দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ বাংলাদেশ সংলগ্ন ইন্ডিয়ার সীমান্ত এলাকায় কৌশলগত কারণে সে দেশের সাবেক সামরিক ও আধা-সামরিক কর্মকর্তাদের বসতি স্থাপনকে উৎসাহিত করছে ভারত। সম্প্রতি ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ সাবেক সামরিক ও আধা-সামরিক কর্মকর্তাদের বসতি স্থাপনকে আরও বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিয়েছেন ইন্ডিয়ার বিএসএফের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক পিকে মিশ্রা।
‘বাংলাদেশী মাইগ্রেন্টস: এ থ্রেট টু ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক গবেষণায় পিকে মিশ্রা উল্লেখ করেন, এই সব সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা সীমান্ত এলাকার শেষ ইঞ্চি জমিও নিজেদের দখল ও চাষাবাদ করার কাজে নিয়োজিত। এর বাইরে তারা সীমান্ত রক্ষায় আগ্রাসী আচরণ করে বলেও বইটিতে দাবি করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ায় বাস করা ‘অবৈধ বাংলাদেশীদের’ বিষয়টি রাজনীতিকভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব নয় বলেও ‘বাংলাদেশী মাইগ্রেন্টস: এ থ্রেট টু ইন্ডিয়া’ নামের বইটিতে উল্লেখ করা হয়। আবার অবৈধ বাংলাদেশী সমস্যা সমাধান করতে না পারলে ইন্ডিয়ার আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ, বসনিয়া ও কাশ্মীরের ভাগ্য বরণ করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। ফলে সমস্যা সমাধানে ‘অবৈধ বাংলাদেশীদের’ ইন্ডিয়ায় প্রবেশে বাধা দেওয়া ও ইন্ডিয়ার সীমান্তের নিরাপত্তা বিধান করতে সীমান্ত এলাকায় সাবেক সামরিক কর্তাদের নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তারা ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা বিধান ও অবৈধ অভিবাসন রোধে ইন্ডিয়ার কান ও চোখ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন পিকে মিশ্রা।
দীর্ঘদিন ধরে অবসর জীবন কাটান মিশ্রা মনে করেন, ইন্ডিয়ার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পিছনে রয়েছে আইএসআই। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কিছু মানুষ এই দাঙ্গা সৃষ্টি করছে। দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন মিশ্রা। আর সেটি করতে না পারলে ইন্ডিয়ার সীমান্তবর্তী রাজ্য আসামকে বসনিয়া অথবা কাশ্মীরের পরিণতি বরণ করতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
মিশ্রার মতে, যে সব সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নাই, তার আশেপাশের গ্রামগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশের অপরাধ জগতের মানুষরা। কাঁটাতারের পাশে ইন্ডিয়ার গ্রামগুলোতে সব অবৈধ বাংলাদেশীদের বসবাস। সীমান্ত এলাকায় অবস্থানের পরে ইন্ডিয়ার অন্যান্য এলাকাতেও তারা ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা ও সংস্কৃতি একই হওয়ায় আসাম সীমান্তে বাস করা ‘অবৈধ বাংলাদেশীদের’ সনাক্ত করা কঠিন বলে জানান তিনি। আর আগে থেকেই অবৈধভাবে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের সহায়তায় ইন্ডিয়ার পরিচয়পত্রও পাওয়া এদের জন্য সহজ হয়। আর এই সব অবৈধ মানুষরাই বাংলাদেশের সাথে অবৈধ চোরাচালান করে থাকে বলে দাবি মিশ্রার।
আসামের বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় সহজেই বাংলাদেশীরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইন্ডিয়ায় যেতে পারে। আর এই কাজে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও বিজিবি সহযোগিতা করে বলেও অভিযোগ দেশটির। ইন্ডিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশ করা বাংলাদেশীদের রাতের আঁধারে জোর করে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক এই বিএসএফ পরিচালক। আর রাজনৈতিকভাবে অবৈধ অধিবাসী সমস্যার কোন সমাধান হবে না বলে মনে করেন মিশ্রা।
অবশ্য, বাংলাদেশীদের ইন্ডিয়ায় প্রবেশ ও স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ার রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব ও সরকারী কর্মকর্তারাও জড়িত বলে তার গবেষণামূলক বইটিতে দাবি করা হয়।