীর মামলার রায় ফের স্থগিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুদ্ধাপরাধ মামলা নিয়ে সোচ্চার আলোচনায় থাকা অনেকেই।



তারা বিষয়টিকে সরকারের ‘ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, মঙ্গলবার নিজামীর রায় হচ্ছে না, জামায়াত এটা জানতো বলেই হরতাল দেয়নি। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে তেমন সতর্কতাও দেখা যায়নি। তার মানে দুই পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমেই রায় ফের স্থগিত করেছে।



জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় বিলম্বিত করতে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ অন্যদের বিচার কাজ শেষ হলেও রায় প্রকাশে বিলম্ব হওয়া মানে সমঝোতার আভাস। নিজামীর যে অসুস্থতা তা রাজনৈতিক অসুস্থতা। রাষ্ট্র এ দায় এড়াতে পারে না।’



তিনি বলেন, ‘কাশিমপুর কারাগার থেকে নিজামীকে কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা গেলে, সেখান থেকে কেন ট্রাইব্যুনালে আনা যাবে না? তাকে যে কোনো ব্যবস্থায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা যেতো। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমাদের জানা নেই। এ অবস্থায় আমরা সঙ্কটমুক্ত হতে পারলাম না।  আমাদের সন্দেহ আরো জাগ্রত হলো।’



মঙ্গলবার জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য থাকলেও ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ায় তাকে আদালতে নেয়া সম্ভব হয়নি। তার অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে রায় ফের অপেক্ষমাণ রেখেছেন বিচারকরা।



কারা কর্তৃপক্ষ ট্রাইব্যুনালকে জানায়, কারাগারে থাকা নিজামী অসুস্থ হওয়ায় তাকে ট্রাইব্যুনালে নেয়া সম্ভব নয়। এরপর এ বিষয়ে শুনানি শেষে চতুর্থ দফায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার আদেশ দেন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।



জেল সুপার ফরমান আলী জানিয়েছেন, সোমবার রাতে মতিউর রহমান নিজামীর রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় ওষুধ দেয়া হয়। তাই তাকে আদালতে নেয়া যায়নি। সকালেও তার প্রেসার না কমায় ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছিল।



ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়, ‘আমরা জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। ওই প্রতিবেদন অনুসারে নিজামী অসুস্থ। আইন পর্যালোচনা করে আসামির অনুপস্থিতিতে রায় প্রদান আমরা যুক্তিসঙ্গত মনে করছি না। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রায় দেয়া হবে। মামলাটি রায়ের জন্য আবার অপেক্ষমাণ রাখা হলো।’



এদিকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় এর আগে জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার রায়ের দিন হরতাল দিলেও এবার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনে জামায়াতে ইসলামী। নিজামী দলের আমির হওয়া সত্ত্বেও হরতাল না ডাকার সিদ্ধান্তকে সরকারের সঙ্গে আগে থেকেই আঁতাত বলে মনে করছেন অনেকেই। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন মতিউর রহমান নিজামী।



গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায় ঘোষণা না হওয়াকে ‘ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘এটা ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল। আমাদের এ অপকৌশলকে নস্যাৎ করতে হবে। দীর্ঘ ছয় মাসে আমরা কোনো রায় পাচ্ছিলাম না। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিল। গতকাল যখন রায়ের তারিখ ঘোষণা হলো, আমাদের মধ্যে পুনরায় আশার সঞ্চার হয়েছিল। শাহবাগ আবার মিলনমেলায় পরিণত হয়। আমরা দেখে এসেছি রায়ের আগে জামায়াত প্রতিক্রিয়া দেখায়, কিন্তু নিজামী আমির হওয়া সত্ত্বেও কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নীরব থেকেছে। তখনই আমাদের মধ্যে সন্দেহ জন্ম নিয়েছিল, এখন তা প্রমাণিত হয়েছে।’



তিনবার অপেক্ষমাণ থাকার পর সোমবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল নিজামীর রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। রায়ের তারিখ ধার্য হলেও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি জামায়াত। যদিও এর আগে দলের অন্যান্য নেতাদের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখায় দলটি।



জামায়াতের অন্যান্য নেতাদের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের দিন ধার্য হলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে নিজামীর রায়ের আগের দিন তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দেখা যায়নি। অন্য নেতাদের রায়ের দিন ট্রাইব্যুনালের আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। অথচ মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। জাতীয় প্রেসক্লাবের পাশে কদম ফোয়ারা সংলগ্ন পথেও ট্রাইব্যুনালের দিকে যান চলচল ছিল স্বাভাবিক। এমনকি সাধারণ মানুষ চলাচলে ছিল না কোনো বাধা-নিষেধ।



জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছে জামায়াত। রয়েছে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা। এ অবস্থায় সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতাই একমাত্র উপায় বলেই মনে করছেন দলের সিনিয়র নেতারা। তাই সরকারি দল যদি বিপক্ষে যায় তাহলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে নেতাকর্মীরা। তাছাড়া নতুন সরকারের এই পাঁচ বছরে আন্দোলন সংগ্রাম করে জামায়াত তাদের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে পারবে না। বিষয়টি বুঝতে পেরে জামায়াত গোপনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দলটির নীতি নির্ধারকদের মধ্যে অন্যতম ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে থেকে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।



তবে সরকারের সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতার বিষয়টি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বলছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে একদিকে মানুষের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর একক গোয়ার্তুমির কারণে দেশ এক ভয়াবহ সঙ্কটের গহ্বরে নিপতিত। আওয়ামী লীগ সংবিধান, মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারকে পদদলিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য সরাসরি দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জামায়াত কোনো ধরনের গোপন সমঝোতা বা পর্দার অন্তরালে আলোচনার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।’



তিনি আরো বলেন, ‘সব জুলুম, নির্যাতন ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলেছে। জনগণের এ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে নস্যাৎ করা যাবে না। পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসকই জনগণের ওপর জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না।’



জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা জানান, দলের অস্তিত্ব রক্ষা এখন গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে গেলে দলের সাজাপ্রাপ্ত ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বাদ দিয়ে একেবারে বিতর্কমুক্ত ও তরুণ নেতৃত্ব দিয়ে জামায়াত পুনর্গঠন করে নতুন নামে রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে। আর তা না হলে ১৯ দলীয় জোটের সঙ্গে একাত্ম হতেই হবে। তাই এই মুহূর্তে কোনো দলের সঙ্গে বিরূপ আচরণ উচিত হবে না। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে যাওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।



জামায়াত ও সরকারের আঁতাতের কারণেই রায় হয়নি বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বর্তমান সরকারের আঁতাতের কারণেই যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত রাজাকার জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিচারের রায় নিয়ে তালবাহানা হচ্ছে। একদিন আগেও যিনি সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন, রায় ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন- এটা খুবই রহস্যজনক। সরকার ও নানা মহল খুব সুচারুভাবে মতিউর রহমান নিজামীকে দাবিকৃত সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচাতেই বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!