পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে বরাবরের মতো এবারো শুরু হয়েছে ইফতার রাজনীতি। বিএনপি জোটের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিও ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে ইফতার রাজনীতিতে। তাই বিগত সময়ের চেয়ে এবার বেশি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে বিরোধী জোটের শরিক দলগুলো। সেই ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে নেই রাজনীতিতে ‘নিষ্ক্রিয়’ জামায়াতে ইসলামীও।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে লক্ষাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে জামায়াত। রাজনৈতিক, কূটনীতিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিদের কাছে টানতে ইফতার মাহফিলের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। জামায়াতের ‘ইসলামী আন্দোলনে’ সরকার জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলা দিয়ে বাধাগ্রস্ত করছে তা জানানোই এসব মাহফিলের মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে মামলা-হামলা, গ্রেপ্তারের কারণে সারাদেশে এখনো ঘরছাড়া জামায়াত নেতাকর্মীদের অনেকে। তাই বিগত সময়ে সরকার পতনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের হুমকি দিলেও মাঠে দেখা যায়নি তাদের। গ্রেপ্তার এড়াতে কোনো রকম ফটোসেশন সেরেই ঘোষিত আন্দোলনকে ‘সফল’ করেছে তারা। আর এ কারণে দলের কর্মীদের মধ্যে রয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ।
তবে সামনের আন্দোলনে শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে বর্তমানে দল গোছাতে ব্যস্ত দলটি। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে রোজার মাসকেই বেছে নেয়া হয়েছে। আয়োজন করা হচ্ছে ইফতার মাহফিল। এ সুযোগে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায়েরও চেষ্টা করবে দলটি।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে ইফতার মাহফিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর রাজধানীতে প্রতিটি থানা এবং ওয়ার্ডে অন্তত সাত হাজার ইফতার মাহফিল আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যেখানে অতিথি হিসেবে থাকবেন স্থানীয় বিশেষ ব্যক্তিরা।
এদিকে বুধবার কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জামায়াত। এতে সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর, নরওয়ে, ফিলিস্তিন, গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, ওমান, লিবিয়া, রাশিয়া, ভারত, জাপান, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক অংশ নেন। সেখানে দলের শীর্ষনেতাদের ‘অবৈধভাবে’ সরকার আটকে রেখেছে বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। জামায়াত নেতারা নোংরা রাজনীতির শিকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কূটনীতিকদের কাছে তাদের অভিযোগও জানান।
ইফতার মাহফিলের আয়োজন প্রসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রতিবারের মতোই এবারো ইফতার মাহফিলের আয়োজন হচ্ছে। তবে ইফতার মাহফিল নিয়ে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে ছাড়াও প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিট নিজ নিজ উদ্যোগে ইফতার মাহফিল করছে।’
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় জামায়াতের কেন্দ্রের উদ্যোগে আর দু’টি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ে আগামী ৯ জুলাই ইফতারের আয়োজন করা হবে। ঢাকা মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে ১০ রোজার মধ্যেই।
সরকার জুলুম-নির্যাতন করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জামায়াতকে ভয় দেখিয়ে ‘ইসলামী আন্দোলন’ থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘সরকার গণমানুষের প্রাণের সংগঠন জামায়াতকে ভয় দেখিয়ে কোনোভাবেই ধ্বংস করতে পারবে না। অতীতে যারাই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত। দমন-পীড়ন চালিয়ে ও ষড়যন্ত্র করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।’