‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর কোনো ইচ্ছে নেই ভারতের। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিজেপি সরকারের ব্যাখ্যা দেয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবর উদ্দিন এ কথা বলেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফর উপলক্ষে ভারতীয় হাইকমিশন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবর উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়, এদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দেশটির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রক্ত দিয়েই এ দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক অটুটও থাকবে।’
আকবর উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুনমাত্রা দিতেই সুষমা স্বরাজ প্রথম বিদেশ সফরের জন্য বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নানা ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ভারত সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠককে আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের নন-ট্যারিফ ও প্যারা-ট্যারিফ বাধা দূর করা, ঢাকা-শিলং-গোহাটী বাসসার্ভিস চালু, মৈত্রী ট্রেনের শীতাতপ কামরার সংখ্যা বাড়ানো, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, সীমান্ত সমস্যা সমাধান, স্থল সীমা নির্ধারণ, বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের ভিসা নীতি বিষয়ে কোনো আলোচনা না করা হলেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতে ভিসা প্রাপ্তির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ১৩ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বাংলাদেশিদের ৫ বছরের ভিসা দেয়ার কথা হয়েছে বলেও জানান আকবর।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘ভারত ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদুৎ দিচ্ছে। আগামীতে ত্রিপুরা থেকে আরো ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কুইক রেন্টাল হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়া হবে।’
চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চীনসহ আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভারত আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আকবর উদ্দিন বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের বিষয়। শুভেচ্ছা সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’
সীমান্তে হত্যা বন্ধে দুইদেশ একমত হয়েছে এবং তা কিভাবে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিস্তা ও স্থলসীমা বিষয়ে চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গসহ আরো কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের বিরোধিতা করাকে কীভাবে মোকাবিলা করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এবারের সফরের বিষয়গুলো রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর বলেন, ‘দু’দেশের কোনো দেশই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না। এক্ষেত্রে উভয় দেশ বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে অপরাধীদের সাজা দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি সুদ্বীপ চক্রবর্তী, সেকেন্ড সেক্রেটারি সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন