ইতালি-উরুগুয়ের ম্যাচে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার জর্জিও চিয়েলিনির কাঁধে কামড় দেবার পরপরই অনলাইন জুড়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন লুই সুয়ারেজ। মুহূর্তের মধ্যে হিরো থেকে ভিলেনে পরিণত হয় উরুগুয়েকে দ্বিতীয় পর্বে নিয়ে যাওয়া এই স্ট্রাইকার। এ ঘটনায় ফিফার তাকে ৯ ম্যাচ খেলা ও ফুটবল সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে চার মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও সুয়ারেজের স্পন্সরাও তাকে ছাড়তে শুরু করেছে। তবে খেলার মাঠে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বিশ্বকাপে অনেকবারই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি বিশ্বকাপের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সেরাদের তালিকায় স্থান পায়নি সুয়ারেজের কামড় কাণ্ড। মজার ব্যাপার হচ্ছে বেশিরভাগ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ভালো দলের খেলোয়াড়রা। বিশ্বকাপের এমন ১০টি ঘটনা নিয়েই আজকের আয়োজন।
১. জিদানের ঢুঁশ
২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে জিদানকে লাল কার্ড দেখানোর ঘটনায় সম্ভবত লাল কার্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। কারণ ওই একটি মাত্র ঘটনায় শিরোপাজয়ী দলের নাম পাল্টে দিয়েছিল। ম্যাচের মাঝপথে হঠাৎ করেই ইতালির মার্কো মাত্তেরাজির বুকে মাথা দিয়ে ঢুঁশ মারেন জিনেদিন জিদান। এ ঘটনায় জিদানকে লাল কার্ড দেখান আর্জেন্টাইন রেফরি হোরাসিও এলিজিন্দো। পরে অবশ্য জানা গেছে, জিদানের বোনকে নিয়ে খুব বিব্রতকর কিছু একটা বলেছিলেন মাত্তেরাজি। তাই রাগ সামলাতে না পেরে ঢুশ মারেন জিদান। অবশ্য লাল কার্ড খেলেও শেষ পর্যন্ত দর্শকরা জিদানকেই সমর্থন করেছেন। অন্যদিকে ওই ঘটনার জন্য মানুষ মাত্তেরাজিকেই ভিলেনের আসনে বসিয়েছে।
২. ব্রাজিলের গোলকিপারের ফাউল
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল-ফ্রান্স। ওই ম্যাচে ডি বক্সে ফরাসি স্ট্রাইকার ব্রুনো বেলোনিকে ফাউল করে বসেন ব্রাজিল গোল রক্ষক কার্লোস। তারপরেও ফ্রি কিক দিতে অস্বীকৃতি জানান রেফরি। এ ঘটনাকে রেফরির ‘চূড়ান্ত মাত্রার ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন ফুটবল বোদ্ধারা।
৩. অ্যান্টনিও রেটিনের লাল কার্ড
রেফরিদের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নজির কম নেই। অনেক সময় ভালো খেলেও দল হারে শুধুমাত্র রেফরিদের ভুলে। ১৯৬৬ সালেও রেফরির বিতর্কিত একটি সিদ্ধান্ত বেশ আলোচনায় এসেছিল। ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলিতে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক অ্যান্টনিও রেটিনকে লাল কার্ড দেখান রেফরি রুডলফ ক্রেটলিন। রেফরির ওই সিদ্ধান্তে রেটিন এতটাই অসন্তুষ্ট হন যে লম্বা সময় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
৪. প্যাট্রিক ব্যাটিসটনের অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফরাসি স্ট্রাইকার প্যাট্রিক ব্যাটিসটন বল নিয়ে জার্মানির ডি বক্সের মধ্যে ঢুঁকে পড়েছেন। সেই মুহূর্তে বল ধরার পরিবর্তে জার্মান গোলকিপার শুমাখার ব্যাটিসটনকে আক্রমণ করে বসেন। এ ঘটনায় অজ্ঞান হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ব্যাটিসটনকে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের এই ফাউল স্বত্বেও শুমাখারকে কোন শাস্তি দেননি রেফরি।
৫. থুথু ছিটানো
খেলার মধ্যে প্রতিপক্ষে খেলোয়াড়কে লক্ষ্য করে থুথু ছিটানোর নজির খুব কম রয়েছে ফুটবলে ইতিাহাসে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের ফ্রাংক রিজাকারড জার্মানির রুডি ভোলারের মুখে থুথু নিক্ষেপ করেন। অবশ্য রেফরি শাস্তি হিসেবে দুজনকেই লাল কার্ড দিয়েছিলেন।
৬. হ্যান্ড অব গড
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত দিয়ে গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা। ঘটনাটি ইংল্যান্ড গোল রক্ষক পিটার শিলটনের চোখে ধরা পড়লেও এড়িয়ে যায় রেফরিসহ অন্যান্যদের চোখ। ফলে ওই গোলে ভর করেই সেমিফাইনালে যায় আর্জেন্টিনা। বিতর্কিত ওই গোলটি পরবর্তীতে ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
৭. সুয়ারেজের হাত দিয়ে গোল আটকানো
২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় আফ্রিকার দেশ ঘানা ও উরুগুয়ে। অতিরিক্ত সময়ে যখন উরুগুয়ের গোল রক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে ঢুকে যাচ্ছিল তখনোই উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুই সুয়ারেজ হাত দিয়ে বল আটকান। এতে ঘানাকে পেনাল্টি আর সুয়ারেজকে লাল কার্ড দেখান রেফরি। তবে ঘানার আসামোয়াও গিয়ান পেনাল্টি মিস করায় টাই ব্রেকারে শেষ পর্যন্ত উরুগুয়ে জেতে ৪-২ এ।
৮. ব্যাটেল অব নুরেমবার্গ
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে তপ্ত ম্যাচ ছিল ২০০৬ বিশ্বকাপে পর্তুগাল বনাম নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচটি। নুরেমবার্গ অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে মোট ২০ বার কার্ড বের করতে হয়েছিল রেফরিকে। এর মধ্যে ১৬টি হলুদ এবং চারটি লাল কার্ড। উত্তেজনা আর শারীরিক কসরতে পরিপূর্ণ ম্যাচটি তাই পরিচিতি পেয়েছে ব্যাটেল অব নুরেমবার্গ নামে।
৯. কারাতে কিক
২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন-নেদারল্যান্ড। ওই ম্যাচই স্পেনের জাবি আলানসোর বুক বরাবর একটি শক্তিশালী লাথি মারেন নেদারল্যান্ডসের নিজের ডি জং। ধারাভাষ্যকারদের কল্যাণে যা পরবর্তীতে ‘কারাতে কিক’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে ওই কারাতে কিকের জন্য জংকে লাল কার্ডের বদলে হলুদ কার্ড দেখানোর ঘটনায় সমালোচিত হন ইংলিশ রেফরি হাওয়ার্ড ওয়েব।
১০. রিভালদোর অভিনয়
২০০২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালে বেশ তুর্কিদের বিপক্ষে বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখে পড়েছিল ব্রাজিল। তুরস্কের বিপক্ষে তুরস্কের ডিয়েন্ডারের পায়ে মাথায় লেগেছে এমন ভঙ্গিতে মাঠে শুয়ে পড়েন রিভালদো। এতে তুর্কি ডিফেন্ডার হাঁকান আনসালকে লাল কার্ড দেন রেফরি। পরে অবশ্য দেখা যায় রিভালদো আসলে ইনজুরির অভিনয় করেছিলেন। এ ঘটনায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডার।