DMCA.com Protection Status
title="৭

সমুদ্র সীমার রায়ে মোট মজুদের দ্বিগুণ গ্যাস হারাল বাংলাদেশঃএই বিপুল লোকসানের দায় কার?

index12 (1)দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ  বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ তালপট্টি হারানোর ফলে পুরো বাংলাদেশের মোট মজুদ গ্যাসের দিগুণ সম্পদ হারিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের পাওয়া ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যেই পড়েছে দক্ষিণ তালপট্টি, যেখানে মজুদ রয়েছে ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুসারে, পুরো বাংলাদেশে ব্যবহারযোগ্য গ্যাসের মজুদ হবে ৫০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এই বিবেচনায়, বিপুল পরিমাণ সম্পদ হারাল বাংলাদেশ। তা বাংলাদেশের ব্যবহারযোগ্য মোট মজুদের কমপক্ষে দ্বিগুণ।

বাংলাদেশের বর্তমান গ্যাস মজুদ আগামী ৪৫ বছর পরই ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্র সীমার রায়ে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ এলাকাটি না হারালে কমপক্ষে আগামী একশত বছরের জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারত বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলায় মোট ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমার মধ্যে রায়ে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার অধিকার। বাকী ৬ হাজার ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ভারতকে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ।

সমুদ্রসীমার রায়ে বাংলাদেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও সমালোচনা করেন দেশের বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ। সমালোচনার প্রতি উত্তরে ক্ষমতাসীন দল বলার চেষ্টা করছে, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ায় ভারতের কাছে হারান ৬ হাজার ১৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার কথা বলে সরকারের সমালোচনার কিছু নাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ওই এলাকায় পুরো বাংলাদেশে মজুদ থাকা মোট গ্যাসের দিগুণ খনিজ সম্পদ ছিল। সমুদ্র সীমার রায়ে এই সম্পদ ভারতের অধিকারে চলে গেল।

ভারতীয় অনলাইন পত্রিকা ফার্স্ট পোস্ট ডটকমের একটি বিশ্লেষণে পত্রিকাটির পরামর্শক এডিটর ও বিশ্লেষক রাজিব শর্মা বলেন, রায়ে দীর্ঘ দিনের একটি ইস্যুতে ভারতের পক্ষে একটি সমাধান করা সম্ভব হলো। রায়ের ফলে নিউ মুর আইল্যান্ডে (দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ) ভারতের স্বত্ত্বাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক আদালত। এই রায়ের ফলে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীতে ভারতে প্রবেশাধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে। হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনা ও মুখের জায়গাটি ভারতের কাছে বিভিন্ন কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নদীর বির্তকিত অংশে যদি ভারতের দাবি নিশ্চিত করা হয় তবে আগামী দশকগুলোতে ভারত অনেক লাভবান হবে। 

এর আগে ২০০৬ সালে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় দক্ষিণ মুখের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে ভারত সরকার জানতে পারে যে, এই অঞ্চলে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে, যেটি অন্ধ্র প্রদেশের কৃষ্ণা-গোদাবারি মোহনায় মজুদ সম্পদের চেয়েও দ্বিগুণ।

‘ভারত-বাংলাদেশের ৪০ বছরের বিতর্কিত সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত ইউএন ট্রাইব্যুনালের রায়’ শিরোনামে একটি প্রচারিত অনুষ্ঠানে এনডিটিভি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালত যে রায় দিয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল রায়। রায়ে ভারত পরাজিত হয়নি। বরং নিউ মুর আইল্যান্ড ও হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর ভিতর ভারতের প্রবেশাধিকার আরও বাড়বে। অনুষ্ঠানে তুলে ধরা গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউমুর আইল্যান্ড প্রাকৃতিক তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল এক সম্ভার, যার কারণে এই দ্বীপের মালিকানা নিয়ে প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

১৯৭০ সালে সমুদ্র তীরে সাইক্লোন ঝড়ে জেগে ওঠা নিউমুর আইল্যান্ড যেটি বাংলাদেশে দক্ষিণ তালপট্টি নামে পরিচিত সেটির মালিকানা উভয় দেশ দাবি করে আসছিল। এনডিটিভির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কৌশলগত দিক বিচার করেই এবং ভারতের দাবির ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই অঞ্চলের মালিকানা ভারতকে দেওয়া হয়েছে। রায়ের পর ভারত এখন সময় সুযোগমত দ্বীপের প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উত্তোলন করতে পারবে।

এ ছাড়া রায়ে ভারতের দ্বিতীয় সাফল্য হল যেহেতু বাংলাদেশ প্রায় বিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিকার পেয়েছে তাই ভারত সরকার অনেকটাই খুশি হয়েছে। কারণ এতে করে দীর্ঘ দিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে এবং সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি রায়ের ফলে উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার ও শক্তিশালী হয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!