রাজধানীর ফার্মগেটের ক্যাপিটাল সুপার মার্কেটের মালিক খোকন নন্দী ওরফে রাজীব চৌধুরী (৭২) গত ২৬ জুন রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারা যান। হাসপাতালে হিন্দু ও মুসলমান ২ নারী তার স্ত্রী দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তার লাশ চান। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানা পুলিশের শরণাপন্ন হলে তা আদালতে গড়ায়। বর্তমানে লাশ রাখা হয়েছে বারডেমের হিমঘরে।
মীরা নন্দী নামে প্রথম জনের দাবি খোকন নন্দীর সঙ্গে তার ৫২ বছরের সংসার। তার দাবি— তার স্বামীর পুরো নাম রণজিত্ নন্দী ওরফে খোকন নন্দী। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা একসঙ্গে মোহাম্মদপুরের ১৫ নম্বর রায়েরবাজার এলাকায় বসবাস করতেন। গত ১৫ জুন অসুস্থ হলে তিনি তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাই হিন্দুমতেই তাকে সমাহিত করা হবে।
অপরজন ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা হাবিবা আক্তার খানম বাবলি। তার দাবি— ৩০ বছর আগে খোকন নন্দী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে রাজীব চৌধুরী নাম নিয়ে তাকে বিয়ে করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের যাবতীয় নিয়ম-কানুন পালন করে গেছেন। ‘১৯৮৪ সালের ১৫ জুলাই বিয়ে করেন। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা ১৮ বছর রাজধানীর ৩৩১, উত্তর শাহজাহানপুরের বাসায় কাটিয়েছেন।’ তাই একজন মুসলিম হিসেবেই তার লাশ দাফন হবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট নুরু মিয়ার আদালতে উভয়ের দাবির বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারক আদেশে বলেছেন, কারো অধিকার নির্ণয়ের ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নেই। এটি করতে পারবে দেওয়ানী আদালত। তাই আপনারা দেওয়ানী আদালতের দারস্থ হন।
আদালতের উক্ত আদেশের পর উভয়ে দেওয়ানী আদালতের আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। আদালতে মীরা নন্দীর পক্ষে অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল ও হাবিবা আক্তার খানম বাবলির পক্ষে অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী মামলা পরিচালনা করেন।
এদিকে সূত্র জানিয়েছে, ফার্মগেটের ক্যাপিটাল সুপার মার্কেটের মালিক খোকন নন্দী’ বা ‘রাজীব চৌধুরী (৭২)। শত কোটি টাকার মালিক।
উল্লেখ্য, খিলগাঁও আইডিয়াল সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ চন্দন কুমার চক্রবর্তী ওরফে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি ২০০৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তার লাশও মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের দুই নারী স্ত্রী দাবি করে পাওয়ার জন্য আদালতের দারস্থ হলে তিনি সর্বশেষ কোন ধর্মের মতাবলম্বী ছিলেন তা শনাক্ত করতে না পারায় লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গবেষণায় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। প্রায় ৩ বছর আইনি লড়াইয়ের পর ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর ওই আদেশ দিয়েছিল আদালত। এখন খোকন নন্দী ওরফে রাজীব চৌধুরীর লাশের কী হয় তা-ই দেখার বিষয়।