দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ ইন্ডিয়ার রাজনীতিক ও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মুখে চুক্তি করার কথা বললেও তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিনিয়োগ বাড়িয়েই চলছে। তাদের সেই নীতির অংশ হিসেবেই সিকিম রাজ্যের নদীতে বাঁধ দিয়ে ‘তিস্তা তৃতীয় পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের’ বাস্তবায়নের মূল কাজ শেষ করেছে ইন্ডিয়া। এইটি ইন্ডিয়ার ইতিহাসে বিদেশী বিনিয়োগে নির্মিত সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই প্রকল্পে আগামী বছর থেকেই পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলো।
২০১৩ সাল থেকেই ‘তৃতীয় তিস্তা পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প’ আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা ছিল। নানান প্রাকৃতিক কারণে তা সম্ভব হয়নি। এই প্রকল্পটি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় বহন করেছে ইন্ডিয়া সরকার ও বিদেশী বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সংস্থা। মোট ব্যয়ের মধ্যে ৭০ হাজার কোটি রুপী ইন্ডিয়ার বিভিন্ন জাতীয় সংস্থা দিয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ১২ শত কোটি রুপী। এই অর্থ বিনিয়োগ করেছে মর্গ্যান স্ট্যানলি, এভারস্টোন ক্যাপিটাল, জেনারেল আটলান্টিক, গোল্ডম্যান স্যাকস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও নরওয়েস্ট ভেঞ্চার পাটনার্স। তৃতীয় তিস্তা পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প বিদেশী বিনিয়োগে নির্মিত ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প।
প্রকল্পের উৎপাদন চালু হওয়ার পর সিকিম কেবল বিদ্যুৎ খাতে সাবলম্বীই হবে না, বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক রাজ্যেও পরিণত হবে। উৎপাদিত বিদ্যুতের ১২-১৫ ভাগ সিকিমকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। বাকী ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ দিল্লী, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা ও রাজস্থানের মত রাজ্যগুলোতে রপ্তানী করা হবে। আর তিস্তা তৃতীয় বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হলে ইন্ডিয়ার সিকিম ও উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে। উল্লেখ্য, পিক আওয়ারে সিকিমের বিদ্যুতের চাহিদা মাত্র ১১৪ মেগাওয়াট। দুই বছর পরে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪৪ মেগাওয়াটে।
প্রকল্পের সিনিয়র কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ। তিস্তা উরজা লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে তৈরি প্রকল্পটিতে সিকিম সরকারের ২৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রকল্পটি খুব শীঘ্রই উৎপাদন শুরু করবে বলেই আশা করছে সিকিম ও ইন্ডিয়ার সরকার। প্রকল্পের কর্মকর্তাদের মতে, যাবতীয় কাজ শেষের দিকে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালেই পুরোদমে উৎপাদন শুরু করবে বলে মনে করছে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।
প্রকল্পটির ২৬ শতাংশ শেয়ার পেতে সিকিম সরকার প্রকল্পটিতে এরইমধ্যে ৫৩০ কোটি রুপী ব্যয় করেছে। প্রকল্পটিতে আরো ২০০ কোটি রুপী ব্যয় করবে সিকিম সরকার। আর বাকী অর্থ ব্যয় করা হবে ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমান ও অন্যান্য নিরাপত্তাজনিত কাজে।
প্রকল্পটিতে ইন্ডিয়ার রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন ৩০০ কোটি রুপী বিনিয়োগ করেছে। পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে প্রকল্পের বাকী কাজ শেষ করতে বোর্ডটি আরো ১ হাজার কোটি রুপী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন ২৪০ কোটি রুপী প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করেছে।
এছাড়া ইন্ডিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রীড কর্পোরেশন প্রকল্পটির মোট শেয়ারের ২৬ শতাংশ পেয়েছে। সংস্থাটি তিস্তা উরজা লিমিটেডের জন্য ৪০০ কেবি বিদ্যুতের তারের লাইন নির্মাণ করেছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পাওয়ার ফিন্যান্স কর্পোরেশন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সিকিম সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে ৫৩০ কোটি রুপী বিনিয়োগ করেছে।
বর্তমান তিস্তা নদীর অবস্থার বাস্তবতায় ভারত চাইলেও আর বাংলাদেশের প্রাপ্য এবং চাহিদা মোতাবেক পানি সরবরাহ করতে পারবে না বলে বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞগন মত প্রকাশ করেছেন।অথচ বাংলাদেশ অধীর আগ্রহে এবং সরল মনে বছরের পর বছর ধরে তিস্তাচুক্তির আশা বসে রয়েছে।