বিশ্বসেরা সাবেক অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দেশের হয়ে আগামী ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সঙ্গে আগামী দেড় বছর বিদেশি কোনো টুর্নামেন্টেও অংশ নিতে পারবেন না তিনি।
সোমবার বিসিবির জরুরি বোর্ড সভা শেষে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাকিবের বিরুদ্ধে এ শাস্তি ঘোষণা করেন।
সাকিবের শাস্তি ঘোষণা করার আগে সাকিবের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন বিসিবি সভাপতি। এমনকি দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য সাকিকবেই দায়ী করেছেন তিনি। পাপনের সেই কথাগুলো দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘সাকিবের আচরণগত সমস্যা মারাত্মক। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তার মতো কেউ এমন কখনো দেখায়নি। তার আচারণগত সমস্যা যদি তার মধ্যে থাকতো তাহলে কথা ছিল না। অথবা একজন দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত তাও কথা ছিল না। তার সমস্যা নিয়ে এ কদিনে খেলোয়াড়, কোচ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। বোর্ডের বিভিন্ন পরিচালক ছাড়াও অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে। সবাই তার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।’
সাকিবের বিরুদ্ধে টিম ম্যানেজারের প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দল ধারাবাহিকভাবেই বাজে পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে। দলের ভেতর কোনো টিমওয়ার্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। টিম ম্যানেজারের প্রতিবেদনে এসেছে দলের ব্যর্থতার মূলে দলীয় ঐক্য না থাকা। তবে এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে চাই না। সাকিবের একটি-দুইটি ঘটনা নয়। তার নানামুখি সমস্যা আছে। যা দলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। যে কারণে আজ আমাদের এ কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’
সাকিবের আচরণগত সমস্যা নিয়ে বাকি খেলোয়াড়দের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন পাপন। তিনি বলেন, ‘এটা শঙ্কার বিষয়, দলের অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যেও এটি ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক খেলোয়াড়ই ওর মতো আচরণ শুরু করেছে। যা দলের ওপর সর্বনাশ ডেকে আনছে।’
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সাকিব এমন আচরণ করছে বলে মনে করেন পাপন। সাকিবকে নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘তার অপরাধের কারণে অবশ্যই এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ। সে এই আচরণ বহুদিন ধরেই করছে। বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে চলতে অনেক বড় হয়ে গেছে। দেশের খেলোয়াড় বলেই আমরা সেগুলো এড়িয়ে গেছি। তাই বোর্ড মনে করছে, এভাবে তাকে ছাড় দিলে ভবিষ্যতে সে কাউকে আর মানুষ মনে করবে না। যা ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।’
আবার সাকিবের প্রশংসা করতেও ভুলেননি বোর্ড সভাপতি পাপন। তিনি বলেন, ‘সাকিব আমাদের দেশের সম্পদ। বিশ্বের অনেকেই বাংলাদেশকে চেনে কেবল তার জন্যই। তাই তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। সব কথা আপনাদের বলতে চাই না। আপনারা জানেন ভারত সিরিজে সাকিবের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করা নিয়ে একটা ঘটনা ঘটেছিল। সে ওই ছেলেকে মারধর করেছে। অথচ শুনানিতে বলেছে তাকে মারেনি। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ড্রেসিংরুম ছেড়ে বাইরে গেলে কেনো? তখন সে বলেছে, আমি নিয়ম জানতাম না।’
সাকিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পাপন বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট সাকিবের জন্য। সাকিব আমাদের ও দেশের ষোল কোটি মানুষের। তাই দেশের কথা ও ক্রিকেটের কথা চিন্তা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যা আমাদের জন্য দুঃখজনক, কষ্টকর ও বড় কঠিন সিদ্ধান্ত। কী করবো, সব কিছুরই একটা সীমা আছে। আমরা বাধ্য হয়েছি এ শাস্তির সিদ্ধান্ত নিতে। ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি হলে আজীবন নিষিদ্ধ হতে হবে। শৃঙ্খলার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। শুধু সাকিব নয়। এটা দলের সকল খেলোয়াড়ের জন্য সতর্কবার্তা।’
এরপর বিসিবি সভাপতি ঘোষণা করেন, ‘আগামী ছয় মাস জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে সাকিব নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের বাইরে যে কোনো ধরনের ক্রিকেট খেলার জন্য সে অনুমতি পাবে না।’