চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে শিক্ষার্থীদের রোজা না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অধ্যাপকদের সঙ্গে খেতে বাধ্য করা হচ্ছে ওই প্রদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এর আগে রমজান মাসের শুরুতেই চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশটিতে রোজা রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল চীনা সরকার।
জিনজিয়াং প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বেশ কয়েক জন মুসলিম শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে গোপনেও রোজা না থাকতে পারেন সেজন্য তাদেরকে জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে। আর যারা খেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে তাদের জন্য শাস্তির ভয় থেকে যাচ্ছে। অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ যদি আপনি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালিয়ে যেতে চান তাহলে আপনার জন্য রোজা না রাখাই ভালো’। তবে এসব শিক্ষার্থীদের কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। কারণ স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার ভয় সবার মধ্যেই কাজ করছে।
চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় ওই প্রদেশটিতে ওই প্রদেশটিতে সংখ্যালঘু উইঘুর সম্প্রদায়ের বসবাস যাদের মধ্যে অধিকাংশই আবার মুসলিম। সম্প্রতি দেশটিতে বেশ কিছু হামলার জন্য বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে উইঘুর মুসলিমদের দায়ী করে। গত বৃহস্পতিবার জিনজিয়াংয়ের একটি আদালত ৩২ জনকে সহিংসতার ভিডিও আপলোড ও ডাউনলোডের অভিযোগে কারাদণ্ড দেয়। কিছু দিন বেশ কিছু উইঘুর মুসলিমকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। এদের সবার বিরুদ্ধেই সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে অনেক উইঘুর মুসলিম দাবি করেন, উইঘুরদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার ওপর সরকারের আঘাত হানার কারণেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। ওই অঞ্চলের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই রোযা রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানও আলাদা করে রোযার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একটি হাসপাতালের কর্মীদের রোজা না রাখার ব্যাপারে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সরকারি গণমাধ্যম থেকে রোযা রাখার ক্ষতিকর দিকগুলোও মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। তবে এত কিছুর পরেও কাশগড় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই রোযা রাখার ব্যাপারে অটল। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে খাওয়ার আহ্বানেও তারা সাড়া দিচ্ছেন না। ইতোমধ্যে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানান, এভাবে রোযা রাখার ফলে ওইসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সমস্যায় পড়তে পারে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় তাদেরকে ডিগ্রি নাও দিতে পারে। অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অধিকাংশই রোযা রাখতে ইচ্ছুক তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না।’