DMCA.com Protection Status
title="৭

বঙ্গবন্ধু কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে দীর্ঘসূত্রতায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ

1405248649বঙ্গবন্ধু কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই কাজটায় ‘ডিলে’ হয়েছে। যথেষ্ট ‘লেট’ হয়েছে। এটা দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। আগেই এ কাজটা করে ফেলা উচিত ছিল।

বিগত বিএনপির সরকারের কারণেই সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার আরো আগে প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং তাদের পদক্ষেপ না নেয়ায় আমরা পিছিয়ে গেছি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 



প্রধানমন্ত্রী রবিবার সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, সব ঠিক থাকলে ২০১৭ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে।



নির্দিষ্ট সময়ে এটি উেক্ষপণের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইসব কাজ একটু সাহস নিয়ে করা উচিত ছিল। এটা আপনাদের পুশ করতে হবে। এ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করবেন। মনে রাখবেন সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। যার মধ্যে ছয় মাস চলে গেছে, সাত মাস চলছে। আর বাকি আছে চার বছর পাঁচ মাস। এ সময়ের মধ্যে আমাদের সব কাজ শেষ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। ’৭৫ সালে তাকে হত্যার পর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যে আদর্শ এবং লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে তা বাস্তবায়নই সবার দায়িত্ব। সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার এসেছি বলেই কাজের ধারাবাহিকতা রাখতে পেরেছি। আমরা আশাবাদী বাকি কর্মসূচিও আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।



বিগত বিএনপির সরকারের কারণেই সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার আরো আগে প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত অনেক কাজ এগিয়ে রেখে যাই। আমাদের আশা ছিল পরবর্তী মেয়াদে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা কাজ এগিয়ে নেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, তারা (বিএনপি) কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা (বিএনপি) সময়মতো পদক্ষেপ নিলে মহীসোপানে যে নির্দিষ্ট জায়গা, আমাদের অধিকার- সেটা সুনির্দিষ্ট হয়ে যেত এ রায়ের সঙ্গে সঙ্গে। প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। সে সময়ে তারা (বিগত বিএনপি সরকার) সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি বলে আমরা পিছিয়ে গেছি। আসলে তাদের এ নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনাই ছিল না। তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মামলা করে সমুদ্রসীমা বিজয় সহজ কাজ ছিল না। ভারত এবং মায়ানমার বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী দেশ। বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক বজায় রেখে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিজয়ী হওয়া সহজ ছিল না। 



প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রে অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করে যান। সে সময় জাতিসংঘও এই আইন করেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার দূরদর্শিতার কারণেই মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলায় আমরা বিজয়ী হয়েছি। ১৯৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, ২১ বছর তারা ক্ষমতায় ছিল, দুই দুইটা মিলিটারি ডিকটেটর ক্ষমতায় ছিল- তারা কেউ কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। একুশ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল সমুদ্রসীমা নিয়ে তারা কেন উদ্যোগ নেয়নি। আসলে দেশের ভালো এবং ভবিষ্যত নিয়ে তাদের কোন চিন্তা ভাবনাই ছিল না। শুধু ক্ষমতা দখল এবং ভোগ এটাই ছিল তাদের প্রধান কাজ।



তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার মহাখালী, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বরিশালে আইসিটি ভিলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি আইটি ভিলেজ বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আগে গ্রামের মানুষ ভাত-কাপড় চাইতো। সত্যি কথা বলতে কি এখন তারা চায় বিদ্যুত্। তারা বলে আমাদের বিদ্যুত্ দেন। ইন্টারনেটের গতি কম কেন এ প্রশ্নেরও জবাব দিতে হয়। মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষ আর্থিকভাবে সফলতার মুখ দেখছে। মানুষের সঞ্চয় বাড়ছে। এখন আর সুদের জন্য ঘরের চাল টেনে নিচ্ছে না কেউ।



তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বলেন, শুধু ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকেই প্রতি মাসে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সেবা পাচ্ছেন। সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রপ্তানি করে বাংলাদেশ এখন বছরে ১২৫ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। তিনি বলেন, বিএনপি আন্দেলনের নামে মানুষ হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছিল। তারপরেও বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকারেই পেরেছে ৯৬ ভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে আর কেউ তা পারেনি। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে প্রযুক্তিভিত্তিক ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে হাত দেই। সেসময় আমাদের পরিকল্পনাকে অনেকে অবাস্তব হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু ৫ বছর পর ডিজিটাল বাংলাদেশ আর অবাস্তব কিছু নয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণও এর সুফল ভোগ করছেন।



প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশব্যাপী ২০ হাজার ৪০৩ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে। মোবাইল কোম্পানিসমূহের প্রায় ৪৫ হাজার বিটিএস রয়েছে। দেশে বর্তমানে ৭ হাজার তথ্যসেবা কেন্দ্র এবং ১০৪টি রেডিও ও টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র রয়েছে। বিটিআরসি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৮৮১টি লাইসেন্স প্রদান করেছে। আমাদের সরকার ৫টি মোবাইল কোম্পানিকে বহু কাঙ্ক্ষিত থ্রিজি লাইসেন্স প্রদান করেছে। থ্রিজি’র কাজ সমাপ্তির পর অচিরেই ৪জি’র কার্যক্রম শুরু হবে।



আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুততর করার জন্য বিদ্যমান সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে আরও একটি ক্যাবল সংযুক্ত করার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় এর ল্যান্ডিং স্টেশনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এর ফলে ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পাবে। সরকার দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন করতে যাচ্ছে। তথ্য লুকানো যাবে না এবং সব তথ্য বাইরে চলে যাবে এই অজুহাতে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার বিনা খরচে সাবমেরিন কেবল নেয়নি। পরবর্তীকালে আমাদের টাকা দিয়ে সেটা নিতে হয়েছে। সে সময় সাবমেরিন ক্যাবল নিলে আমরা অনেক আগেই দ্বিতীয় ক্যাবল স্থাপন করতে পারতাম।



প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। দেশে স্মার্ট ফোন তৈরিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমপ্রতি ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। এই নামটি আমিই দিয়েছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইটি শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য ৩ হাজার ৫১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ভারত সরকারের সহায়তায় প্রতিটি জেলায় একটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৬৪টি ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য বিদ্যুিবহীন ১ হাজার ১৩ টি ইউনিয়নে সৌর বিদ্যুত্ এবং ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপনসহ উপজেলা পর্যায়ে ১৪৭টি কমিউনিটি ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।



অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলি যোগাযোগ সচিব আবু বকর সিদ্দিক, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!