DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বিশ্ব অর্থনীতির নয়া মোড়: সুযোগের সদব্যবহারে নয়াকৌশল চাই বাংলাদেশের

index3 ক্যাপ্টেন(অবঃ) মারুফ রাজুঃ ২০০৯   সালের পর থেকে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুপার পাওয়ার হিসেবে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র।দেশটিতে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ তৈরী হয়েছে প্রচুর কর্মসংস্থান।

ফলস্বরূপ, আমদানি বাণিজ্যসহ দেশটিতে অভিবাসীদের সংখ্যাও বেড়েছে। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতিও ইতিবাচক পথেই বদলাতে শুরু করেছে অনেক আগেই এবং তা স্থায়ী রূপও পেতে শুরু করেছে। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির সুবিধা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ। ফলে, পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতির সুবিধা বঞ্চিত হতে পারে দেশের অর্থনীতি। এর পাশাপাশি, তুলনামূলকভাবে বেশি উপযোগী কূটনীতিক তৎপরতার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দিতে পারে প্রতিযোগী রাষ্ট্রগুলো।

২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের হিসাব মতে, কেবল জুন মাসেই ২৮৮,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির এই প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদদেরও বিস্মিত করেছে। কেবল অকৃষিখাতেই যুক্তরাষ্ট্রে গত এক বছর ধরে প্রতিমাসে ১৯৭,০০০টি করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

কেবল কর্মসংস্থান সৃষ্টিই নয়, দেশটির ধনীদের পরিমাণ ও তাদের কার্যক্রমেও ঘটেছে বড় ধরণের পরিবর্তন। সম্প্রতি প্রকাশিত রয়েল ব্যাংক অব কানাডার হিসাব মতে, সারাবিশ্বে এক কোটি ত্রিশ লাখেরও বেশি কোটিপতি আছেন। আর তাদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোটিপতি বসবাস করেন উত্তর আমেরিকা আর কানাডায়।

তবে চীন ও জাপানের মতো দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি কোটিপতি তৈরী করছে। রয়েল ব্যাংক অব কানাডার গবেষণা অনুসারে,বৈশ্বিক কোটিপতিদের সম্পদ বৃদ্ধির এই প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। ২০১৬ সালে গিয়ে তা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ওই সময় তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। সম্পদ বৃদ্ধির এই হার ২০১৩ সালের তুলনায় ২২ ভাগ বেশি হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনীতির ঘুরে দাড়ানর প্রবণতার ছাপ ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করেছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যেও। ধীর গতিতে হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা তাদের ব্যয়ের পরিমাণ বাড়াচ্ছেন। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যও চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।

এছাড়া, পরিবর্তন আসছে দেশটির অভিবাসনের চিত্রে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে শুরু করছে। এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারও অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে প্রবেশে বাধা দিতে অনীহা দেখাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অবৈধ অভিবাসী অনুপ্রবেশ ঠেকানতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনীহা ভবিষ্যৎয়ে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের দিকে ঈঙ্গিত করছে। দেশটির অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির কারণেই অবৈধ অভিবাসী অনুপ্রবেশ নিয়ে মাথা ব্যথা নাই যুক্তরাষ্ট্রের।

এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের সুফল নিতে প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক দ্বন্দ্বের কোন সমাধান হয়নি এখনও। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানীর সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বাজার দখলে নিয়ে নিচ্ছে ইন্ডিয়ার মতো দেশগুলো। রানা প্লাজা ধ্বসের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোটামুক্ত বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানী বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে ইন্ডিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের পণ্য রপ্তানী বাড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, নতুন বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের কূটনীতিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!