DMCA.com Protection Status
title="৭

এবার ভারতে অবৈধ বাংলাদেশী প্রসঙ্গে মোদির সাথে গলা মেলালেন মমতা

Mamata-Banerjee2PTI-300x169এবার পশ্চিমবঙ্গে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের উপস্থিতি নিয়ে স্ববিরোধী বক্তব্য দিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জী। নরেন্দ্র মোদী যখন ইন্ডিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের কথা বলছিলেন, তখন মমতা ব্যানার্জী ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিদ্রুপ করেছেন, এমনকি তাকে ‘ধর্মের ভিত্তিতে বাঙালীদের বিভক্ত করার চেষ্টাকারী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ মূর্খ’ বলেও অভিহিত করেছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূ্র্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এতদিন মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশীদের উপস্থিতি সমানে অস্বীকার করে আসছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মোদী ভূগোল কিংবা ইতিহাস কোনটিই জানেন না। এখানে যে মুসলিমরা বসবাস করে তারা সবাই ইন্ডিয়ার নাগরিক। তিনি তাদের দেশত্যাগ করার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। বাংলাদেশী অ্যাখ্যা দিয়ে কারো গায়ে হাত দিলেও আমি দেখে নেব’।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়ে এবার মমতা ব্যানার্জী নিজেই মোদির ভাষায় কথা বলা শুরু করেছেন। এবার তিনি প্রচার করতে শুরু করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী আছে। বাংলাদেশের সাথে পশ্চিম বঙ্গের সীমান্ত জেলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। বৈঠকে বলেন, ‘যেসব অপরাধীরা বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পার হয়ে এদিকে আসবে, তারাই আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য দায়ী হবে’।

উত্তর চব্বিশ পরগণার সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে, ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল নেতাদের খুনের বিষয়টি উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘সোদপুরের পার্টি অফিসের ভিতরেই একটা খুন হয়ে গেল। ব্যারাকপুর বার এসোসিয়েশনের সভাপতিকে গুলি করা হল। এসব কি কৌতুক? কী হচ্ছে এখানে? পুলিশ কী করছে? ২০০-র মত বাংলাদেশ থেকে খুনী ভাড়া করে এনে তাদের দিয়ে খুন করা হচ্ছে’।

সিনিয়র তৃণমূল কর্মীদের উপস্থিতিতে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমি এগুলো সহ্য করব না। শুধুমাত্র খুনীদেরই গ্রেপ্তার করলে চলবে না, যারা এর মূল পরিকল্পনাকারী তাদেরকেও ধরতে হবে’। উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার পুলিশ প্রধান তন্ময় রায় চৌধুরীর মতে, ‘কেবল শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী একটা বৈঠক করলেন এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যে সকল সীমান্তরক্ষীরা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বললেন। আমরা সীমান্তের সব পুলিশ স্টেশনকে সতর্ক করে দিয়েছি। কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তাদের সোর্সের নেটওয়ার্ক বাড়ানো হয় এবং সহিংস এলাকাগুলোতে তাদের ঠিকমত দেখাশোনা করা হয়’।‘ফলে, বনগাও থেকে আমরা অসংখ্য বাংলাদেশীকে গ্রেপ্তার করেছি। কত বেশি সংখ্যক লোকজন সীমান্ত পার হয় আর এদিকে এসে বসবাস শুরু করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বিএসএফের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে মিটিংয়ে বসছি’।

গত সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত নূর হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর এই বিষয়টিই নিশ্চিত হয় যে এলাকাটি বাংলাদেশী আন্ডারগ্রাউন্ডদের জন্য নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশী যেসব মাফিয়া, মুসলিম জঙ্গীরা ইন্ডিয়ায় ইতোমধ্যেই পালিয়ে এসেছে এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আস্তানা গেড়েছে তাদের ব্যাপারে সিআইএ(সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি)ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছে।

তাদের একটি প্রতিবেদনে এমনকি এও বলা হয়, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ঐ রাজ্যে সন্ত্রাসী হামলাও চালাতে পারে। এমএইচএ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য রাজ্য সরকারকে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় বিএসএফ-কে শুধু সতর্ক থাকারই নির্দেশ দেয়নি, রাজ্য সরকারকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেও কম্বিং অপারেশন চালাতে বলেছে। তাদের সূত্রমতে, কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলাকালীন কমপক্ষে ২৫ হাজার বাংলাদেশী, বিশেষ করে অধিকাংশই অপরাধী ও ‘ইসলামী জঙ্গিরা’ ইন্ডিয়ায় পালিয়ে যায়।

ইন্ডিয়ার একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছু কিছু সন্ত্রাসী আইএসআই এর পৃষ্ঠপোষকতা পায়, তারা ঐ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইন্ডিয়ায় প্রবেশ করে। অন্যান্য রাজ্যগুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে যাওয়ার জন্য এই শহরটাকে ওরা করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে’।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ বানাবার ক্ষেত্রে বিজেপি দায়ী করছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। ৩১ মে, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটবর্তী সন্দেশখালিতে ১২ জন বিজেপি কর্মী গুলি লেগে আহত হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসকে। এরপরই কেন্দ্রীয় বিজেপির একটি দল সন্দেশখালিতে গিয়ে ঘুরে এসে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, ‘তৃণমূল নেতারাই সেসব জঙ্গী ও জামায়াত ইসলামী নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছিলেন, যারা মৌলবাদী ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর উদ্দেশ্যে সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে। বিগত নির্বাচনের সময় তাদের কেউ উন্মুক্তভাবে তৃণমূলের পক্ষে প্রচারণাও চালিয়েছে। এবং তাদের একজন, আবদুল বারিক বিশ্বাসকে তৃণমূল কংগ্রেস এমএলএ দেবাশীষ রয়ের সঙ্গে ডাইস শেয়ার করতেও দেখা গেছে’।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!